ব্রাজিলিয়ানদের প্রতি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মোহ অনেকদিনের। সম্প্রতি ৭০ মিলিয়ন ইউরোতে মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোর ইউনাইটেডে যোগ দেয়া সেই পালে হাওয়া লাগিয়েছে। গুঞ্জন আছে আরেক প্রতিভাবান ব্রাজিলিয়ান উইংগার অ্যান্তনির জন্যেও ঝাঁপাবে রেড ডেভিলরা। এই ব্রাজিলিয়ানদের পালে ভর করেই দু:সময় কাটিয়ে উঠতে চায় তারা।
ক্যাসেমিরো হলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে সই করা নবম ব্রাজিলিয়ান। যদিও, ব্রাজিলিয়ানদের সাথে ইউনাইটেডের অতিত ইতিহাস খুব বেশি সুখকর নয়। আসুন দেখে যাক লাল জার্সিতে কাসেমিরোর পূর্বসূরীদের সময়টা কেমন কেটেছিল।
- রদ্রিগো পসেবন
‘ভবিষ্যতের তারকা’ এই তকমা নিয়েই ২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশিওনাল থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে পা রেখেছিলেন রদ্রিগো পসেবন। মূল দলে অভিষেক হতেও সময় লাগেনি, আগস্টেই নিউক্যাসলের বিপক্ষে ম্যাচে রায়ান গিগসের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন। রেড ডেভিলদের হয়ে কমিউনিটি শিল্ড এবং লিগ কাপ জিতলেও তাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেননি। ইনজুরিতে পড়ে বেশিরভাগ সময় মাঠের বাইরে থাকা পসেবনের ইউনাইটেড ক্যারিয়ার তাই দীর্ঘায়িত হয়নি।
- ক্লেবারসন
২০০২ সালে বিশ্বকাপ জেতার ঠিক পরের বছর প্রথম ব্রাজিলিয়ান হিসেবে ওল্ড ট্রাফোর্ডের লাল গালিচায় আগমণ ঘটে ক্লেবারসনের। ইউরোপের বেশ কয়েকটি ক্লাবের আগ্রহ থাকলেও ক্লেবারসনের আগ্রহ ছিল ইউনাইটেডই। আট মিলিয়নের বিনিময়ে ভেরনের বিকল্প হিসেবে তাকে দলে ভেড়ায় রেড ডেভিলরা। কিন্তু অপ্রত্যাশিত এক ইনজুরিতে মাত্র ৩০ ম্যাচেই শেষ হয়ে যায় তার ইউনাইটেড ক্যারিয়ার।
- আন্দ্রেয়াস পেরেইরা
প্রতিভাবান এই প্লেমেকার ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একাডেমিতে যোগ দেন এবং দুই বছর পরই নিজের প্রথম প্রফেশনাল চুক্তি করেন। ২০১৪ সালে এমকে ডন্সের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে লাল জার্সিতে অভিষেক হয় পেরেইরার। বেলজিয়ামে জন্ম নেয়া এই ব্রাজিলিয়ান প্রতিভা লোনে ফ্ল্যামেংগোতে দুই বছর কাটানোর পর এই দলবদলে ফুলহামে যোগ দেন।
- অ্যালেক্স টেল্লেস
২০২০ সালে ইউনাইটেডে যোগ দেবার আগে পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোতে রীতিমতো উড়ছিলেন ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাক অ্যালেক্স টেল্লেস। সে মৌসুমে পোর্তোর হয়ে ১৩ গোলের পাশাপাশি করেছিলেন ১১ অ্যাসিস্ট। মাঠের দুই প্রান্ত ধরে নিয়মিত আক্রমণে উঠতে পারার দক্ষতার ফলেই কেড়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নজর। কিন্তু গত দুই মৌসুম জুড়ে লুক শ’র দারুণ ফর্মের কারণে তেমন একটা সুযোগ পাননি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে দারুণ এক গোল করে গোলের খাতা খোলেন রেড ডেভিলদের হয়ে। এ মৌসুমে টাইরাম মালাসিয়ার আগমণের পরই নিশ্চিত হয়ে টেল্লেসের ক্লাব ছাড়া। কয়েক সপ্তাহ আগে লোনে তাকে ভেড়ায় স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়া।
- ফ্যাবিও ডা সিলভা
২০০৫ সালে হংকং এ আয়োজিত নাইকি প্রিমিয়ার লিগে আলো ছড়িয়ে ইউনাইটেডের হয়ে খেলার সুযোগ পান দুই জমজ ফ্যাবিও এবং রাফায়েল। প্যাট্রিক এভরার কারণে নিয়মিত প্রথম একাদশে জায়গা না পেলেও পাঁচ মৌসুমে রেড ডেভিলদের হয়ে খেলেন ৫৬ ম্যাচ। দলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ জেতার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে মাঠে নামার নজির আছে ফ্যাবিও এর। পরবর্তীতে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স, কার্ডিফের হয়ে খেলার মাধ্যমে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই লেফটব্যাক।
- অ্যান্ডারসন
গ্রেমিও এবং পোর্তোর হয়ে আলো ছড়ানোর পর খোদ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন অ্যান্ডারসনকে দলে ভেড়ানোর জন্য সুপারিশ করেন। সে সময়ে ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে অ্যান্ডারসনকে দলভুক্ত করে রেড ডেভিলরা। অ্যান্ডারসনের ইউনাইটেড ক্যারিয়ারকে মোটামুটি সফলই বলা চলে। লাল জার্সিতে অভিষেকের এক বছরের মাথায় জিতে নেন গোল্ডেন বয় অ্যাওয়ার্ড। ইউনাইটেডের হয়ে ১৮১ ম্যাচে মাঠে নামেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। এই সময় চারবার প্রিমিয়ার লিগ জেতার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স জেতার স্বাদ পান এই ব্রাজিলিয়ান। তারকা হওয়ার সকল গুণাবলি বিদ্যমান থাকলেও ইনজুরির থাবায় অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ার শেষ হয় সাদামাটাভাবেই।
- ফ্রেড
শাখতারের হয়ে আলো ছড়ানোর পর ফ্রেডকে দলে ভেড়াতে অন্য বড় দলগুলোর সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে। শেষপর্যন্ত ৫২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয় রেড ডেভিলরা। কিন্তু দলে যোগ দেবার পর থেকে এখনো নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই ব্রাজিলিয়ান। প্রিমিয়ার লিগের গতিময় ফুটবলের সাথে কখনোই মানিয়ে নিতে পারেননি এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। রেড ডেভিলদের হয়ে দেড় শতাধিক ম্যাচ খেলে ফেললেও এখনো নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারেননি।
- রাফায়েল ডা সিলভা
তর্কসাপেক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা সবচেয়ে সফল ব্রাজিলিয়ানের নাম রাফায়েল ডা সিলভা। সমর্থকদের কাছে রীতিমতো কাল্ট ক্ল্যাসিকে পরিণত হয়েছেন এই ফুলব্যাক। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন রাফায়েল। সাত মৌসুমে ১৭০ ম্যাচ খেলার পাশাপাশি চারবার প্রিমিয়ার লিগ, একবার লিগ কাপ এবং ক্লাব বিশ্বকাপ জেতেন রাফায়েল। এছাড়া দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও মাঠে নামেন রেড ডেভিলদের হয়ে।