রানের খেলা ক্রিকেট, কিন্তু ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে শুধু বেশি রান করাই আসল নয়। যেখানে তুলনামূলক বেশি রান করলে দল জেতে সেখানে বেশি রান করা আসল নয় – কথাটা একটু গোলমেলে বটে। মূলত এখানে স্ট্রাইক রেটের ব্যাপারটি বোঝানো হয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশি রান করার চেয়ে এখন দ্রুত রান তোলাটা দলের জন্য বেশি কার্যকরি।
আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং কিভাবে করতে সেটা এখনো অনেক দল এখনো বুঝতে পারেনি। এমনকি ওয়ানডে এবং টেস্টের সেরা ব্যাটাররা এই ফরম্যাট ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। তবে বিশ ওভারের এই খেলায় কিভাবে ব্যাটিং করতে হয় তার একটি প্রদর্শনী হয়ে গিয়েছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে রাহুল, রোহিতরা টি-টোয়েন্টির সাথে মানানসই ব্যাটিং করেছেন।
ইনিংসের প্রথম থেকেই দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং লোকেশ রাহুল পাওয়ার প্লে এর সদ্ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন। নাসিম শাহ, মোহাম্মদ হাসনাইনদের বিপক্ষে সাবলীল ব্যাটিং করে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন তারা। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে রোহিত আউট হলেও ততক্ষণে নিজের কাজটা করে গিয়েছেন। তাঁর ১৬ বলে ২৮ রানের ছোট ইনিংসটি ভারতের বড় স্কোর গড়ার ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।
রোহিত শর্মার সঙ্গী লোকেশ রাহুলও ছিলেন ছন্দে। এক চার এবং দুই ছয়ের সাহায্যে রাহুল করেছিলেন ২০ বলে ২৮ রান। রোহিতের এক ওভার পরেই ফিরেছেন তিনি, কিন্তু আউট হওয়ার আগে ভারতকে এনে দিয়েছেন ভাল শুরু। ওপেনারদের গড়ে দেয়া মঞ্চে দাঁড়িয়ে এরপর পাকিস্তানি বোলারদের শাসন করতে শুরু করেছিলেন বিরাট কোহলি। কোন ছয় না আসলেও চার আর সিঙ্গেল, ডাবলের মাধ্যমে স্কোরকার্ড সচল রেখেছেন তিনি।
ইনফর্ম ব্যাটসম্যান সুরিয়াকুমার যাদব এবং রিষাভ পান্ত খুব বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু দলের রান তোলার গতিতে কোন বাঁধা সৃষ্টি করেননি।
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের উপরের পাঁচজনের-ই স্ট্রাইক রেট ১১৫ এর উপরে। এর মধ্যে তিনজন কমপক্ষে ১৫ ব্যাটিং করেছেন তাদের স্ট্রাইক রেট ১৪০ এর বেশি। অহেতুক ডট বল এড়িয়ে গিয়েছেন তারা, স্ট্রাইক রোটেট করেছেন আর সেই সাথে বাজে বলগুলোকে বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন। ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ঠিক যেভাবে খেলা উচিত সেভাবেই খেলেছেন তারা।
টি-টোয়েন্টি খেলাটা মাত্র বিশ ওভারের, সব ব্যাটারকে সবদিন বড় ইনিংস খেলতে হয় না। চার পাঁচ জন ব্যাটসম্যানের মাঝারি মানের ইনিংস যেকোনো দলকে মানসম্মত সংগ্রহ এনে দিতে পারে। আর তাই যতক্ষণ ব্যাট করার সুযোগ থাকে ততক্ষণ আসলে ইতিবাচক ভাবে ব্যাটিং করা উচিত।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংস বড় করার জন্য কাউকে অ্যাংকরিং করার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এবং কেউ মাঠে তেমনটা করেনও নি। বড় ইনিংস কিংবা ব্যাটিং গড় বাড়ানোর জন্যও কোন ব্যাটার গা বাঁচিয়ে খেলেননি। ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের সবাই আসলে বেশি রান করার চেয়ে ‘ইম্প্যাক্টফুল রান’ করার দিকেই মনোযোগ দিয়েছে।
কোন নির্দিষ্ট ব্যাটসম্যানের বেমানান স্ট্রাইক রেটের পঞ্চাশ বা ষাট-সত্তর রানের বড় ইনিংস নয়, বরং ইমপ্যাক্টফুল রান করতে পারলেই একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিততে পারবে কোন দল। ওয়ানডে এবং টেস্টের সাথে বিশ ওভারের ফরম্যাটের উপলব্ধির এমন পার্থক্যের কারণে কিছু খেলোয়াড় কিংবা কোন দল হয়তো বিভ্রান্ত হয়; তারা চাইলেই ভারতের এই অ্যাপ্রোচ থেকে কিছুটা হলেও শিখতে পারে।