রান ফিরল, তৃপ্তি নয়

বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইন ফর্ম বিরাট কোহলিকে সবচেয়ে বেশি মিস করছে ভারত। টপ অর্ডারে বিরাটের ক্ষুরধার পারফরম্যান্স অনেকবারই উদযাপনের উপলক্ষ এনে দিয়েছিল ভারতীয়দের। কিন্তু এখন দলের বোঝা হয়ে গিয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এমনকি বাদ পড়ার গুঞ্জন ভাসছে বাতাসে।

ভারতের তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বেই সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন বিরাট কোহলি। বিরামহীন রান করেছেন, গড়েছেন নতুন সব রেকর্ড। কিন্তু হঠাৎ কি যেন ঘটে গেলো, অফ ফর্মের ছায়া নেমে এসেছে কোহলির ক্যারিয়ারে। বর্তমানে সময়ে বাইশ গজে দেখা যাচ্ছে ম্লান কোহলিকে।

বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইন ফর্ম বিরাট কোহলিকে সবচেয়ে বেশি মিস করছে ভারত। টপ অর্ডারে বিরাটের ক্ষুরধার পারফরম্যান্স অনেকবারই উদযাপনের উপলক্ষ এনে দিয়েছিল ভারতীয়দের। কিন্তু এখন দলের বোঝা হয়ে গিয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এমনকি বাদ পড়ার গুঞ্জন ভাসছে বাতাসে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিরাট কোহলি রান পাচ্ছেন না, ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। প্রায় প্রতি ম্যাচে তিনি ক্রিজে সেট হতে পারছেন, কিন্তু হুট করে-ই কোন অদৃশ্য সুতোর টানে উইকেট দিয়ে আসছেন। অবশ্য যতক্ষণ বাইশ গজে থাকছেন ততক্ষণ টি-টোয়েন্টির সাথে মানানসই অ্যাপ্রোচেও ব্যাটিং করতে পারছেন না কোহলি।

সাবেক ভারতীয় অধিনায়কের ২০-২৫ কিংবা ৩০-৩৫ রানের ইনিংসগুলোতে স্ট্রাইক রেট ১৪০ বা ১৫০ হয় না। সর্বশেষ এশিয়া কাপে খর্ব শক্তির হংকংয়ের বিপক্ষেও আহামরি কিছু করতে পারেননি। হ্যাঁ, দলটির বিপক্ষে অপরাজিত ছিলেন; সেই সাথে ফিফটির দেখাও পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর ব্যাটিং ঠিক মন ভরাতে পারেনি।

৪৪ বলে ৫৯ রান করা বিরাট কোহলি একটা চার এবং তিনটি ছয় হাঁকিয়েছিলেন। অর্থাৎ মাত্র চার বলে তিনি ২২ রান করেছেন। বাকি ৪০ বলে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৩৭ রান। হংকংয়ের মত দলের বিপক্ষে হয়তো এমন ইনিংস খুব একটা প্রভাব ফেলবে না, তবে বড় মঞ্চে বড় দলগুলোর বিপক্ষে এমন রয়ে সয়ে ব্যাটিং ভারতের বড় স্কোর গড়ার পথে বাধা হতেই পারে।

এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষেও ৩৫ রান করতে বিরাট কোহলির লেগেছিল ৩৪ বল। ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনা, কোহলির ফর্ম বিবেচনায় ১০২ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস মন্দের ভাল মনে হতে পারে। তবে আধুনিক টি-টোয়েন্টির সাথে বড্ড বেমানান। পাকিস্তান শেষদিকে নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং ফিল্ডিং হয়তো ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো। সেক্ষেত্রে পরাজয়ের কারণ হিসেবে বিরাটের এই ধীরগতির ইনিংসকে দায়ী করলে তর্কের কিছু থাকবে না।

একটা সময় বিরাট কোহলি ছিলেন সেরা ছন্দে। নিজের দিনে একাই যেকোনো বোলিং লাইনআপকে উড়িয়ে দেয়ার সামর্থ্য ছিল তাঁর। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। সেই ম্যাচে বিরাট কোহলির ম্যাচ জেতানো ৮২ রানের ইনিংস তাঁর সক্ষমতার প্রমাণ দেয়।

এছাড়া ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৪৪ বলে ৭২; ২০১৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫০ বলে ৯৪ কিংবা ২৯ বলে ৭০ রানের বিধ্বংসী ইনিংসগুলো বিরাট কোহলির ব্যাটিং শিল্পের একেকটি প্রদর্শনী।

কিন্তু এখন এসব নিতান্তই স্মৃতিচারণের মত হয়ে গিয়েছে। বিরাট কোহলির সেই তেজ, সেই শৈলীময় ব্যাটিং এখন আর দেখা যায় না। বাইশ গজে সাহসী বিরাট কোহলিকে পাওয়া যায় না, আত্মবিশ্বাসহীন কোন ব্যাটার ব্যাট করছেন এমন মনে হয়। এবারের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষেও ভাগ্য জোরে বেশ কয়েকবার আউট থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।

সবমিলিয়ে প্রাণহীন ব্যাটসম্যানে পরিণত হয়েছেন বিরাট কোহলি। অন্য সব সাদামাটা ব্যাটারদের মতই নড়বড়ে এখন তিনি। বিশ্বের যেকোনো মাঠে যেকোনো দলের বিপক্ষে সেরাটা উজাড় করে দেয়া বিরাট কোহলি এখন পরিচিত কন্ডিশনেও খাপছাড়া ব্যাটিং করেন। তাঁর ব্যাটিংয়ে রান মিললেও আগের সেই কোহলীময় সত্ত্বা অনুপস্থিত।

দর্শকেরা শুধু বিরাট কোহলির ব্যাটে কিছু রান নয় বরং তুলির আঁচড় দেখতে যায়। আজ থেকে কয়েক বছর আগে যেভাবে ক্রিকেটের ক্যানভাসে তুলির আঁচড় টেনে যেতেন কোহলি, ঠিক সেরকম আরো একবার দেখতে চায় সবাই।

এখন পর্যন্ত এই ইচ্ছে অপূর্ণ রয়ে গিয়েছেন। তবে এশিয়া কাপের অনেকটা বাকি, এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বড় মঞ্চে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয় সেটা বিরাট কোহলিকে শেখাতে হবে না। দ্রুতই হয়তো ফিরবে পুরনো কোহলি, কিংবা হয়তো আর ফিরবেই না। এটাই হয়তো চূড়ান্তরূপে শেষ হওয়ার আগে প্রদীপের দপ করে একটু জ্বলে ওঠা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...