কপিলের প্রহার, কোনির আত্মসমর্পণ

ভিডিওটা হয়ত অনেকেই দেখেছেন। বা হয়ত দেখেননি। আর দেখলেই বা, আরও একবার দেখতে দোষ কি!

ভারত তখনও একদিনের ক্রিকেটে সাবালকত্ব লাভ করেনি। তখনও পর্যন্ত মোট জয়ের সংখ্যা সম্ভবত এক হাতে গোনা যায়। একদিনের ক্রিকেটকে অনেকের কাছেই তখনও যথার্থ ক্রিকেট নয়। বা হয়ত শৃগালের কাছে দ্রাক্ষাফল!

বেনসন অ্যান্ড হেইজেস ওয়ার্ল্ড সিরিজ। ১৯৮০-৮১ মৌসুম। ভারতের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।

সুনীল গাভাস্কার ১৪ বলে এক, দিলীপ ভেঙসরকার ৫১ বলে ১৩। তবুও শেষ পর্যন্ত ভারতের স্কোর ২০০ পেরিয়েছিল এমন এক ব্যাটারের দাপটে যে কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতের ক্রিকেটকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবেন যা কোন ক্রিকেট প্রেমীর কল্পনারও বাইরে ছিল। তিনি যে কপিল দেব সেটা আর না বলে দিলেও চলে।

ভিডিওটিতে বল করছেন জেরেমি কোনি নামের নিউজিল্যান্ডের এক ‘বিটস এন্ড পিসেস’ ক্রিকেটার। অর্থাৎ বল বা ব্যাট দুটোতেই খুব ভালো কিছু নন, কিন্তু সব মিলিয়ে কার্যকারী। মোটামুটি গোছের অলরাউন্ডার ছিলেন।

প্রথম দুটো বলে দুটো বিশাল ছয়। বল ব্রিসবেনের মতো বিশাল মাঠের সীমানা শুধু অনায়াসে পেরিয়েই গেল না, ব্যাটের আঘাতে বল এতটাই উঁচুতে উঠেছিল যে এক সময় মনে হচ্ছিল কয়েক বছর আগে আমাদের নিক্ষেপ করা উপগ্রহ ‘আর্যভট্ট’ বুঝি সেই শট দুটির লক্ষ্য।

উচ্ছসিত দর্শক। ততোধিক উচ্ছ্বসিত ধারাভাষ্যকার। ফিল্ডারদেরও দেখা যাচ্ছে করতালি দিয়ে শট দুটির প্রশংসা করছেন। তবে সবচেয়ে ইম্প্রেসড স্বয়ং বোলার – জেরেমি কোনি। শুধু করতালি দিয়েই তিনি থামলেন না, পকেট থেকে সাদা রুমাল বের করে বুদ্ধ – গান্ধির দেশের ব্যাটারের কাছে শান্তির আবেদনও জানালেন। ক্রিকেট মাঠে এ এক দুর্লভ মুহূর্ত!

শুধু একটি মানুষের মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই তার মনের ভাব। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে তিনি পরের বলের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।

তবে ক্রিকেট বড় মজার খেলা। কপিলের ৫১ বলে ধুমধাড়াক্কা ৭৫ রানের ইনিংস স্বত্বেও ম্যাচ শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড জিতে নেয় সেই কোনিরই অপরাজিত ৪৭ রানের ওপর ভর করে। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ অবশ্য ভারতের সবেধন নীলমনি কপিল দেবই হন।

আর হ্যাঁ, পুরো ম্যাচে মোট তিনটে ছক্কা দেখতে পাওয়া গিয়েছিল সেদিন। তিনটেই কপিলের ব্যাট থেকে। মনে রাখবেন তখন ব্যাটের সুইট স্পট আজকের মতো পুরো ব্যাট জুড়ে থাকত না। বাউন্ডারিও অন্তত ১০০ মিটার লম্বা হত। কিছু ক্ষেত্রে হয়ত ১৩০ মিটার। সেই প্রমাণও অন্য এক ভিডিওতে পাবেন। আজ এতটাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link