বাইশের বিশ্বকাপে তেইশের তরুণ

২৩ বছর বয়স। সীমাহীন উদ্দাম, অস্থিরতা আর ভরপুর প্রাণ শক্তিতে মহীয়ান এ বয়স। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়সের উদ্যমতা নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন। তবে তেইশ বছর বয়স নিয়ে সম্ভবত কোনো বিখ্যাত বাঙালি কবি কিছু লিখেননি। অবশ্য ইংরেজ কবি জন মিল্টন লিখেছিলেন, ‘অন অ্যারাইভিং অ্যাট দ্য এজ অফ টোয়েন্টি থ্রি’। 

যা হোক সামনেই পর্দা উঠছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। এ বারের আসরে আতিথেয়তা দিচ্ছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।  ইতোমধ্যেই ১৬ টি দলের দল ঘোষণার কাজ শেষ হয়েছে। এ বারের আসরে বয়স্ক তারকা ক্রিকেটার যেমন রয়েছে তেমন তরুণ ক্রিকেটারদেরও আধিক্য রয়েছে। এর মধ্যে ২৩ বা তার কম বছর বয়সী কিছু তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়েই খেলা- ৭১ এর আজকের আয়োজন। যাদের মাঝে আছে অমিত সম্ভাবনা আর ভবিষ্যত তারকা হওয়ার প্রয়োজনীয় সব রসদ। 

  • রহমানুল্লাহ গুরবাজ (আফগানিস্তান)

সাদা বলের ক্রিকেটে ক্রমেই আফগানিস্তান শিবিরে পরীক্ষিত পারফর্মার হয়ে উঠেছেন তিনি। এশিয়া কাপে ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। পুরো টুর্নামেন্টে ১৬৩.৪৪ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ১৫২ রান। সেই ফর্ম টেনে এনেছিলেন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (সিপিএল)। 

ছয় ম্যাচে করেছিলেন ১৫৭ রান, যেখানে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪০.১৭। সব কিছু মিলিয়ে দারুণ ছন্দে আছেন আফগান এ ব্যাটার। প্রতিনিয়ত ইনিংসের শুরুতে ঝড়ো সূচনা এনে দেওয়াতে তাই এবারের আসরে আফগানিস্তান দলের ট্রাম্পকার্ড হতে পারেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। 

  • নাসিম শাহ (পাকিস্তান)

২০১৯ সালে টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরু হলেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অলোচনায় আসেন ২০২২ সালে। এ বছরের এশিয়া কাপে শাহিন শাহ আফ্রিদির ইনজুরির কারণে পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেয়েছিলেন নাসিম শাহ। আর এতেই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে নিজের ভাগ্য বদলে দেন তিনি।

পুরো আসরই জুড়ে পেস, সুইং দিয়ে স্ট্যাম্প ছত্রখান করেছেন, ব্যাটারদের জন্য হয়ে উঠেছিলেন মহাত্রাসের নাম। এ বারের বিশ্বকাপেও তাই সবার চোখ থাকবে ১৯ বছর বয়সী নাসিম শাহ’র উপর। শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ আর নাসিম শাহ মিলে দুর্দান্ত এক পেসত্রয়ী নিয়েই বিশ্বকাপ খেলবে পাকিস্তান। 

  • ট্রিস্টান স্টাবস (দক্ষিণ আফ্রিকা) 

২২ বছর বয়সী প্রোটিয়া এ ব্যাটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছেন এ বছরেই। তবে  সিএসএ টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ কাপ থেকে শুরু করে দ্য হান্ড্রেড প্রত্যেকটিতেই তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েও সে ফর্মের অব্যাহত রেখেছেন স্টাবস।

ছয় ইনিংসেই মেরেছেন ১১ টি ছক্কা। এর মধ্যে ৭২ রানের একটি ইনিংসও খেলেছেন তিনি। তাই এবারের আসরে ফিনিশিং রোলে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আপে এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন ক্রিস্টিয়ান স্টাবস। 

  • হ্যারি ব্রুক (ইংল্যান্ড) 

মিডল অর্ডারে এসে ধারাবাহিকভাবে রান করবে, সাথে রানের গতিও থাকবে, ইয়ন মরগ্যান অবসরে যাওয়ার পর এমন একজন ব্যাটার বেশ হন্যে হয়েই খুঁজছিল ইংল্যান্ড। হ্যারি ব্রুকের কল্যাণে সেটা ইতোমধ্যে পেয়েও গিয়েছে ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ ম্যাচের সিরিজে ২৩৮ রান করে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছেন তিনি। মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবে এ সিরিজে তাঁর স্ট্রাইক রেটও ছিল দুর্দান্ত, ১৬৩.০১। 

হ্যারি ব্রুকের ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে শক্তিমত্তার জায়গা হলো, সব দিক দিয়ে প্রায় সমান ভাবে শট খেলতে পারেন। ওভার মিড উইকেট কিংবা কভার, মোটামুটি সব জায়গাতেই শট খেলতে দক্ষ তিনি। আর পেসারদের বিপক্ষে তিনি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে বল হিট করতে পারেন। সেই প্রমাণ দিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজেই। টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট, পিএসএল এরপর পাকিস্তান সফর, সব মিলিয়ে পুরো বছর জুড়েই দারুণ ফর্মে আছেন ব্রুক। এখন এই ফর্মটা বিশ্বকাপ পর্যন্ত টেনে নিতে পারলেই হয়। 

  • আফিফ হোসেন ধ্রুব (বাংলাদেশ) 

বয়স ২৩ পূর্ণ হয়েছে এই কিছুদিন আগেই। এরই মাঝে বাংলাদেশের হয়ে খেলে ফেলেছেন ৫০ টিরও বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। অর্থাৎ তারুণ্যের সাথে অভিজ্ঞতার মিশ্রণও আছে এ ব্যাটারের। এ বছরে খেলা ১২ ইনিংসে ৩৭.৮৯ গড়ে করেছেন ৩৪১ রান। যা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ আরব আমিরাতের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৭৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।

আফিফের ঐ ইনিংসের কল্যাণেই কষ্টার্জিত জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। দলের বিপদে মোমেন্টাম ধরের রাখার দিক দিয়ে এরই মধ্যে আফিফ অন্যতম এক আস্থার নাম হয়ে উঠেছেন। তাই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অন্যতম এক ব্যাটিং স্তম্ভ হিসেবেই আফিফের দিকে চোখ থাকবে সবার। 

  • আর্শদ্বীপ সিং (ভারত) 

আইপিএলের গত দুই আসর ধরেই দুর্দান্ত বোলিং করছিলেন আর্শদ্বীপ সিং। সেটা ফল মিলেছিল জাতীয় দলে এ বছর সুযোগ পাওয়াতে। ব্যাটারের ইনটেন্ট বুঝে ভিন্ন ভিন্ন ভেরিয়েশনে বল করার সক্ষমতা রয়েছে তাঁর।

এশিয়া কাপেও দেখিয়ে ছিলেন সে মুন্সিয়ানা। বিশেষত ডেথ ওভারে কার্যকরী বল করেছিলেন তিনি। এ বারের বিশ্বকাপে বুমরাহ না থাকায় তাই ভারতের পেস বোলিংয়ে অন্যতম ভরসার নাম হতে পারেন আর্শদ্বীপ সিং। 

  • হাসান মাহমুদ (বাংলাদেশ)

তালিকাটা আর্শ্বদীপেই শেষ হতে পারতো। তবে হাসান মাহমুদও এই লাইম লাইটে থাকাটা ডিজার্ভ করেন। কারণ গতির সাথে দুর্দান্ত সব ইনসুইং, আউট সুইং দিতে পারেন তিনি। যেটা এত অল্প বয়সী পেসারদের থেকে দেখা মিলে কম। বাংলাদেশের হয়ে ৩ টি ২০ ওভারের ম্যাচ খেলেছেন। তবে ঐ অল্প ম্যাচেই দেখিয়েছেন নিজের সক্ষমতা। মাত্র ৬.৫০ ইকোনমিতে পেয়েছেন ৩ উইকেট। তাই ইনজুরি সমস্যায় আবারও জর্জরিত না হলে এ বারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পেস বোলিং লাইন আপে ট্রাম্পকার্ড হতে পারেন হাসান মাহমুদ।     

    

 

  

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link