বিতর্ক আর সাকিব আল হাসান – যেন একে অপরের সমার্থক। অভিষেকের পর থেকেই বিতর্ককে সঙ্গী করে এগিয়ে গিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মাঠে সাকিব অপ্রতিরোধ্য হলেও, মাঠের বাইরের সাকিবকে নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠে। তাই তো কারো কাছে তিনি বাংলাদেশের প্রবলেম চাইল্ড, আবার কারো কাছে ক্লাসের দুষ্টু ছেলে।
সর্বশেষ সাকিব আল হাসানের নাম জড়িয়েছে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে। সম্প্রতি শেয়ার বাজারে ব্যাপক কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সংস্থাটির এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে কীভাবে কারসাজি হয়েছে, কারসাজির সঙ্গে জড়িত চক্রের তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে নাম এসেছে মোনার্ক হোল্ডিংসের, যে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে ব্যাপক কারসাজি করে প্রায় ১৫ কোটি টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছিলেন এই সময়ের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের।ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দামে বড় ধরনের উত্থানের সময় ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কেনাবেচার সঙ্গে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল বলে ডিএসইর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
জড়িতদের মধ্যে আবুল খায়ের ছাড়াও রয়েছেন তাঁর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান (মোনার্ক হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক), তাঁর সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান ক্যান্ডেলস্টোন ইনভেস্টমেন্টস পার্টনার্স এবং টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সহ আরো বেশ কয়েকজন। মূলত সাকিবের নামে শেয়ার কেনাবেচার কাজ করেছিলেন আবুল খায়ের।
সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সবকিছু ঠিক থাকলে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়ায় যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু এমন সময় বিতর্কের দাগ লেগেছে সাকিবের নাম। অবশ্য বড় টুর্নামেন্টের আগে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়া নতুন কিছু নয় তাঁর জন্য।
এই যেমন চলতি বছরের এশিয়া কাপের আগে ‘বেটউইনার নিউজ’ এর সাথে চুক্তি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন সাকিব আল হাসান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পিছিয়ে যায় দল ঘোষণার দিনক্ষণ এমনকি সাকিবের দলে জায়গা পাওয়া নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। শেষপর্যন্ত বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সেই বিতর্কে সমাপ্তিরেখা টেনে দেন এই বামহাতি ক্রিকেটার।
এর আগে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেও খবরের শিরোনাম দখল রেখেছিলেন সাকিব আল হাসান। সেসময় বহুল আলোচিত সেই নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে এসেছিলেন নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। ২০২০ সালে অ্যান্টি-কোরাপশন ইউনিট এক বছরের জন্য সাকিবকে তথ্য গোপনের দায়ে নিষিদ্ধ করে। শাস্তির মেয়াদ শেষে সাকিব যখন খেলায় ফিরেছিলেন তখন বিশ্বকাপ খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বাংলাদেশ।
আরো একটু পিছনে যাওয়া যাক, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। ইংল্যান্ডে উড়াল দেয়ার আগে দলের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন হয়েছিল। সেখানে দলের সবাইকে পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সাকিব আল হাসানকে। পরে জানা যায়, তিনি নাকি জানতেন না ফটোসেশনের ব্যাপারে।
সেখানেই শেষ নয়, বিশ্বকাপের জন্য দেশ ছাড়ার সময়ও সাকিব আল হাসানকে পায়নি সতীর্থরা। অন্য ফ্লাইটে আলাদা ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপের আগের সময়টাতে সাকিবকে নিয়ে হয়েছে অনেক সমালোচনা। তবে খেলার মাঠে তাঁর অতিমানবীয় পারফরম্যান্স সেসব সমালোচনা থামিয়ে দিয়েছিল।
সাকিব আল হাসান আসলে এমনই; মাঠের বাইরে যা-ই ঘটুক, খেলার মাঠে তিনি অন্য অনেকের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আলোচনা-সমালোচনার চাপ মাথায় নিয়েই পারফর্ম করতে পারেন, নিজের সেরাটা দিতে পারেন।
তারপরও অবশ্য বড় বড় টুর্নামেন্টের আগে এমন বিতর্কে জড়ানো বড্ড অপ্রয়োজনীয়। সাকিব আল হাসান শুধু দেশের সেরা খেলোয়াড় নন, বরং সবচেয়ে বড় আইকনও বটে। তাকে দেখেই শিখতে চায় দেশের তরুণ ক্রিকেটাররা, তাকে অনুসরণ করে দেশের সাধারণ মানুষ। তাই মাঠের মত খেলার বাইরেও সাকিবের ‘আদর্শ’ হয়ে উঠাটা একটু বেশিই দরকার।