একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভালো – প্রবাদটা আর যেখানেই সত্য হোক, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) জন্য অন্তত সত্য নয়। গত তিন চার বছর ধরেই অগোছালো আর দায়সারা ভাবে বিপিএল আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। অনেক সমালোচনার পর অবশেষে কিছুটা গোছালো টুর্নামেন্ট করার পদক্ষেপ নিয়েছে বিসিবি।
তিন বছরের জন্য ফ্রাঞ্চাইজিদের সাথে চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়া এই তিন বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই যে, দেরিতে হলেও ভাল কথাটা তো সত্যি নয়। মানসম্মত বিপিএল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় এখন বড় ধরনের সংকটে পড়েছে বিসিবি।
বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের জয়জয়কার। বছর জুড়েই লেগে থাকে বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ। এমনকি বিপিএলের নির্ধারিত সূচি মিলে গিয়েছে বিগ ব্যাশ, দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি লিগ এবং ইউএই টি-টোয়েন্টি লিগের সাথে। তাই প্রতিদ্বন্দ্বী এসব লিগকে সরিয়ে বৈশ্বিক তারকাদের নিজেদের লিগে আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বিপিএল আয়োজকদের জন্য।
পেশাদার ক্রিকেটাররা সাধারণত দুইটি কারনে ভিনদেশি লিগগুলোতে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে প্রথমটি হলো পারিশ্রমিক। কিন্তু পারিশ্রমিক কাঠামোতে অন্য যেকোনো ফ্রাঞ্চাইজি লিগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। বর্তমান সময়ে ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দেয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। আইপিএলে অংশগ্রহনকারী একজন সর্বোচ্চ ক্যাটাগরির খেলোয়াড় প্রায় ২০ লক্ষ ডলার পেয়ে থাকেন।
অন্যদিকে প্রথমবারের মত মাঠে গড়াতে যাওয়া আইএল টি-টোয়েন্টি লিগে ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক ঠিক করা হয়েছে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার। এছাড়া বিগ ব্যাশ কিংবা পাকিস্তানের লিগে আইকন ক্রিকেটাররা অন্তত ২ লক্ষ ডলার পেয়ে থাকেন। অথচ বিপিএলে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ডলার।
বোঝাই যাচ্ছে,পারিশ্রমিকের এই বিশাল ব্যবধান যেকোনো তারকা ক্রিকেটারকে বাংলাদেশে আসতে অনুৎসাহিত করবে; বিশেষ করে একই সময়ে অন্যান্য লিগ চলার কারণে সেদিকেই নজর থাকবে তাদের।
এবার দ্বিতীয় কারনে আসা যাক – সেটি হচ্ছে মানসম্মত টুর্নামেন্ট। একজন খেলোয়াড়ের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার পেছনে বড় কারন নতুন অভিজ্ঞতা। তারা অন্য দেশের তারকাদের সাথে শিখতে পারে, নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। আবার গুণগত পিচে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার মধ্য দিয়ে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করতে চায়। এই সব ক্ষেত্রেই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে বিপিএল।
সবসময়ই বিপিএলে সেরা ক্রিকেটারের ঘাটতি থাকে। গুটিকয়েক বিশ্বসেরা ক্রিকেটার আসলেও অধিকাংশ দলে অর্ধপরিচিত, অপরিচিত বিদেশিদের দেখা যায়। এছাড়া স্লো উইকেটের কারনে প্রায় সময়ই ম্যাচগুলো হয় লো স্কোরিং। সবমিলিয়ে তাই জস বাটলার, ডেভিড ওয়ার্নারদের আকর্ষণ করার মত তেমন কোন কিছুই হাতে নেই বিপিএলের।
তাছাড়া একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সফল করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর। অথচ ফ্রাঞ্চাইজির বিশৃঙ্খল আচরণ, অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ বিপিএলের অন্যতম নিয়মিত দৃশ্য। অন্যদিকে আইপিএল কিংবা বিগ ব্যাশে অংশ নেয়া দলগুলো অনেক বেশি মানসম্মত।
ফ্র্যাঞ্চাইজির পরিকল্পনা, আচার-ব্যবহার ও ক্রিকেটারদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি মানদন্ডেও বহির্বিশ্বের তুলনায় বিপিএল অনেকটা পিছিয়ে।
সব মিলিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক অন্যান্য টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর ব্যস্ত সুচির কারনে এবার বড় ধাক্কা আসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। আগামী আসরে তারকা ক্রিকেটারদের ছাড়াই সম্ভবত দল গড়ত বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে।
আর এমন বাজে পরিস্থিতির জন্য বিসিবি একমাত্র নিজেদের দিকেই আঙ্গুল তুলতে পারে। বলতেই হয়; কখনো কখনো দেরি করে আসা, না আসার চেয়েও বেশি অপরাধ।