যেকোন প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্যই কোন ক্রিকেটারকে ব্যবহার করা বেশ লাভজনক। অন্তত উপমহাদেশে ক্রিকেট নিয়ে ভক্তদের যে পাগলামি তাতে যেকোন প্রতিষ্ঠানের জন্যই তাঁদের প্রচারের কাজটা সহজ হয়ে যায়। বিজ্ঞাপনের এই ধারা থেকে যেমন শচীন টেন্ডুলকার বা ওয়াসিম আকরামরা বের হতে পারেননি, তেমনি পারছেন না সাকিব আল হাসান কিংবা বিরাট কোহলিরাও।
তবে, শচীনদের জমানায় একটা বিটিউন দ্য লাইন ছিল। তারা দুইয়ের মধ্যে একটা সমন্বয় করতে পারতেন। এখানে শচীনের ক্ষেত্রে সত্যি ঘটনা না বললেই নয়। একবার একটা বিজ্ঞাপনে শচীনকে চামচ দিয়ে ব্যাট করতে বলা হল। চামচ দিয়েই নাকি শচীন বলটাকে গ্যালারিতে পাঠাবেন।
শচীন রাজি হলেন না। তাঁর মতে চামচ দিয়ে ক্রিকেট বলকে বাউন্ডারিতে পাঠানো এবং তা বিজ্ঞাপনে দেখানো ক্রিকেটের জন্য অবমাননাকর। বোলারদের জন্যও অপমানজনক। তাই, বাধ্য হয়েই বিজ্ঞাপনের গল্পে পরিবর্তন আনেন নির্মাতারা।
বিজ্ঞাপনের বাংলাদেশি বাজারেও স্থানীয় ক্রিকেটারদের বেশ নামডাক। আমাদের দেশের বড় বড় তারকা ক্রিকেটাররা মাঠের বাইরেও কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন সবকিছুরই খবর রাখেন দর্শকরা। বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের জন্যও তাঁরা হটকেক। কিন্তু, সেই বিজ্ঞাপনের গল্প বা ব্র্যান্ড নির্বাচনে ক্রিকেটাররা শচীনের মত ‘হ্যাডম’ দেখাতে পারছেন কই!
ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ বড় বড় প্রতিষ্ঠানই তাঁদের প্রচারের জন্য সাকিব, তামিমদের ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে দ্রুতই বাজারে প্রচার ও বিশ্বস্ততা অর্জন করা যায়। তবে এরজন্য মোটা অংকের টাকাই নিয়ে থাকেন ক্রিকেটাররা। এমনকি সাকিব, তামিমের একটা ফেসবুক পোস্টের জন্যও প্রতিষ্ঠান গুলোকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা।
তবে এই টাকা খরচ করতে প্রতিষ্ঠান গুলো কখনোই দুবার ভাবে না। কেননা দেশে ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের নিয়ে যত আলোচনা হয় তা আরো কোথাও হয়। এছাড়া ক্রিকেটারদের বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি ভালোবাসেন, ভরসা করেন।
তবে ক্রিকেটারদের এই জনপ্রিয়তার অসদ ব্যবহার করতে চায় কিছু প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে অবশ্য ক্রিকেটারদেরও দায় আছে। কেননা তাঁরা খুব ভালো করেই জানেন দেশের মানুষের কাছে তাঁরা রোল মডেল। ফলে তাঁরা কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হবার আগে সেটা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেয়া উচিৎ।
তবুও ক্রিকেটাররা নানাসময়েই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনেই চুক্তি করে ফেলেন। এতে করে পরে অনেক সময় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই যেমন গত কিছুদিন ধরে বেট উইনার নিউজের সাথে সাকিব আল হাসানের চুক্তি নিয়ে দেশের ক্রিকেট তোলপাড়। তবে এর আগেও ক্রিকেটাররা এমন বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান কিংবা বিজ্ঞাপনের সাথে জড়িয়েছেন।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই সম্ভাবনাময় কিছু ইনিংস খেলে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন সাব্বির রহমান। তরুণদের মধ্যে তাকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হতো সেই সময়। ফলে একটি কোমল পানীয় তাঁকে দিয়ে বিজ্ঞাপন করায়। তবে নায়লা নাঈমের সাথে সাব্বিরের সেই বিজ্ঞাপন নিয়ে পরে আলোচনা সমালোচনা হয়েছিল অনেক।
বিসিবির নির্দেশনার পর ক্রিকেটার সাব্বির রহমানের করা সেই কোমল পানীয়র বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করা হয়েছিল। মডেল নায়লা নাঈমের সঙ্গে করা ওই বিজ্ঞাপনটি নিয়ে বিসিবির নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে আপত্তি আসে। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে সাব্বিরকে বিজ্ঞাপনটি বন্ধ করতে বলেছিল বিসিবি।
বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হবার ঘটনা আছে মাশরাফি বিন মর্তুজারও। বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক এখন মাঠের ক্রিকেটে আর না থাকলেও তাঁর জনপ্রিয়তা কমেনি। যেমন ই অরেঞ্জ নামকি একটি ই-কমার্সের পণ্যদূত হয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বিজ্ঞাপনে তাঁকে দেখেই অনেক তরুণ অগ্রীম টাকা দিয়ে পণ্য অর্ডার করেন ই অরেঞ্জ থেকে।
তবে অনেক অর্ডার আসলেও টাকা নিয়ে সেসব পন্য আর ক্রেতাদের দিতে পারেনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি। পরে এই প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা হলে কর্ণধাররা পালিয়ে যান। এরপর ভুক্তিভোগীরা মাশরাফির বাসাও ঘেরাও করেছিলেন তাঁদের অর্থ ফিরে পাবার জন্য। এতে অবশ্য কোন লাভ হয়নি ক্রেতাদের।
আর এবার তো সাকিব আল হাসান চুক্তি করলেন একটি বেটিং সংলিষ্ট সাইটের সাথেই। যা কিনা নিষিদ্ধ বাংলাদেশের আইনেই। ফলে বিসিবিও এবার শক্ত হাতে ব্যাপারটা দমন করতে চেয়েছে। ফলে সাকিব এই চুক্তি বাতিল না করলে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারই হুমকির মুখে পড়তো। এছাড়া বেটিং এর সাথে যুক্ত হবার অভিযোগে দেশের আইনের ফৌজদারি মামলা হবার সুযোগ ছিল।
সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন ঘটনা নতুন না। ক্রিকেটাররা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা করবেন সেটা স্বাভাবিক। তবে চুক্তিবধ হবার আগে নৈতিক জায়গা থেকেই তাঁদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সবকিছু জেনে নেয়া উচিৎ। যাতে অন্তত তাঁদের নিয়ে কোন বিতর্কের সৃষ্টি না হয়।