বিসিবির অ্যাকাডেমির কোচ হতে আবেদন করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক এই কোচ। বিসিবিই অনেকটা জোর করে তাঁকে জাতীয় দলের কোচ করে। নিজের প্রত্যাশার চেয়ে বাড়তি দায়িত্ব পেয়ে বরাবরই হিমশিম খেয়েছেন রাসেল ডোমিঙ্গো। ফলে, তাঁর বিদায়টা বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন পরম আকাঙ্খিত এক প্রত্যাশা।
যদিও, এমন গুঞ্জন এর আগেও আরো দুই থেকে তিনবার শোনা গিয়েছে। তবে, আগে আর কখনোই গুঞ্জন এতটা ডালপালা মেলেনি। আর এবার বিশেষ করে খোদ রাসেল ডোমিঙ্গোর মনটাই নাকি বিষিয়ে উঠেছিল। তাই, বাংলাদেশ ক্রিকেট ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাথে সম্পর্ক চুকেবুকে ফেললেন তিনি। দেশে ফিরে পরিবারের সাথে কথা বলে চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যদিও, ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগ বা বিসিবির কাউকেই ডোমিঙ্গো আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও কিছু জানাননি।
এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রটা গেল একটা সপ্তাহ ধরেই তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে নাকি তাঁর পরিকল্পনা পছন্দ হচ্ছে না বিসিবির। খোলামেলাই তাঁর সমালোচনা সংবাদ সম্মেলনে করেছেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। সেখান থেকেই শুরু হয় বিতর্কের।
এর আগে, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে পারফরম্যান্সের কারণে বরাবরই সমালোচিত হচ্ছিলেন রাসেল ডোমিঙ্গো। এর ফলে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সাথেও সম্পর্কের অবনতি হয় তাঁর।
টেকনিক্যাল পরামর্শক হিসেবে দলের সাথে যুক্ত হয়েছেন শ্রীধরন শ্রীরাম। ভারতীয় সাবেক এই ক্রিকেটার কোচিং দুনিয়ায় বেশ সিদ্ধহস্ত। ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার সাথেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তাঁকে মূলত টি-টোয়েন্টি দলের দেখভালের জন্যই আনা হয়েছে।
মূলত এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে শ্রীধরন শ্রীরামকে। হঠাৎ করেই স্বল্প সময়ের জন্য নতুন একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে কারণ কি সে প্রশ্ন থেকেই যায়। রাসেল ডোমিঙ্গো যদি সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হয় তবে তাঁকে বাকি দুই ফরম্যাটের দায়িত্বে রেখে দেওয়াটাও তো দৃষ্টিকটু। তবুও বিসিবি সেই পথেই হেঁটেছিল। ডোমিঙ্গোকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। রাখা হয় কেবল ওয়ানডে আর টেস্টে।
এরপর সেই ইস্যু নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনও বোর্ড সভাপতির সাথে মিলে করেন ডোমিঙ্গো। তাকে, ২০২৩ বিশ্বকাপ অবধি দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণাও আসে। তবে, সিদ্ধান্তটা মেনে নিলেও মনে নেননি। বরং, মনটা তাঁর বড্ড বিষিয়ে উঠেছে। সেই সংবাদ সম্মেলনের পর একাধিক গণমাধ্যমের কাছে ঝাঁঝালো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ডোমিঙ্গো, যাতে তিনি বার বার কাঠগড়ায় তুলেছেন বোর্ড সভাপতি, টিম ডিরেক্টর ও দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের। সেই বক্তব্যের পর বিসিবির তরফ থেকে তাঁর কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়।
তখনই আসলে বোঝা যাচ্ছিল, এরপরও ডোমিঙ্গো টিকে গেলে – সেটা খোদ বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির সাথেই যায় না। তবে, বরখাস্ত হওয়ার সুযোগ রাখেননি ডোমিঙ্গো। এশিয়া কাপে যেতে হয়নি বলে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, নিজের পরিবারের কাছে। সেখানে নিজের মত ভাবার সময় পেয়েছেন। পরিবারের সাথে আলাপ করারও সুযোগ পেয়েছেন। সেই আলাপ শেষেই এসেছে ইস্তফার সিদ্ধান্ত। এখন স্রেফ যে সম্পর্কটা আছে সেটা কেবলই কাগজ কলমের আনুষ্ঠানিকতা।
আর এর অর্থ প্রধান কোচ নিয়ে আবারও বিপদে পড়তে যাচ্ছে বিসিবি। বিপদের সময়ে হয়তো খালেদ মাহমুদ সুজন বা জেমি সিডন্সকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ করা হবে। তবে, তাতেই কি সমাধান হবে? অবশ্য, সব সমাধানই নাকি বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের হাতে থাকে। দেখা যাক নিজের সমাধানের ঝোলা থেকে এবার কি তীর ছুঁড়ে মারেন তিনি।