বোলিং অ্যাশ…

প্রতি বলের শেষে ‘বোলিং অ্যাশ’ শুনতে শুনতে তখন মনঃসংযোগ ‘ঘেঁটে ঘ’ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। শুনতে পেলে একরকম অস্থিরতা, আবার শুনতে না পেলেও অস্থিরতা, তবে অন্যরকম। তবে, সম্পূর্ণ নিশ্চিন্তে তাঁর ২০২১ সালের গ্রীষ্ম-বর্ষার বিলেত সফরটা কেটে গিয়েছিল। নো খেলা, নো ‘বোলিং অ্যাশ’ শোনা। এতটাই নিশ্চিন্ত ছিলেন তিনি যে ডাগআউট থেকে মুক্তি অর্জন করে খালি পায়ে একা একা গ্যালারিতে বসেও খেলা দেখেছেন ২০২১-এ ইংল্যান্ডের চতুর্থ টেস্টে। টোটাল বিন্দাস যাকে বলে।

তিনি বয়সের হিসেবে ৩৬ বছর পেরিয়ে গেছেন, যেভাবে তিনি পেরিয়ে যেতেন বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্যাটকে, তার অফস্পিন দিয়ে। অন্যদের অহেতুক পাত্তা না দেওয়ার কারণেই অধিনায়কদের ‘স্নেহ’ পাওয়ার দিক থেকে চিরকালীন ‘হতভাগ্য’ তিনি ১১ বছরের টেস্ট আর ১২ বছরের (মূলত ৭ বছরের) ওয়ানডে আর ১২ বছরেরই (মূলত ৭ বছরের) টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তবুও বিস্ময়কর দাগ রেগেছেন বিশ্ব ক্রিকেটে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ব্যাটে অস্ট্রেলিয়া আর ফেব্রুয়ারিতে বলে ইংল্যান্ড সংহারের দাগ তো এখনো টাটকাই। তবু পরের সিরিজেই ইংল্যান্ডে দর্শক হয়েই ছিলেন তিনি।

ইয়ান বোথাম আর জ্যাক গ্রেগরির সঙ্গে যুগ্মরেকর্ড তার, মাত্র ১১ টেস্ট খেলে ৫০ উইকেট আর ৫০০ রান করার। এই মুহূর্তে দ্রুততম ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০ আর ৩৫০ উইকেট (৬৬ ম্যাচে) নেওয়ার রেকর্ডও তার। জীবনের প্রথম ১৩ টেস্ট সিরিজের মধ্যেই সর্বোচ্চ ৬টি টেস্ট সিরিজের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন তিনি, শচীন আর শেবাগকে পেরিয়ে, সেটা ২০১৬র কথা। এখন অবশ্য ওই ৬ পৌঁছে গেছে ৯-এ।

১৯৭৯-৮০ মৌসুমে কপিল দেবের হোম সিরিজে ৬৩ টি উইকেট পাওয়ার রেকর্ড তিনি ভেঙে দিয়েছিলেন ২০১৬-১৭ সালে, হোম সিরিজে মোট ৭৯ টি উইকেট নিয়ে। মুরালিধরনের ১৯১ টপকে এখন তার টেস্টে শিকার বাঁহাতি ব্যাটের সংখ্যা ২০০’র উপরে। তার নয় বার টেস্টে সিরিজ-সেরা খেলোয়াড় হওয়া এখন বিশ্বে দ্বিতীয়, মুরালিধরনের ১১ বারের পরেই।

৮৬ টেস্টে তার ২৪.১৩ গড়ে ৪৪২ উইকেট (টেস্ট প্রতি ৫.১৪), যার মধ্যে আছে ৩০ বার ইনিংসে ৫ উইকেট আর ৭ বার ম্যাচে ১০ উইকেট। ইনিংস সেরা আর ম্যাচ সেরা বোলিং ছিল যথাক্রমে ৭/৫৯ ১৩/১৪০। সঙ্গে ব্যাটে ৫টি শতরান ও ১২ েটি অর্ধশতরান সহ ২৯৩১ রান। ১১৩ ওয়ানডেতে আছে ১৫১ উইকেট, সেরা ৪/২৫, ২০২১-এর আগে শেষ চার বছর ওয়ানডে না খেলেও।

সঙ্গে ব্যাটে একটি অর্ধশতরান সহ ৭০৭ রান। ৫৬ টি টি-টোয়েন্টিতে আছে ৬৬ উইকেট, সেরা ৪/৮। সঙ্গে ব্যাটে ১৬১ রান।২০২১য়ের আগে শেষ ৪ বছর টি২০ খেলেননি। তবে আগামী ২০২২-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রাথমিক ভারতীয় দলে আছেন, যেমন ৪ বছর পরে ফিরেছিলেন ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে। চাঁদের কলঙ্কর মতই আইপিএলে মানকাডীয় আউট এক চিরকালীন দাগ, তাঁর ক্রিকেট কিটে।

তিনি তার অফস্পিনের মোহময়ী ও সুদূরপ্রসারী জালে জড়িয়েছেন বহু প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে, কিন্তু নিজেই মুক্তি খুঁজেছেন নিজের গায়ে জড়িয়ে যাওয়া নিজেরই অধিনায়কদের অনাস্থার জাল থেকে। আপাতত ৩৭-এ পা দিয়েও আগামী অক্টোবরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি সেই পরীক্ষাতেই বসবেন, সেই অনাস্থার জাল ছিঁড়ে আস্থার দুর্গ নতুন করে গড়ে নেবার। আরো বহুদিন বিশ্বক্রিকেটের ঘূর্ণি সার্কিটে থাকার শুভেচ্ছা নিন আপনি, সঙ্গে হাতে থাকুক ভরসার ব্যাটও। ‘রবির আলোয় ভরে থাকুক বিশ্বক্রিকেটের মহাকাশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link