ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৪২ বলে করেছিলেন ৪৩ রান। টি-টোয়েন্টির মানদন্ডে মোটেই সুখকর ছিল না সেই ইনিংস। প্রশ্ন উঠেছিল, আদৌ কি পাকিস্তানের ওপেনিংয়ে জায়গা পাওয়ার যোগ্য তিনি? প্রশ্নের উত্তরটা মুখে নয়, ব্যাট হাতেই দিয়েছেন পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। পরের দুই ম্যাচে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন তাঁকে ভরসা করে টিম ম্যানেজমেন্ট।
সুপার ফোরের লড়াইয়ে ভারতের বিপক্ষে আরো একবার মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। বিরাট কোহলির ব্যাটে ভর করে ১৮২ রানের লক্ষ্য দেয় ভারত। কিন্তু টপ অর্ডারে এদিনও বাবর আজম ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে, ফখর জামানও পারেননি খোলস ছেড়ে বের হতে। তবে মোহাম্মদ রিজওয়ান ছিলেন ভরসা হয়ে, ছিলেন পাকিস্তানিদের আশার প্রদীপ হয়ে।
শুরু থেকেই ভারতীয় বোলারদের উপর চাপ ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। বাবর আজম এবং ফখর জামানের ছন্দহীন ব্যাটিংয়ে পুরোপুরি সফলতা না পেলেও দলের স্কোরকার্ড সচল রেখেছেন তিনি। তবে মোহাম্মদ নওয়াজ ব্যাট হাতে নামার পরেই প্রতিপক্ষের উপর চেপে বসেন রিজওয়ান।
অলরাউন্ডার নওয়াজকে সঙ্গে করে মাত্র ৪১ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়েন, যেখানে তার অবদান ২১ বলে ৩০ রান। অবশ্য নওয়াজ আউট হওয়ার পর খুব বেশি এগুতে পারেননি রিজওয়ান। নিজের কাজটা পুরোপুরি শেষ করতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই ধরতে হয়েছিল প্যাভিলিয়নের পথ। আউট হওয়ার আগে ৫১ বলে ৭১ রান করেছিলেন তিনি। ৬টি চার এবং ২টি ছয়ের সাহায্যে তিনি এই ইনিংসটি খেলেছেন।
এটা মানতেই হবে আধুনিক টি-টোয়েন্টির যুগে এমন ইনিংস হরহামেশাই দেখা যায়। এমনকি আরো ভাল কিছু করার সুযোগও ছিল রিজওয়ানের সামনে। কেননা তিনি শুধু বাউন্ডারি থেকেই ৮ বলে নিয়েছেন ৩৬ রান। অথচ বাকি ৪৩ বলে মাত্র ৩৫ করেছেন। ডট বলের পরিবর্তে স্ট্রাইক রোটেটের দিকে আরেকটু মনোযোগী হলে হয়তো মোহাম্মদ রিজওয়ানের এই ইনিংসটি পাকিস্তানকে জয়ের পথে অনেকটা পথ এগিয়ে দিতো।
কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের যেভাবে চাপের মুখে প্রতিরোধ গড়েছেন তাতে এই ইনিংসের মাহাত্ম্য অস্বীকার করা যায় না। বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান অল্পতেই থেকে গিয়েছে, টপ অর্ডার প্রত্যাশিত সূচনা এনে দিতে পারেনি তবু পাকিস্তান যেভাবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে, ম্যাচ জিতে নিয়েছে তার বড় একটি কৃতিত্ব মোহাম্মদ রিজওয়ানের।
যদিও কৃতিত্বের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অংশ মোহাম্মদ নওয়াজকে দিতেই হবে। এই বাঁ-হাতি স্পিনার সাধারণত লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করলেও আজ তাকে চার নম্বরে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল পাকিস্তান। আর তাতেই বাজিমাৎ দলটির, মাত্র ২০ বলে ৪২ রান করে পাকিস্তানকে জয়ের পথে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। এছাড়া বল হাতে ইকোনমিক্যাল বোলিং এবং সুরিয়াকুমার যাদবের উইকেট তুলে নিয়ে অবদান রেখেছেন এই ক্রিকেটার।
সবকিছু চাপিয়ে অবশ্য মোহাম্মদ রিজওয়ানের ধারাবাহিকতার প্রশংসা করতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান যে টি-টোয়েন্টিতে ফেভারিট হয়ে উঠেছে তার অন্যতম কারণ এই উইকেটরক্ষকের ব্যাট হাতে ভরসাযোগ্য পারফরম্যান্স। চলতি এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হলেও হংকংয়ের বিপক্ষে তিনি ফিরেছিলেন স্বরূপে।
সেদিন ৫৭ বলে অপরাজিত ৭৮ রান করে আগে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও উঠেছিল তাঁর হাতে। আর সেই ফর্ম এবার ধরে রেখেছেন ভারতের বিপক্ষেও। তাঁর ব্যাটে চড়েই গ্রুপ পর্বের সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে পাকিস্তান।
মোহাম্মদ রিজওয়ানরা এমনই। টি-টোয়েন্টির এই মার কাটারি যুগে তারা কিছুটা রয়ে সয়ে খেলেন। কিন্তু দলকে টেনে নেয়ার সামর্থ্য আছে তাদের; খাদের কিনারায় দাঁড়ানো দলকে জয়ের পথে ফিরিয়ে আনতে পারেন তারা। এবারের এশিয়া কাপে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লক্ষ্যে খেলতে নামা পাকিস্তান খুব করেই চাইবে মোহাম্মদ রিজওয়ান তাঁর ফর্ম ধরে রাখুক আরো অনেকটা সময়।