মায়ের গালে ছোট্ট শিশুর এঁকে দেওয়া চুমু। পৃথিবীর বুকে এর থেকে নিষ্পাপ মধুর দৃশ্য আর কি-ই বা হতে পারে। ঠিক তেমন এক চুমুই যেন এঁকে দিয়ে গেলেন সাকিব আল হাসান। ঘোর অন্ধকারের মধ্যেও যেমন একটি আলোক রশ্মি একটা সম্ভাবনা জাগায়, ঠিক তেমনই এক দৃশ্যের মঞ্চায়ন হল ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে।
সাকিব আল হাসান, দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি। সম্ভবত বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসটাই একটু ভিন্নভাবে লেখে দেওয়ার কারিগর তিনি। তা সেটা মাঠের পারফরমেন্স দিয়ে হোক কিংবা মাঠের বাইরের। তিনি সবসময় থেকেছেন আলোচনায়। চাঙ্গা রেখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিস্থিতি নাজেহাল। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে ধুকছে দল। এইতো সেদিন জিম্বাবুয়ের কাছে ওয়ানডেও হেরে এলো। একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। দেশের ক্রিকেটটা ঠিক এগোচ্ছে কোনদিকে সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আবার তাঁর থেকেও বড় আলোচনার বিষয় তো ছিল সাকিব আল হাসান।
তাঁকে নিয়ে বিসিবির একটা পরিকল্পনা ছিল সেটা আন্দাজ করে নেওয়াই গেছে। তাঁর জন্যেই তো এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করতে সময় চেয়ে নিল বিসিবি। তবে সাকিবের মনোযোগ তো ছিল অন্যদিকে। তিনি নিজেকে বিলীন করে ব্যাংক ব্যালেন্স গড়তেই যেন ব্যস্ত। সে তো অনেক আগে থেকেই। তবে এবারের কাণ্ডটা একটু গুরুতর। বিসিবির নিয়ম বিরোধি, দেশের আইন বিরোধি।
সে কাণ্ড তো সবারই জানা। কতই না হল আলোচনা! কত সমালোচনা! সাকিবের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তর্কের শেষ নেই।একটা কাল অন্ধকার মেঘের ঘনঘটা তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আকাশে। একদিকে দলের পারফরমেন্স নেই। অন্যদিকে সামনেই গুরুত্বপূর্ণ দুইখানা টুর্নামেন্ট। দলে ইনজুরির শেষ নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা পারফর্মারদেরই আক্রমণ করেছে ইনজুরি।
তবে এশিয়া কাপের দল তো ঘোষণা করা চাই। সেই সাথে প্রয়োজন সাকিবের একটা বিহিত করা। তাইতো তরিঘরি বিসিবি সভাপতির বাসভবনেই বসল বৈঠক। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট ছেড়ে ক্রিকেট চলে যায় গুলশান দুই নম্বরে। দেশের ক্রিকেটের পাগল সমর্থকদের সবগুলো চোখ তখন সেদিকে। এত এত নেতিবাচকতার মাঝেও এক চিলতে রোদের পরশ বুলিয়ে দিলেন সাকিব।
প্রায় দুই ঘন্টার বৈঠক বোর্ড সভাপতির বাসভবনে। তবে কেন্দ্রবিন্দুতে সাকিব আল হাসান। বোর্ডকর্তা ঘিরে রেখেছেন তাঁকে। আলাপ হয়েছে নানানরকম। এ সময় সভা কক্ষের বাইরে উৎকণ্ঠা বেড়েছে। স্নায়ুচাপ বেড়েছে। তবে সবকিছুকে এক মুহূর্তের উড়ন্ত চুমুতে দূর আকাশে মিলিয়ে দিলেন সাকিব। তাঁর সেই চিরায়ত স্মিত হাসিটা কাটিয়ে নিয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেটের আকাশে থাকা সকল কাল মেঘ।
খবর এলো তিনি হয়েছেন নতুন ক্যাপ্টেন। উৎফুল্লতা ছড়িয়ে গেল সর্বত্র। তবে দল দেখে আনন্দ উল্লাস করবার যেন সুযোগই নেই। টি-টোয়েন্টির ইন্টেন্ট নিয়ে এত প্রশ্ন, এত আলোচনার পরও দলে রয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ফিরলেন মুশফিকুর রহিম। আর ইনজুরি আর সাম্প্রতিক বাজে ফর্ম মিলিয়ে তরুণ শরিফুল ইসলামও হারিয়েছেন নিজের জায়গা।
তবে এতকিছু ভাববার সুযোগ কই? সাকিবের সেই চওড়া হাসি তো এসব প্রশ্নকে ফিঁকে করে দেয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয়ের মুখের সে বিস্তৃত হাসির জন্যেই তো ছিল সব অপেক্ষা। মুহূর্তেই সব দোষ, সমালোচনা আর তিরস্কার ধুয়ে মুছে একাকার।