একটা দাগ, দু’টি ভিন্ন দেশ। তফাৎ শুধু সেটুকু। তাতেই তো একেবারেই আর্থ-সামাজিক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মতাদর্শ সবকিছুতেই বিস্তর ফারাক। আর তাতেই খানিকটা দ্বন্দ। আর সে দ্বন্দের ছিটেফোঁটা খেলার মাঠেও চোখে পড়ে হরহামেশাই। আগে তো নিত্যদিনের একটা দ্বৈরথ ছিল ভারত-পাকিস্তান। তবে রাজনৈতিক বৈরীতার কারণে টুর্নামেন্ট ছাড়া এই দুই দলের লড়াই যেন অমাবশ্যার চাঁদ।
এবার এসেছে সে মাহেন্দ্রক্ষণ। ক্রিকেট মাঠে লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি। এশিয়া কাপের ম্যাচে মুখোমুখি ভারত আর পাকিস্তান। রোববার আরব আমিরাতে হওয়ার কথা সে ম্যাচ। ম্যাচকে ঘিরে উপমহাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের মাঝে নিশ্চয়ই আগ্রহের বিন্দুমাত্র কমতি নেই। তবে খেলোয়াড়রা যেন রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে।
একটা ভ্রান্ত ধারণা হয়ত কমবেশি সবার মধ্যেই রয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈরিতা ক্রিকেটাররাও নিজেদের মাঝে বজায় রাখেন। এর একটা সোজাসাপ্টা উত্তর হতে পারে, ‘না’। অন্তত এবারে এশিয়া কাপ আসরের বেশকিছু ঘটনা নজর কেড়েছে। সমর্থকদের মনে দাগ কেটেছে। এই যেমন শাহীন শাহ আফ্রিদির সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার। তিনি ভারত জাতীয় দলের প্রায় সবার সাথেই কম বেশি কথা বলেছেন।
দুই দলের খেলোয়াড়দের মাঝে কুশল বিনিময় হয়েছে। খানিক খুনশুটিও করেছেন আফ্রিদি আর ঋষাভ পান্ত। আফ্রিদি পান্তকে বলেন, ‘ইয়ার আমি আপনার মত মারকুটে ব্যাটার হয়ে একহাতে বিশাল বিশাল ছক্কা মারতে চাই।’ জবাবে হাস্যজ্জ্বল ঋষাভ বলেছেন, ‘যেহেতু তুমি বোলার সেহেতু তোমাকে অনেক বেশি খাটতে হবে, স্যার।’ ঠিক এমন সম্পর্কই বিদ্যমান ভারত ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের মধ্যে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম কিছুদিন আগেই টুইটারে পোস্ট করে বিরাট কোহলির পাশে থাকার কথা জানিয়েছিলেন সবাইকে। বিরাট কোহলি ফর্মহীনতায় ভুগছেন দীর্ঘ একটা সময় ধরে। আর মুদ্রার অপরপ্রান্তে বাবর আজম রয়েছে খুব সম্ভবত তাঁর ক্যারিয়ারে সেরা ফর্মে। নিন্দা মিশ্রিত বেশ কিছু তুলনা ইতোমধ্যেই গোটা বিশ্বেই বেশ সরব। আর ঠিক তখনই বাবর পাশে থেকেছেন বিরাটের।
সেখান থেকেই আন্দাজ করে নেওয়া যায় এই দুই কিংবদন্তি ব্যাটারের সম্পর্ক। আর আইসিসি অ্যাকাডেমি মাঠে দুই দলের অনুশীলনের মাঝে বিরাট-বাবরকে দেখা গেছে হাস্যজ্জ্বল করমর্দন করতে। নিজেদের মধ্য খানিক আলাপচারিতা শেষে নিজেদের ভিন্ন পথে অগ্রসর হয়েছেন। দুই দলের সমর্থকরা যতই মুখোমুখি অবস্থানে থাকুক না খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যে বজায় রাখছেন সৌহার্দ্যপূর্ণ খেলোয়াড়ী বন্ধন।
প্রতিপক্ষ হিসেবে পাকিস্তান বড্ড শক্তিশালী। ভারতের ক্রিকেটারদের এটা খুব ভাল করেই জানা। তাইতো ঘাম ঝড়ানো অনুশীলনটা করছেন তাঁরা। ফাঁকি দেওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। তবে এরই মাঝে নিজেদের মধ্য হাসি-ঠাট্টা অথবা একটু দুষ্টমি করছেন চাপমুক্ত থাকতে। রোহিত শর্মা তো অনুশীলনে একধরণের ইলেক্ট্রিক স্কুটার নিয়ে এসে রীতিমত সবাইকে অবাক করেছনে।
অনুশীলনের ফাঁকে নিজের মস্তিষ্ককে হালকা একটু নিস্তার দেওয়ার জন্যেই বোধহয় রোহিতের এমন। তাতে অবশ্য বন্দনায় ভেসেছেন ভারতের এই অধিনায়ক। তাঁকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ইতিবাচক পোস্টের ছড়াছড়ি। নিজেকে চাপমুক্ত রাখতে কত কিছুই তো করা যায়। বিচিত্র এই ভুবনে প্রতিটা মানুষই তো ভিন্ন আর নিজেদের মত করেই বিচিত্র।
একদিকে রোহিত নিজেকে চাপ মুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন তো অন্যদিকে সতীর্থদের মধ্যে লড়াই চলছে। না ঠিক আক্ষ্যরিক অর্থে লড়াই নয়। তাঁরা নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন। নেট অনুশীলনে সেসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে খানিকটা খুনশুটি চলছে ভারত জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে। এরই মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝালাই করে নেওয়া কাজটা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
সমর্থকদের মধ্যে যতই স্নায়ুযুদ্ধ চলতে থাকুক না কেন, খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যে তেমন কোনকিছু অন্তত মাঠের বাইরে প্রকাশ করেন না। আর ম্যাচের আগে অন্তত নিজেদেরকে বাড়তি চাপের বোঝায় পিষে ফেলতে চান না খেলোয়াড়রা। উত্তেজনা আপাতত ছড়িয়ে পড়ুক ভক্ত-সমর্থকদের মাঝে। মাঠের ক্রিকেট নিশ্চয়ই তা বাড়িয়ে দেবে বহুগুণে।