ধর তক্তা, মার পেরেক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এর থেকে ভাল বিশেষণ বোধহয় বাংলাতে আর নেই। ক্রিকেটের বিশ্বায়নকে তরাণ্বিতও করছে এই টি-টোয়েন্টি সংস্করণ। মারকাটারি ব্যাটিং আর দুর্ধর্ষ বোলিং এই দুইয়ের মিশেলে প্রচণ্ড উপভোগ্য এক বিনোদন মাধ্যমে পরিণত হয়েছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। সেই সাথে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট গুলোর মাথা চাড়া দিয়ে জেগে ওঠাও অনেকাংশেই ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে সহয়তা করছে।
এই ক্ষুদ্র সংস্করণে চ্যালেঞ্জটা সবচেয়ে বেশি। নিজের মূল্যবান উইকেট সামলে রেখে দ্রুততার সাথে রান তুলতে সব খেলোয়াড় অন্তত পারে না। আবার ভিন্ন দিকে ইকোনমিকাল বোলার হওয়াও এখন বেশ কষ্টসাধ্য এক কাজ। ব্যাটারদের এই ফরম্যাটে ৩০-৪০ রানগুলো বেশ প্রশংসা পায়। অর্ধ-শতকগুলো নিয়ে তো কাব্য লিখে ফেলা যায়। কেননা খুব একটা অর্ধশতকের দেখা তো আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মেলেনা। আর শতক তো আমবস্যার চাঁদ।
তবে কিছু খেলোয়াড় থাকেন, যারা নিয়মিত ব্যাট চালিয়ে রানটা তুলতে পারেন। টি-টোয়েন্টি মেজাজ বুঝে নিজের উইকেট বাঁচিয়ে যতটুকু সুযোগ মেলে তাঁর পুরোটাই কাজে লাগান। আর তাঁদের করা অর্ধশতকগুলো দলকে নিয়ে যায় জয়ের বন্দরে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বাধিক অর্ধশতক করা খেলোয়াড়দের নিয়েই থাকছে খেলা ৭১-এর আজকের আয়োজন।
- বিরাট কোহলি (ভারত)
শচীন টেন্ডুলকারের পর সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটারদের একজনই ছিলেন বিরাট কোহলি। ফরম্যাটে ভেদে বিরাট ভিন্নসব রুপে হাজির হয়েছেন। ভারতের হয়ে তিন ফরম্যাটেই ১০০ করে ম্যাচ খেলা একমাত্র খেলোয়াড় বিরাট কোহলি। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অর্ধশতকের দিক থেকে তাঁর পাল্লাটাই সবচেয়ে ভারি। তিনি ৩১ খানা হাফ সেঞ্চুরি করেছেন এখন অবধি। শেষটা এসেছে এশিয়া কাপের ম্যাচে হংকংয়ের বিপক্ষে।
- রোহিত শর্মা (ভারত)
ভারতের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মাও রয়েছেন এই তালিকায়। ভারতের মারকাটারি ব্যাটারদের মধ্যে প্রথম সারিতেই অবস্থান তাঁর। ক্যারিয়ারের আদ্যোপান্ত তিনি বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করার নেশায় মত্ত থেকেছেন। সে সুবাদে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ময়দানে তিনিও বিরাটের সমান অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন। ৩১ খানা হাফ সেঞ্চুরি নিয়ে বিরাট আর রোহিত অবস্থান করছেন সবার উপরে। বাকিদের সাথে ফারাকটা বেশ লম্বা।
- বাবর আজম (পাকিস্তান)
ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে হয়ত পাকিস্তানের কিংবদন্তি ব্যাটারদের কাতারেই খুঁজে পাবেন বাবর আজম। তাছাড়া বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই তিনি অন্যতম সেরা ব্যাটার। তিন ফরম্যাটে সমানতালে তিনি পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, ব্যাট হাতেও পারফরমেন্স করে যাচ্ছেন নিয়ম করে। পাকিস্তানি এই ব্যাটারের ঝুলিতে রয়েছে ২৬টি অর্ধশতক। হাতে বেশ সময় রয়েছে। নিশ্চয়ই এই পরিসংখ্যানটা আরেকটু সমৃদ্ধই করতে চাইবেন বাবর আজম। তবে সে জন্যে অবশ্য বেশ কাঠখড় পোড়তে হবে তাঁকে।
- ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার সাথে কেন্দ্রিয় চুক্তি বাতিল করেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। গুঞ্জন আছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে সময় দিতেই তাঁর এমন পদক্ষেপ। অথচ তিনি ছিলেন অজিদের ব্যাটিং লাইনআপের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যাটারদের একজন। ওয়ার্নার ইনিংসের শুরুতে কেমন একটা নির্ভরতার শীতল হাওয়া বইয়ে দিতেন। কেননা যখনই তিনি ব্যাট করতে নেমেছেন দলের হয়ে রান করার চেষ্টা করেছেন। তাইতো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর নামের পাশে রয়েছে ২২ খানা হাফসেঞ্চুরি।
- মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)
টি-টোয়েন্টি রান করবার, বড় ইনিংস খেলবার প্রধান সর্তই হচ্ছে আপনাকে মারকুটে ব্যাটার হতে হবে। নিউজিল্যান্ডের বহু এমন ব্যাটার খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে সবার উপরে নামটা আসবে হয়ত ব্রেন্ডন ম্যাককালামের। এরপরের অবস্থানে হয়ত থাকবেন মার্টিন গাপটিল। ডানহাতি ব্যাটার টি-টোয়েন্টিতে সচারচর দলের হয়ে ওপেন করে থাকেন। আর সে কাজটা তিনি ধারাবাহিকভাবে ভাল করেই করতেন বিধায় ২০টি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারে।
- পল স্টার্লিং (আয়ারল্যান্ড)
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্তমান চিত্রে আয়ারল্যান্ড এখন অবধি নিয়মিত নয়। কালেভদ্রে বড় দলগুলোর সাথে সিরিজ খেলা সুযোগ মেলে। তাছাড়া আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোই তাঁদের ভরসা। তবে তাই বলে আয়ারল্যান্ডের খেলোয়াড়রা পিছিয়ে নেই। তাঁদের মধ্যে থেকে পল স্টার্লিং জায়গা করে নিয়েছেন আজকের এই তালিকায়। তাঁর ঝুলিতেও মার্টিন গাপটিলের সমপরিমাণ অর্ধশতক রয়েছে। মারকুটে এই ব্যাটার নিশ্চয়ই বিশটি অর্ধশতকেই থেমে যাবেন না।