রঙের ছড়াছড়ি, আলোর মিছিল, অর্থ বাতাসে ভাসে। আর রান বন্যা তো নিত্যদিনের গল্প। ঠিক এমন সব বিশেষণেই বেঁধে ফেলা যায় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে (আইপিএল)। বিশ্বের বুকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা সবচেয়ে সফল ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএল। এরপর বহু ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট এসেছে। তবে আইপিএলের জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি কখনো।
এর পেছনের কারণ ব্যাটারদের মারকাটারি ব্যাটিং। এই আইপিএলের সুবাদে ভারত পেয়েছে বহু সংখ্যক মারকুটে ব্যাটার। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট ছাড়াও অন্য বাকি ফরম্যাটেও এই সব ব্যাটারদের মেজাজ যেন কখনোই বদলায় না। তবে এই আইপিএল আসার বহু আগেই ভারতের বিভিন্ন খেলোয়াড়রা ওয়ানডেতে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়ে ফেলেছিল।
চিন্তার বিষয় সে রেকর্ড এখন অবধি ভাঙতে পারেনি ভারতের নতুন দিনের কাণ্ডারিরা। তবে তাঁরা না পারলেও ভারতের হয়ে খেলা সে সব অবিস্মরণীয় দ্রুততম পঞ্চাশ রানের ইনিংসগুলো নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।
- অজিত আগারকার (২০০০)
মূলত একজন বোলার হিসেবেই বিবেচিত হতেন অজিত আগারকার। তাঁর কাজটাও তাই থাকতো। বল দিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের কুপকাত করা। তবে একদিন হঠাৎ করেই তিনি রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন ব্যাট হাতে। রাজকোটে জিম্বাবুয়ের সাথে হওয়া পঞ্চম ওয়ানডে ম্যাচে তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের এক অনন্য রেকর্ড গড়ে ফেলেন। পুরো সিরিজেই আধিপত্য বিস্তার করছিল ভারত।
শেষ ম্যাচটায় ভারত প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাটারদের দৃঢ়তায় বড় সংগ্রহের দিকেই এগোতে থাকে ভারত। শেষের দিকে নেমে ২১ বলে অর্ধশতক করে দলীয় সংগ্রহটা তিনশ রানের গণ্ডি পার করান অজিত। জিম্বাবুয়ে বোলারদের উপর নিজের যত ক্ষোভ যেন ঝেড়ে ফেলেন অজিত। তাঁর তেমন বিধ্বংসী ইনিংসের বদৌলতে জিম্বাবুয়েকে ৩০২ রানের টার্গেট দেয় ভারত। ম্যাচটা অনায়াসে জিতে নেয় ভারত।
- কপিল দেব (১৯৮৩)
১৯৮৩ বিশ্বকাপে যখন দলের ব্যাটিং অর্ডার তাসের ঘর, তখন জ্বলে উঠেছিল অধিনায়ক কপিল দেবের ব্যাট। তিনি যেন সকল মুশকিলের সমাধান হয়েই সর্বদা হাজির হতেন দৃশ্যপটে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকা সে ইনিংসটা তাঁর জীবনে অনন্য। তবে বিশ্বকাপের আগেই তিনি গড়েছিলেন রেকর্ড। একটা লম্বা সময় ধরে ভারতের হয়ে দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ডটা নিজের দখলে নিয়েছিলেন কপিল দেব।
সে সময়ের দুর্ধর্ষ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক সিরিজে তিনি মাত্র ২২ বলে ছুঁয়ে দেখেছিলেন অর্ধশতকের মাইলফলক। প্রথমে ব্যাট করা ভারত কপিলের ৩৮ বলে ৭২ রানের দুরন্ত এক ইনিংসের সুবাদে ২৮৩ রানের টার্গেট দেয়। তবে কপিলের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর বোলিংয়েও সমান অবদান রাখার সুবাদে, ম্যাচটি জিতে নিয়েছিল ভারত।
- বীরেন্দ্র শেবাগ (২০০১)
ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনেই যে কেবল হওয়া যায় কিংবদন্তি এমন কোন বাঁধা ধরা নিয়মের অস্তিত্ব নেই। সেটাই যেন প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন বীরেন্দ্র শেবাগ। তাঁর পা জোড়া নাকি চলত না ঠিকঠাক। তবুও কখনোই রান নিতে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি। প্রতিপক্ষ বোলারদের চোখে চোখ রেখেই ব্যাট চালিয়ে গেছেন নিজের আপন গতিতে। এমনই একটা ম্যাচ তিনি খেলেছিলেন কেনিয়ার বিপক্ষে।
সৌরভ গাঙ্গলী ও শচীন টেন্ডুলকারের ২৫০ এর বেশি রানের জুটির পর তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ব্যাট করতে নেমেই আগুন ঝরা ব্যাটিং করেন শেবাগ। মাত্র ২২ বলে তিনি তুলে নেন অর্ধশতক। দ্রুততম তালিকায় তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে নিজের নামটি লিখিয়ে ফেলেন শেবাগ। এরপর অবশ্য জয় পেতে ভারতের বিন্দুমাত্র ঝক্কি পোহাতে হয়নি।
- রাহুল দ্রাবিড় (২০০৩)
নিজের ধীরস্থির ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। মূলত মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করে আগলে রাখতেন ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। মিডল অর্ডারে আস্থাশীল ব্যাটিংয়ের জন্য তিনি ‘দেয়াল’ তকমাও পেয়েছিলেন। তবে এই দেয়ালও একদিন খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছিলেন। তিনি সেদিন গতির নেশায় ছিলেন মত্ত। দ্রুতগতিতে রান করবার একতা ভূত চেপে বসেছিল তাঁর মাথায়।
২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশি এক টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাট হাতে ঝলক দেখিয়েছিলেন। মাত্র ২২ ম্যাচে তিনি করে ফেলেন পঞ্চাশ রান। শেষ অবধি অপরাজিতও ছিলেন রাহুল। ৩৫৪ রানের টার্গেটটা একটা স্বস্তির জয় এনে দিয়েছিল ভারতকে।
- যুবরাজ সিং (২০০৪)
বা-হাতি অলরাউন্ডার হিসেবে একটা সময় বিশ্বক্রিকেটে দাপটের সাথে রাজত্ব করেছেন যুবরাজ সিং। স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকিয়ে বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছিলেন যুবরাজ। তিনি বরাবরই বেশ মারকাটারি ব্যাটিং করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ দেখেছিল তাঁর তেমনই এক রুদ্রমূর্তি।
ভারতের টপ অর্ডারে প্রায় সবাই রান তুলছিল দ্রুততার সাথেই। শেষ দিকে মাত্র ২২ বলে অর্ধশতক তুলে নেয় যুবরাজ। তাঁর এমন দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রদর্শনে ভারত ৩৪৮ রান জড়ো করেছিল। যুবরাজ অপরাজিত ছিলেন শেষ অবধি। বাংলাদেশ সে ম্যাচে কোনরকম পাত্তাই পায়নি।