জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারটা সাকিব আল হাসান সামলেছিলেন খুব উদাসীনভাবে। ক্রিকেট বোর্ডকে তো জানানই নি, উলটো ক্ষুদেবার্তাও চালাচালি হয়েছিলো বুকি দীপক আগরওয়ালের সঙ্গে। তদন্তের পর যে কারণে মুখোমুখি হন নিষেধাজ্ঞার। জুয়াড়িদের সঙ্গে সে আচরণ আর উদাসীনতা এখনো পোড়ায় ৩৩ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারকে।
সাকিবের সঙ্গে বেশ ক’বার আলাপের চেষ্টা করেছিলেন দীপক। কয়েকবার চেয়েছিলেন দলের অভ্যন্তরীণ তথ্যও। ২০১৮ ত্রিদেশীয় সিরিজে, তিন মাস পর আইপিএল চলাকালীন সময়েও তথ্য চেয়েছিলেন তিনি। তদন্তে দেখা যায়, সাকিব ওয়াটস্যাপে দীপকের সঙ্গে ‘সাক্ষাত করুন’ কথাটি লিখেছেন বেশ কয়বার। এরপর সাকিব আর তার ডাকে সাড়া না দিলেও ব্যাপারটি সম্পর্কে কাউকেই জানাননি। এরই ফলে বিপদ ঘনিয়ে আসে তৎকালীন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ওপর।
আজ ক্রিকবাজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সাকিব সে ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ব্যাপারটাকে খুব হালকাভাবে নিয়েছিলাম। যখন আমি দুর্নীতি-বিরোধী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলাম, তাদের বললাম ব্যাপারটা, তারা তখনই সব জানতো! তাদেরকে প্রমাণাদি দিলাম তারপর যা ঘটেছে সেটা সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ জানতে পারে। সত্যি বলতে সেজন্যেই আমাকে এক বছরের জন্যে নিষিদ্ধ করা হয়। নাহয় পাঁচ কিংবা দশ বছরের জন্যেও নিষিদ্ধ হতে পারতাম!’
‘কিন্তু আমার মনে হয় সেটা আমার খুবই বোকাটে একটা ভুল ছিলো। কারণ আমার অভিজ্ঞতা যা ছিলো, যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলাম আর যেসব আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী কোড অফ কন্ডাক্টের ক্লাস করেছিলাম তাতে তেমনটা করা উচিতই হয়নি আমার।’
আফসোস করে সাকিব আরো বলেন, ‘সত্যি বলতে ব্যাপারটা নিয়ে আমার খুবই আফসোস হয়। আর আমি মনে করি, আর কারোই এমন ক্ষুদেবার্তা কিংবা বুকিদের কাছ থেকে ফোনকলকে হালকা ভাবে দেখা কিংবা ব্যাপারটাকে এমনিই ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না। নিরাপদ থাকতে আইসিসি আকসুর কর্মকর্তাকে ব্যাপারটা জানানো উচিত। এটাই আমি শিখেছি আর আমি মনে করি এটা অনেক বড় এক শিক্ষা।’
একটা বড় সময় ধরে আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটের তদন্তাধীন থাকার সময়ে দুইবার সাক্ষাতকার নেয়া হয় তার। প্রথমবার গেলো বছর ২৩ জানুয়ারি, পরেরটা ২৭ আগস্ট। তারপরই সাকিবকে ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, যার এক বছর শর্তসাপেক্ষে শিথিলযোগ্য।
‘যদি আপনি জীবনের অধিকাংশ কাজই ঠিকঠাক করতে পারেন কিছু কিছু সিদ্ধান্তে আপনার একগুঁয়েমি চলে আসা খুবই সম্ভব। আপনি হয়তো বুঝবেন না কিন্তু আপনি আইন লঙ্ঘন করে ফেলবেন। আমার তখন মনেই হয়নি যে আমি খারাপ কিছু করছি। মনে হয়েছিলো, ‘আচ্ছা যা হচ্ছে হতে দেই, ছেড়ে দেই!’ আমি আমার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এখানেই ভুলটা করেছিলাম আমি। এরপর এটা ঘটলো।’
তবে সে অধ্যায় পেছনে ফেলে সাকিব আরও শক্তিশালী হয়ে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। জানান, কঠিন সময়েও পাশে থাকা ভক্তদের সমর্থনের প্রতিদান দিতে চান। সাকিবের কথা, ‘এই সময়টা আর এই পরিস্থিতিটা ব্যাপারগুলোকে ভিন্নভাবে দেখতে শিখিয়েছে আমাকে। এর আগে আমি কেবলই দেশের জন্যে, নিজের জন্যে, পরিবারের জন্যে খেলতাম। কিন্তু এখন আমি কেবল এটা ভাবি সেসব লোকের কথা যারা আমাকে ১২-১৫ বছর ধরে সমর্থন জুগিয়ে এসেছে কিন্তু এখন আমার উপরে তারা হতাশ, কী করে তাদেরকে এর প্রতিদান দেয়া যায়! এখন কেবল সে একটাই মানসিকতা কাজ করে আমার।’
এক বছরের শাস্তি মওকুফ হলে চলতি বছরের অক্টোবর থেকেই খেলায় ফিরতে পারবেন সাকিব। অবশ্য সেক্ষেত্রে করোনাসৃষ্ট বিরতি শেষে ফিরতে হবে ক্রিকেটকেও!