অস্ট্রেলিয়ার অনুষ্ঠিত ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে এবারের এশিয়া কাপকে প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে নিয়েছিল ভারত। কিন্তু ভুলে ভরা পরীক্ষণ আর ভাগ্যের পরিহাসে ব্যর্থ আন্ত:মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। এক ম্যাচ হাতে রেখেই বাদ পড়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে ভারতের, যা নি:সন্দেহে দলটির আত্মবিশ্বাস দুর্বল করে তুলবে।
চার বছর আগে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে তৎকালীন অধিনায়ক বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে আরব আমিরাতে ভারতের হয়ে অধিনায়কত্ব করেছিলেন রোহিত শর্মা। সেসময় জানিয়েছিলেন মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ক্রমাগত পরিবর্তন করাটা বিশ্বকাপে ভারতের জন্য ক্ষতির কারণ হবে৷ ২০১৯ বিশ্বকাপেই রোহিতের কথার যথার্থতা প্রমাণ হয়েছিল।
কিন্তু এবার রোহিত শর্মা নিজেই ভারতের নিয়মিত অধিনায়ক। তাঁর দলে এখনো চলছে বিরতিহীন পরীক্ষা। সবচেয়ে সেরা টিম কম্বিনেশন খুঁজে বেরার করার জন্য ভারতীয় দলে খেলোয়াড়দের ঘন ঘন রোটেশন করা হচ্ছে। আর একাদশে এই অস্থিতিশীলতা মূলত এশিয়া কাপে দলটির ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম মূল কারণ।
হ্যাঁ, ইনজুরির কারণে জাসপ্রিত বুমরাহ, রবীন্দ্র জাদেজাকে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে পায়নি টিম ইন্ডিয়া। তবু শক্তিমত্তায় তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কাকে হারানো ভারতের জন্য স্বাভাবিক ছিল বটে।
অবশ্য পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার কাছে টানা দুই ম্যাচ হারার পরেও নিজেদের পরিকল্পনায় এখনো অটুট আছেন ভারত কাপ্তান রোহিত শর্মা। তিনি বলেন, ‘একটা সময় আসবে যখন বলা যাবে যে, বিশ্বকাপে এই কম্বিনেশনে খেলবো আমরা। বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত আমরা আপাতত কয়েকজন খেলোয়াড়কে দেখবো, আমাদের সামনে আরো দুইটি সিরিজ আছে।’
এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান আরো বলেন, ‘এশিয়া কাপ শুরুর আগে আমরা চার পেসার এবং দুই স্পিনার নিয়ে দল সাজিয়েছি; যেখানে একজন স্পিনার আবার অলরাউন্ডার ছিলেন। আমরা সবসময়ই দেখতে চেয়েছি তিন পেসার এবং দুই স্পিনার খেললে কেমন হয়। সেই সাথে ষষ্ঠ বোলার হিসেবে একজন স্পিন অলরাউন্ডারকে ব্যবহার করা হবে।’
তবে বোলারদের নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা কাজে দেয়নি৷ বিশেষ করে জাসপ্রিত বুমরাহ এর উপর ভারতের অতিনির্ভরশীলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়া হার্দিক পান্ডিয়াকে স্ট্রাইক বোলার হিসেবে বিবেচনা করাটাও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল ভারতের জন্য। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে, কোচ রাহুল দ্রাবিড় এবং রোহিত শর্মা নিজেদের দলকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দিয়ে সেটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের সবরকম ভাবে প্রস্তুত রাখার জন্যই এমন পরিকল্পনা করেছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
এই ব্যাপারে রোহিত শর্মা জানান, ‘বিশ্বকাপে একটা দলকে বিভিন্নরকমের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। তাই আমি সব ধরনের সমাধান নিয়েই অস্ট্রেলিয়ায় যেতে আগ্রহী। তাছাড়া এশিয়া কাপের এসব পরাজয় থেকে আমরা আরো কিছু বিষয় শিখতে পেরেছি।’
অবশ্য এরই মাঝে ভারতের ৯০-৯৫ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন এই ওপেনার। আগামী ম্যাচগুলোতে অল্পকিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত করা হবে বিশ্বকাপ স্কোয়াড।
যদিও রোহিত শর্মার ভারতের ঠিক বিপরীতে হাঁটছে দাসুন শানাকার শ্রীলঙ্কা। একই খেলোয়াড় এবং একাদশের উপর দীর্ঘ সময় ভরসা করার দিকে গুরুত্ব দিয়েছে৷ দলটির বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ভানুকা রাজপাকসে ভারতকে হারানোর পর একই একাদশের উপর কয়েক বছর বিশ্বাস রাখার জন্য কোচ এবং টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।
ভানুকা রাজপাকসে মেনে নিয়েছেন যে ইনজুরি কিংবা অফ ফর্মের মত কারণে মাঝেমধ্যে পরিবর্তন অত্যাবশ্যক হয়ে যায়। কিন্তু তিনি মনে করেন যে, স্কোয়াডের অন্তত অধিকাংশ খেলোয়াড়কে অধিক সময় ধরে একসাথে থাকার সুযোগ দিতে হবে৷ কেননা অত্যাধিক পরিবর্তন ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস হ্রাস করতে পারে।
ভারত এবং শ্রীলঙ্কা – দুই দল অনুসরণ করছে ভিন্ন দুই উপায়। সাম্প্রতিক ফর্মের বিবেচনায় শ্রীলঙ্কার পরিকল্পনা বেশি কার্যকর মনে হলেও রোহিত শর্মা অপেক্ষা করছেন বিশ্বকাপের জন্য। তাই আসলে কোন দলের সিদ্ধান্ত আসলে সঠিক সেটি জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু মাস৷