ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ একাদশের রুপরেখা

সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের; নিজেদের শেষ পাঁচ ম্যাচে জিততে পারেনি একবারও; আর গোল করেছে মাত্র একটি, সেটিও আবার পেনাল্টি থেকে। সব মিলিয়ে বেশ টালমাটাল অবস্থা দলটির। অথচ মার্কেট ভ্যালু হিসেবে ইংল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান জাতীয় দল। ইংলিশদের স্কোয়াডের গভীরতা ব্রাজিল, ফ্রান্সের মতই; দারুণ সব খেলোয়াড়ে পরিপূর্ণ স্কোয়াড হওয়া সত্ত্বেও কেন যেন আকাঙ্খিত ফলাফল পাচ্ছে না দলটি।

আর তাই বিশ্বকাপের আগে আবার নতুন ভাবে দল গুছিয়ে নিতে হবে কোচ গ্যারি সাউথগেটকে। দলটির একাদশে অবশ্য অধিনায়ক হ্যারি কেইন ছাড়া আর কোন খেলোয়াড়েরই জায়গা নিশ্চিত নয়। একই পজিশনে একাধিক মানসম্মত ফুটবলার থাকায় বিশ্বকাপে প্রথম একাদশ নির্বাচন করতে তাই মধুর সমস্যায় পড়তে হবে ব্রিটিশ কোচকে। কাতারে ত্রি লায়ন্সের শুরুর লাইনআপে কাদের দেখা যেতে পারে, সেটির সম্ভাব্য উত্তর এবার খুঁজে নেয়া যাক।

  • গোলরক্ষকঃ নিক পোপ, জর্ডান পিকফোর্ড, অ্যারন রামসডেলে 

ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচগুলোতে গোলপোস্টে দাঁড়িয়েছিলেন নিক পোপ, জর্ডান পিকফোর্ড, অ্যারন রামসডেলে। এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্লাবের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক। প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই তিনজনের সামর্থ্যের ফারাকও খুব বেশি নয়। তাই এদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে বেছে নেয়া বেশ কঠিন কাজই হবে।

  • রাইটব্যাকঃ ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার আর্নল্ড, কাইল ওয়াকার, রিস জেমস

বিশ্বের আর কোন দেশে হয়তো এত এত সেরা রাইটব্যাক নেই। লিভারপুলের ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার আর্নল্ড, চেলসির রিস জেমস এবং ম্যানচেস্টার সিটির কাইল ওয়াকার – এদের সবাই শুরুর একাদশে খেলার যোগ্য দাবিদার। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় বর্তমানে বাকিদের তুলনায় পিছিয়ে আছেন আর্নল্ড; অন্যদিকে রক্ষণ এবং আক্রমণে সমানতালে পারফর্ম করছে রিস জেমস। তাই বিশ্বকাপে রক্ষণের ডান দিকে দেখা যেতে পারে এই ব্লুজ তারকাকে। অবশ্য অভিজ্ঞ কাইল ওয়াকারকে নিয়েও ভাবতে পারেন ইংলিশ কোচ সাউথগেট।

  • লেফটব্যাকঃ লুক শ, বেন চিলওয়েল, কির‍্যান ট্রিপিয়ার

লেফটব্যাক হিসেবে খেলানোর জন্য বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছে ইংল্যান্ডের হাতে। এই পজিশনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাও তাই একটু বেশি। গত বছরের ইউরো টুর্নামেন্ট পর্যন্ত অবশ্য লুক শ একাদশে অটো চয়েজ ছিলেন। তবে ইনজুরি তাকে পিছিয়ে দিয়েছে অনেকটা। আর সেই সুবাদে এগিয়ে গিয়েছেন চেলসির বেন চিলওয়েল। ইনজুরি থেকে চিলওয়েল দারুণভাবেই ফিরেছেন ৷ এছাড়া নিউক্যাসেলের অধিনায়ক কির‍্যান ট্রিপিয়ারকে বিবেচনা না করার কোন কারণ নেই, স্বপ্নীল এক মৌসুম কাটানো এই লেফটব্যাক ফ্রি-কিক, ক্রসিংয়ে বেশ দক্ষ।

  • সেন্টার ব্যাকঃ হ্যারি ম্যাগুয়ার, ফিকায়ো তোমোরি, বেন হোয়াইট, জন স্টোনস, এরিক ডায়ের

গত কয়েক বছরে ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগের নেতৃত্বে ছিলেন হ্যারি ম্যাগুয়ার। কিন্তু এখনকার ফর্মের কথা ভাবলে কোনোভাবেই তিনি শুরুর একাদশে থাকার কথা নয়। ম্যাগুয়ার বাদ পড়লে তাঁর জায়গায় খেলার সম্ভাবনা রয়েছে ফিকায়ো তোমোরির। এসি মিলানের এই ডিফেন্ডার রয়েছেন নিজের সেরা ছন্দে। বেন হোয়াইট, এরিক ডায়ের এর মত ইংলিশ ডিফেন্ডাররাও হতে পারেন সাউথ গেটের আস্থার নাম। অন্যদিকে জন স্টোনসের সুযোগ পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত।

  • ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারঃ জুড বেলিংহ্যাম, কেলভিন ফিলিপস, জর্ডান হেন্ডারসন

ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডে ডেকলান রাইসকে নেয়া হবে সেটি প্রায় নিশ্চিত, কিন্তু তাঁর সঙ্গী কে হবেন – তা নিয়ে আলোচনার বিষয়। গত বছরের ইউরো টুর্নামেন্টে কেলভিন ফিলিপসকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল, এবং তিনি সেই সুযোগ কাজেও লাগিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরই ইনজুরি আর নতুন ক্লাবে আসার কারণে এখন মাঠের বাইরেই বেশি সময় থাকতে হচ্ছে তাঁকে।

ফলে বিশ্বকাপের শুরুর একাদশে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে এখন সবচেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন জুড বেলিংহ্যাম। বুন্দেসলিগায় নিজের প্রতিভার যথার্থ প্রমাণ দিয়েছেন এই তরুণ, সাউথগেট এবার সেই প্রতিভা জাতীয় দলে ব্যবহার করতে পারলে লাভটা ইংল্যান্ডেরই হবে। অবশ্য নিজের পুরনো শিষ্য জর্ডান হেন্ডারসনের উপর আরও একবার ভরসা করলেও করতে পারেন ইংলিশ ট্যাকটিশিয়ান, যদিও সেই সম্ভবনা অনেকটাই কম।

  • অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারঃ ম্যাসন মাউন্ট, ফিল ফোডেন, জ্যাক গ্রিলিশ

হ্যারি কেইনের পেছনে সাধারণত একজন প্লে-মেকারকে সুযোগ দেন গ্যারি সাউথগেট। আর এই পজিশনে তাঁর প্রথম পছন্দ ম্যাসন মাউন্ট। চেলসির এই তরুণ সমান তালে গোল এবং অ্যাসিস্ট করতে পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফর্ম ভাল যাচ্ছে না ব্লুজ তারকার।

অন্যদিকে ফিল ফোডেন সময়ের অন্যতম সেরা উদীয়মান ফুটবলার; ম্যানসিটির এই মিডফিল্ডার ‘নাম্বার টেন’ পজিশন ছাড়াও ফরোয়ার্ড লাইনে খেলতে পারেন। একই কথা বলা যায় ফোডেন ক্লাব সতীর্থ জ্যাক গ্রিলিশের জন্যও। তাই বিশ্বকাপে কে সুযোগ পাবে আপাতত সেটা অনুমান করা একটু কঠিন।

  • উইঙ্গারঃ মার্কাস রাশফোর্ড, বুকায়ো সাকা, রাহিম স্টার্লিং, জোডান সানচো 

২০২১ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মার্কাস রাশফোর্ড; নতুন কোচ এরিক টেন হাগের অধীনে নিজের পুরনো ছন্দে ফিরতে শুরু করেছেন তিনি। এছাড়া তাঁর ক্লাব সতীর্থ জোডান সানচো-ও ধীরে ধীরে ফর্মে ফিরতে শুরু করেছেন। আর এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে দুই তরুণ নিশ্চিতভাবেই ফিরবেন ইংলিশ ক্যাম্পে।

অন্যদিকে আর্সেনালের হয়ে দুর্দান্ত সময় পার করছেন বুকায়ো সাকা, গানারদের টেবিল টপার হওয়ার পেছনে বড় অবদান আছে তাঁর৷ অবশ্য এই তিনজনই লড়াই করবেন একটি জায়গা নিয়ে, কেননা উইংয়ে রাহিম স্টার্লিং প্রায় অটো চয়েজ বটে। যদিও ক্লাব পরিবর্তন করায় স্টার্লিংকে আবার নতুন করেই নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link