এক বৃন্তের দুই কলি

একটা সময় রিয়াদ আমাদের আস্থাভাজন একজন ক্রিকেটার ছিলেন। বিশ্বকাপের মত মঞ্চে, নিউজিল্যান্ডের মত বৈরি পরিস্থিতিতে তিনি ব্যাক টু ব্যাক শতক করেছেন। বাংলাদেশের কঠিন পরিস্থিতি যেমন সামলেছেন, রেকর্ড বইয়ে নিজের নামটি লিখিয়েছেন।

নুয়ান কুলাসেকারার বল। লং অন অঞ্চল দিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির সজোরে মারা বলটা গিয়ে পরল দর্শক গ্যালারিতে। আবার প্রতিপক্ষ সেই শ্রীলঙ্কা। এবারের ছক্কাটা হাঁকালেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, বোলার ইসুরু উদানা। ছক্কার ঠিকানা এবার ফাইন লেগের উপর দিয়ে। তবে এই দু’ছক্কার মাহাত্ম কখনোই সমান নয়। কিন্তু এই দুই ব্যাটারের রোলটা প্রায় একই। দুইজনই ফিনিশার।

এই দুইজনের রোলটা যে একটা সময় একই ছিল সেটাই আবার একটু মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশের বর্তমান কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে সবসময়  মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মহেন্দ্র সিং ধোনি দলে তাঁদের রোল বিবেচনায় সমান।’ বাংলাদেশ দলের সাথে নতুন যুক্ত হওয়া কেউ রিয়াদকে বিশ্বের অন্যতম সফল একজন খেলোয়াড়ের সাথে তুলনা করছে। তাতে নিশ্চয়ই মেনে নিতে খুব বেশি সমস্যা হবার কথা নয় যে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেরা।

অবশ্যই তিনি সেরা। একটা সময় রিয়াদ আমাদের আস্থাভাজন একজন ক্রিকেটার ছিলেন। বিশ্বকাপের মত মঞ্চে, নিউজিল্যান্ডের মত বৈরি পরিস্থিতিতে তিনি ব্যাক টু ব্যাক শতক করেছেন। বাংলাদেশের কঠিন পরিস্থিতি যেমন সামলেছেন, রেকর্ড বইয়ে নিজের নামটি লিখিয়েছেন। একটা সময় রিয়াদের উইকেট থেকে যাওয়ার মানে বাংলাদেশের জয়ের আশা আরেকটু বেঁচে থাকা। রিয়াদ টিকে রয়েছেন মানেই লড়াইটা হবে একেবারে শেষ অবধি।

তবে সব ভালরই একটা শেষ থাকে। এটা তো এই বিশ্বভ্রামাণ্ডের অলিখিত নিয়ম। শুরু হলে শেষটা যে দেখতেই হবে। মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রে ঘটেছেও তাই। রিয়াদ একটা সময় ছিলেন দলের অপরিহার্য্য সদস্য। তবে কালের পরিক্রমায় তিনি হয়েছে অপ্রয়োজনীয়। যদিও তাঁর অভিজ্ঞতার বেশ কদর হয়েছে প্রতিনিয়ত। তবুও একটা সময় তো থামা প্রয়োজন। এই একই কথা আবারও মনে করিয়ে দিলেন শ্রীধরন শ্রীরাম।

তিনি বলেন, ‘সে (রিয়াদ) নাম্বার ছয়ে ব্যাটিং করেছেন ঠিক যেমন ধোনি করেছেন ভারতের হয়ে। তাঁর দুইজনই ম্যাচ শেষ করে এসেছে। ধোনি তো আর চিরজীবনের জন্যে তা করতে পারবেন না।’ হ্যাঁ, ধোনি পারেননি চিরকাল তাঁর স্থান ধরে রাখতে। একটা সময় তাকেও ছেড়ে দিতে হয়েছে নিজের স্থান। তিনি চাইলেই তো অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে আরও বেশকিছু বছর খেলে যেতে পারতেন। নিশ্চয়ই তাঁকে বাঁধা দেওয়ার কেউ ছিল না। কেননা তিনি তো ছিলেন ভারতের সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক।

কিন্তু ধোনি নিজের সময় যে ফুরিয়ে গেছে, সেটা বুঝতে পেরেছেন। তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। এখানেই আসলে ধোনি আর রিয়াদের তফাৎ। রিয়াদ নিজের শেষটা ধরতে পারেননি। তিনি স্বসম্মানে বিদায় জানাননি। কত সমালোচনা শেষে তিনি বাদ পড়লেন। তবুও এখন অবধি তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানাননি। কেবল বাদ পড়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে। একটা সময় হয়ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্তম্ভ।

তবে সময়ের স্রোতে, স্তম্ভের গায়ে ফাটল ধরে। খসে পড়ে সিমেন্টের পরত। তখন তো মেরামতের প্রয়োজন। মেরামত করবার সুযোগ রিয়াদ পেয়েছেন বহুবার। তবে একটা সময় স্তম্ভের মেয়াদ শেষ হয়। সেটা তখন ভেঙে নতুন করে গড়তে হয়। মানুষের ক্ষেত্রে নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিতে হয়। রিয়াদের এখন উচিৎ তাই করবার। অনুজদের জন্যে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। একদিন রিয়াদের ফেলে রেখে যাওয়া স্থানটা দখল করে নেবেন নতুন কেউ।

তাঁকে পরিমাপ করবার মানদণ্ড যদি হন রিয়াদ, তবে নিশ্চয়ই তিনি পুলকিত হবেন আপন মনে। রিয়াদের বিদায় ঘন্টা এবার নিজ থেকেই বাজিয়ে দেওয়ার এইতো সময়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...