বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সেরা ইকোনমি রেট তাঁর। মাত্র ৬.৫৬। বাংলাদেশের নেক্সট বিগ থিঙ হিসেবে আবির্ভাব হয় তাঁর। অথচ, অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি শেখ মেহেদী হাসানের।
দলে থাকা বাকি বোলারদের মধ্যে তাঁর কাছাকাছি ইকোনমি আছে কেবল সাকিব আল হাসানের – ৬.৬৭! বাকিদের কেউই ইকোনমি রেটে মেহেদীর ধারের কাছেও নেই। তারপরও ডান হাতি এই অফস্পিনিং অলরাউন্ডারের দলে জায়গা হারানো নিয়ে খুব বেশি হাউকাউ নেই। জন মানুষে চাপা ক্ষোভ নেই, স্যোশাল মিডিয়ায় আলোচনা সমালোচনা নেই।
আসলে, বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পুরো আলোটা কেড়ে নিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়া ও নাজমুল হোসেন শান্তর অন্তর্ভূক্তির খবর। এমনকি মেহেদী হাসানের ইস্যুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক প্যানেলও খুব একটা জবাবদিহিতার মুখে পড়ছে না।
ব্যাপারটা আসলে কি? কেন বাদ পড়লেন মেহেদী হাসান? তাঁর দোষটাই বা কি? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে ধাপে ধাপে। কোনো নির্দিষ্ট এক কারণে বাদ পড়েননি মেহেদী। কয়েকটা সম্মিলিত কারণ আর তাতে গজিয়ে ওঠা শাখা প্রশাখায় মেহেদীকে নিজের জায়গাটা বিসর্জন দিতে হয়েছে।
প্রথমত, এশিয়া কাপের পারফরম্যান্স। আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা – দুই ম্যাচেই কার্যত বল হাতে মেহেদী ছিলেন নিষ্প্রভ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাঁর ১২ বলে ১৪ রানের ইনিংসটা কোনো কাজে আসেনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরিস্থিতি যাই হোক – শেষ ওভারটা তিনিই করেছিলেন।
এশিয়া কাপ শেষে দেশে তিন দিনের পারফরম্যান্স ক্যাম্প হয়। সেখানে মেহেদীর পারফরম্যান্সে মন ভরেনি টিম ম্যানেজমেন্ট বা কোচ শ্রীধরন শ্রীরামের। ফলে, এশিয়া কাপ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তাঁর মধ্যে কোনো এক্স ফ্যাক্টরই খুঁজে পাননি কোচ।
এখানে বড় একটা ভূমিকা রেখেছে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন। প্রতিটা দলেই ওরকম পেস বোলিং স্বর্গে ফাস্ট বোলারদের ওপরই বেশি জোর দেবে। বাংলাদেশ দলেও আছেন পাঁচজন ফাস্ট বোলার। সেখানে মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের সাথে আছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, এবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদ।
এর মানে এই নয় যে – স্পিনিং অপশন বাংলাদেশের হাতে কম। তিন স্পিনিং অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সাথে আছেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। মেহেদীর চেয়ে নাসুম এগিয়ে ছিলেন বৈচিত্রের জন্য। ডান হাতির চেয়ে বাঁ-হাতি স্পিনারই ম্যানেজমেন্ট বেশি রাখতে চেয়েছে, সাকিব থাকার পরও। আর এর সাথে মোসাদ্দেক পার্ট টাইমার গোছের হলেও মিরাজ তো পুরোদস্তর স্পিনারই।
যদিও প্রশ্ন উঠতে পারে, মিরাজ বা সৈকতকে দিয়ে স্পিন বিভাগের কাজ চলবে তো অধিনায়কের? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচে কিন্তু এই দু’জনের চেয়ে মেহেদীর ওপরই বেশি আস্থা রেখেছিলেন অধিনায়ক।
তাই আক্ষেপ একটু আছেই। তবুও বলা যায়, স্রেফ অফস্পিনার হিসেবে টিম কম্বিনেশন আর কন্ডিশনের জন্য কপাল পুড়েছে মেহেদীর। বিষয়টা এমন যে, দায়টা তারও নয়, আবার নির্বাচকদেরও পুরোপুরি দোষও দেওয়া যায় না।
আবার এখানে তাঁর ব্যাটিং জানাটাও বাড়তি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কারণ, ব্যাটিংয়ে তাঁকে এখনও অবধি কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকা দেয়নি ম্যানেজমেন্ট। সেদিক থেকে মিরাজ বা সৈকত এগিয়ে আছেন তাঁর থেকে। দু’জনকে নিয়েই বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে আলাদা পরিকল্পনা আছে।
মেহেদী কখনও টপ অর্ডারে নেমেছেন, কখনও বা লোয়ার মিডল অর্ডারে। তবে, এটাও ঠিক যে যেকোনো জায়গায় যেকোনো পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে পারে এরকম একজনকে নিশ্চয়ই বাংলাদেশ দল মিস করবে।