ব্রেন্টফোর্ডের কাছে হারের পর কি এমন করেছিলেন এরিক টেন হ্যাগ যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের চলন বলন এমন পাল্টে গেল! সেই একই খেলোয়াড় যারা ৩৫ মিনিটে ৪টি গোল খেয়েছিল তাদের শারীরিক ভাষাটাই যেন পাল্টে গেছে, আর এই বদলে যাওয়া ইউনাইটেডের কাছে ৩-১ গোলে হেরে থেমে গেছে মিকেল আর্তেতার আর্সেনালের জয়যাত্রা।
এদিন অভিষেক ম্যাচে গোল করে ম্যানেজারের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন রেড ডেভিলদের নতুন ফুটবলার অ্যান্টনি। ২২ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার মার্কাস রাশফোর্ড পাস থেকে গোলটি করেন। এরপর ইউনাইটেডের ব্যাজ ধরে গানার সমর্থকদের সামনে তিনি যেভাবে গোল উদযাপন করলেন তাতে ইতোমধ্যেই রেড ডেভিল সমর্থকদের প্রিয় খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন। ঠিক যেন ‘এলেন, দেখলেন, জয় করলেন!’
ম্যাচ শেষে টেন হাগ তাঁর এই শিষ্য সম্পর্কে বলেন, ‘আমি জানি সে কি করার সামর্থ রাখে, সে খুবই সাহসী একজন ফুটবলার। দলবদলের বাজারে আমি এমন খেলোয়াড়দেরই খুজেছি যারা যেকোন পরিস্থিতি দলের জন্য লড়াই করতে পারবে।’
খেলার ৫৮ মিনিটে মাঠ ছাড়ার আগ পর্যন্ত অ্যান্টনি আর্সেনাল ডিফেন্সকে দৌড়ের উপর রেখেছিলেন। তার বদলি হিসেবে নামা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে এই ব্রাজিলিয়ানের গোলের পর হাসিমুখে অভিবাদন দিতে দেখা গেছে। আয়াক্স ছেড়ে ইউনাইটেডে আসতে মরিয়া অ্যান্টনি এই দলবদলটি সম্পন্ন করার জন্য ডাচ দলটির সাথে অনেকদিন ধরেই অনুশীলন করছিলেন না, খেলেননি লিগের কোন ম্যাচে।
এ সম্পর্কে ইউনাইটেড ম্যানেজার বলেন, ‘সে দলের সাথে অনেক দিন অনুশীলন করেনি তাই সে কিছুটা অপ্রস্তুত কিন্ত এই খেলা থেকে সকলে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ধারণা খুব সহজেই পাবে। গতি ড্রিবলিং এবং প্রেস করা এই তিন ক্ষেত্রেই সে দুর্দান্ত। প্রিমিয়ার লিগের তীব্রতা ডাচ লিগের চেয়ে বেশি তাই তার মানিয়ে নেওয়ার জন্য একটু পরিশ্রম করতে হবে কিন্তু সে কি করতে পারে তা আজ আমরা সকলেই দেখেছি।’
ব্রেন্টফোর্ডের কাছে হারের পর টানা চার ম্যাচে জয় পেয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। একসময় পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে পড়ে থাকা ইউনাইটেড এখন উঠে এসেছে ৫ নম্বরে, শীর্ষে থাকা আর্সেনালের থেকে মাত্র ৩ পয়েন্ট পিছিয়ে তারা। দলের এই পরিবর্তনের সাথে সাথে সমর্থকদের মেজাজেও এখন পরিবর্তন এসেছে, গ্লেজার হটাও আন্দোলন চালিয়ে গেলেও রেড ডেভিল সমর্থকরা টেন হ্যাগের এই ইউনাইটেড দলতিকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন বুন্তে শুরু করেছে।
২০১৩ সালে কিংবদন্তি ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার পর প্রতি মৌসুমেই নিম্নমুখী হতে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যেন আবারো তার পুরানো রুপে ফিরে আসছে। আয়াক্স থেকে আগত ডাচ ম্যানেজার এরিক টেন হ্যাগ দলের পাল যেভাবে শক্ত হাতে ধরেছেন তাতে তারা কিছুতা হলেও স্বস্তি ফিরে পেয়েছে।
তবে টেন হ্যাগ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এখনো তাদের অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। ‘সমর্থকরা দলকে নিয়ে স্বপ্ন বুনছে আমি এটা বুঝতে পারছি, তবে এটা কেবল একটা প্রক্রিয়ার শুরু মাত্র। আমাদেরকে খেলার মান আরো বাড়াতে হবে, ক্যারিংটনে অনুশীলন করার সময় থেকেই দলের সকলকে নিজেদের সবটা উজার করে দিতে হবে। শিরোপা জেতার জন্য আমাদেরকে আরো ভাল খেলতে হবে, এখনো আমাদের অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি করার বাকি আছে’ তিনি যোগ করেন।
খেলার প্রথমার্ধে ১-০ তে পিছিয়ে যাওয়ার পর বাকুয়ো সাকার গোলে খেলার ৬০ মিনিটে ১-১ য়ে সমতা আনার পর নয় মিনিটের এক রাসফোর্ড ঝড়ে ৩-১ য়ে পিছিয়ে যায় আর্সেনাল। যদিও খেলার ১১ মিনিতেই গ্যাব্রিয়েল মার্টেনেলির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল গানাররা কিন্তু ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনকে মার্টিন অডেগার্ডর ফাউল করার কারণে ভিএআর তা বাতিল করে দেয়।
ইউনাইটেডের ডি বক্সে সাকাকে করা লিসান্দ্রো মার্টিনেজের ট্যাকল নিয়ে ম্যাচের চতুর্থ রেফারি সাইমন হুপারের অনেকক্ষণ ধরেই আর্সেনাল ম্যানেজার মাইকেল আর্তেতার বসচা হয়। এছাড়াও ম্যাচজুড়ে অনেক ভাল সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ গানাররা ম্যাচ শেষে ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে শূন্য হাতে ফিরে আছে।
‘খেলাটি জিততে না পারার জন্য আমরা খুবই হতাশ, খেলাটা আমাদের হাতের মুঠোয় ছিল। কিছু ক্ষেত্রে আমরা কৌশলগত ভুল করেছি এবং গোল করার জন্য আমরা যথেষ্ট পরিমাণে মরিয়া ছিলাম না মূলত এই কারনেই আমরা খেলাটি জিততে পারিনি। আমরা যদি আরেকটি সাহসিকতার সাথে ম্যাচটি খেলতাম তবে আমরা জয় পেতাম। এটা আমদের জন্য একটা উচিৎ শিক্ষা হয়ে রইল যে এখানে জিততে হলে আপনাকে সব কিছু নির্ভুলভাবে করতে হবে’, এভাবেই খেলা শেষের সংবাদ সম্মেলনে নিজের হতাশা ব্যক্ত করেন আর্সেনাল ম্যানেজার মিকেল আর্তেতা।
মৌসুমের শুরু থেকেই উড়ন্ত সুচনা করলেও প্রথম বড় কোন দলের সাথে খেলায় হেরে গেল গানাররা। এই মাসে এভারটন এবং ব্রেন্টফোর্ডের সাথে ম্যাচ খেলার পর ইন্টারন্যাশনাল ব্রেক থেকে ফেরার পর সামনের মাসে কঠিন সূচি অপেক্ষা করছে আর্সেনালের জন্য। এসময় এমিরেট স্টেডিয়ামে টটেনহাম, লিভারপুল এবং ম্যানচেস্টার সিটির সাথে খেলতে হবে তাদের যা আর্তেতার আর্সেনালের আসল সামর্থের পরীক্ষা নিবে।