নাজিবুল্লাহ জাদরান। নামটাতেই একটা শক্তপোক্ত ব্যাপার থাকলেও, বাস্তব জীবনে বেশ লো প্রোফাইল। নিজেকে নয় বরং নিজের ব্যাটিং শৈলী দিয়ে শক্তিমত্তা প্রকাশ করেন। বেশ কিছু সময় ধরেই আফগানিস্তান দলের বিগ হিটারের ভূমিকা পালন করছেন। নতুন আফগানিস্তানের নতুন পাওয়ার হিটারে পরিণত করেছেন নিজেকে। তবে, তিনি একটু ভিন্ন ধাঁচের। চাপের মুখে পাওয়ার হিট করা সহজ নয়। সেটাই তিনি করেছেন। এক হাতে হারিয়েছেন বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি নাজিবুল্লাহ জাদরানকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। এই একটি ম্যাচেই মেরেছেন ছয়টি ছক্কা। সাথে একটি চারও ছিল। ভাবা যায়! বাংলাদেশের বিপক্ষে সাত উইকেটের জয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা তিনিই পালন করেছেন। ১৭ বলে খেলেছেন ৪৩ রানের একটি ইনিংস। তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ২৫২.৯৪! এশিয়া কাপের পনেরোতম আসরে এ যেন নতুন এক আফগানিস্তান!
শক্তিশালী এক আফগানিস্তান! কি দুর্দান্ত নৈপুণ্যে শ্রীলঙ্কাকে বধ করে এশিয়া কাপের যাত্রার শুরু করলো। তারপরের ম্যাচে বাংলাদেশকেও হারিয়ে দিতে সক্ষম হলো। পরপর শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশকে হারিয়ে সবার আগে এশিয়া কাপের সেকেন্ড রাউন্ড নিশ্চিত হল আফগানদের।
টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটে নাজিবুল্লাহ জাদরানের স্ট্রাইক রেট ১৪৩.৪৪। এই ফরম্যাটে ৮০ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে করেছেন মোট ১৫৩২ রান। সব মিলিয়ে চার মেরেছেন ৯৯ টি এবং ছক্কা পিটিয়েছেন ৮৫ টি! টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্টই বলা চলে তাঁকে। যার কারণে বিশ্বজুড়ে টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি চুক্তি সাক্ষর করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টি তে এমআই এমিরেটসের সাথে।
বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচে তিনি প্রথম ছক্কাটি পেটান ষোলতম ওভারে মেহেদী হাসানের বলে। স্কোরবোর্ডে যখন তিন উইকেটে ৭৯ রান ছিল এর আগ অব্দি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ওই মুহূর্তে আফগানিস্তানের একজন বিগ হিটার দরকার ছিলো। এবং সেই দায়িত্বটা বীরদর্পে নিজের ঘাড়ে তুলে নিলেন নাজিবুল্লাহ। নাজিবুল্লাহ মাঠে নামার পর থেকেই নিয়ন্ত্রণটা চলে যায় আফগানিস্তানের হাতে। ইব্রাহিম জাদরান ও নাজিবুল্লাহ জাদরানের জুটিতে ১৮.৩ ওভারেই জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান।
খেলার শেষে আফগানিস্তানের অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এটা সহজ স্কোর হতে যাচ্ছে না। আমরা উইকেট হাতে রাখতে চেয়েছিলাম। কারণ আমাদের সত্যিই বল পেটানোর ক্ষমতা আছে। নাজিব জাদরান সেই কাজটাই করেছেন।’
এই বছরের কথা বলতে গেলে বলা যায় এখন অবধি নাজিবুল্লাহ একটি ভাল বছর কাটিয়েছেন। ঝুলিতে পুরেছেন ওয়ানডেতে তিনটি অর্ধশতক এবং টি–টোয়েন্টিতে দুটি অর্ধশতক। ২০১২ সালে ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তার ওডিআই অভিষেক ঘটেছিল। সে বছরই সেপ্টেম্বরে ভারতের বিপক্ষে একটি ম্যাচে তাঁর টি-টোয়েন্টি অভিষেক ঘটেছিল।
আফগানিস্তান এখন এশিয়া কাপের সুপার ফোর-এ। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার আগে কয়েকদিন বিশ্রাম পাচ্ছে তাঁরা। সামনে আরও কঠিন বিরোধী দলকে মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু এই যে আফগানিস্তান হঠাৎ করেই এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো, ক্রিকেটবিশ্বে তাক লাগিয়ে দিলো – তা তো এই নাজিবুল্লাহ জাদরান এর মতো পাওয়ার হিটারদের জন্যই সম্ভব হয়েছে।