পাদপ্রদীপের নিচে, সবিনয় সরবতা

সালটা ২০১২। সে বারের আসরে কলকাতার জার্সি গায়ে বেঞ্চ গরম করছিলেন সাঞ্জু স্যামসন। পুরো আসর জুড়ে একটি ম্যাচেও সুযোগ পেলেন না তিনি। এরপর কোনো রকম আশা না রেখেই রাজস্থান রয়্যালসের একটি ট্রায়ালে অংশ নেন স্যামসন। রাজস্থান রয়্যালসের সে সময়ের মেন্টর রাহুল দ্রাবিড় সাঞ্জুর ব্যাটিং দেখে বেশ মুগ্ধ হলেন। 

এক বছর বাদে রাহুল দ্রাবিড় হঠাৎই একদিন সাঞ্জুকে প্রস্তাব দিলেন। ‘এই ছেলে, তুমি কি আমার দলের হয়ে খেলবে?’ শৈশবের আইডল নিজে এসে এমন প্রস্তাব দিচ্ছেন। সবে আঠারো পেরোনো কিশোরের না বলার সাধ্য কোথায়! সাঞ্জুর স্বপ্নযাত্রা শুরু হয় সেখান থেকেই।

সেই যে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ২০১৩ তে খেলা শুরু করলেন এখনো রয়ে গিয়েছেন দলের অপরিহার্য সদস্য হিসেবে। বর্তমানে দলের অধিনায়কও এই সাঞ্জুই। 

তবে রাহুল দ্রাবিড় এখন আর রাজস্থানের কোচিং প্যানেলে নেই। ২০২১ সালে ভারতের প্রধান কোচের দায়িত্ব পাওয়ায় সে বছরেই রাজস্থান রয়্যালস শিবির ছেড়েছেন ক্রিকেটের ‘দ্য ওয়াল’ নামে খ্যাত রাহুল দ্রাবিড়। 

কিন্তু ভারতের কোচ হওয়ার পর পুরনো শিষ্য সাঞ্জু স্যামসনকে নিয়ে ভিন্ন কোনো পরিকল্পনায় দেখা যায়নি দ্রাবিড়কে। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের আগে বেশ কিছু সিরিজে স্যামসনকে দেখা গেলেও ক্রিকেটের এ দুই বড় আসরের চূড়ান্ত স্কোয়াডে দেখা যায়নি তাঁকে।

অথচ বছর জুড়ে বেশ ভাল ফর্মেই ছিলেন স্যামসন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এ বছরেই ৪২ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এরপরও টিম কম্বিনেশনের কারণে স্কোয়াডে জায়গা হয়নি তাঁর। 

দীপক হুদা, ঋষাভ পান্ত, দিনেশ কার্তিক- এই তিনজনকে একসাথে জায়গা দিতে গিয়ে দল থেকে বাদ দিতে হয়েছে স্যামসনকে। অথচ পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করার জন্য দারুণ অপশন হতে পারতেন তিনি। 

দীপক হুদা বেশিরভাগ রান পেয়েছেন টপ অর্ডারে খেলে। কিন্তু তাকে মিডল অর্ডারে খেলানোর কথা চিন্তা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে একজন টপ অর্ডার ব্যাটার অনেক সময় মিডল ওভারগুলোতে গিয়ে কোন অ্যাপ্রোচে ব্যাট করবেন তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান।

সহজাত ধরণ থেকে বেরিয়ে এসে সফল নাও হতে পারেন। দীপক হুদার ক্ষেত্রেও ঠিক এমন হয়েছে। ব্যাটিং পজিশন নিয়ে বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষার কারণে এশিয়া কাপ থেকেই তেমন ছন্দে নেই তিনি। 

সাঞ্জু স্যামসনের ওপেনিং থেকে শুরু করে মিডল অর্ডারেও ব্যাট করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৮৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মিডল অর্ডারে ব্যাট করে। স্যামসনের শক্তিমত্তার জায়গা হলো, পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি দারুণ টেম্পারমেন্টে ব্যাট করতে পারেন। এজন্য ভারতের পাঁচ  নম্বর জায়গাটায় সাঞ্জু হতে পারতেন বিশেষ কিছু। 

ভারতের ব্যাটিং লাইন আপে প্রথম চারজন বলতে গেলে একেবারে ধ্রুব। রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল ওপেনিংয়ে। এরপর তিনে বিরাট কোহলি, চারে সুরিয়াকুমার যাদব। কিন্তু পাঁচ নম্বর জায়গাটা এখনও মিউজিক্যাল চেয়ারের মত পরিবর্তনশীল। এ জায়গাটায় খেলবেন দীপক হুডা নয়তো ঋষাভ পান্ত। 

২০ ওভারের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই অফফর্মে রয়েছেন ঋষাভ পান্ত। দলের আরেক উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিক দারুণ ছন্দে থাকার পরও ঋষাভ পান্তকে কেন স্কোয়াডে অন্তর্ভূক্ত করা হল তা ব্যাখ্যাতীত। হয়তো দারুণ কিছু করে ফেলার সক্ষমতা বিবেচনাতেই দলে রাখা হয়েছে পান্তকে।

তবে এই এক কারণেই চড়া মাশুল দিতে হয়েছে সাঞ্জু স্যামসনকে। ক্যারিয়ারের প্রাইম টাইমে এসেও ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। ফলত, অসম্ভব প্রতিভা থাকা স্বত্ত্বেও দলে ব্রাত্য হয়ে থাকতে হচ্ছে এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটারকে। সাঞ্জু স্যামসনের বয়সটা এখন ২৭। খুব বেশি বয়স না। কিন্তু এই বয়সেই অনেকের ক্যারিয়ার পূর্ণতা পেয়ে যায়।

সেখানে পরিণত ক্রিকেটার হয়েও ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের সেরাটা দেওয়ার সুযোগই পাচ্ছেন না সাঞ্জু স্যামসন। হয়তো বড্ড অসময়েই ভারতীয় ক্রিকেটে আবির্ভাব হয়েছে তাঁর। তবে সামনের সময়গুলোকে নিজের করে নেওয়ার সক্ষমতা তাঁর রয়েছে। সেটি অটুট থাকলে ভারতীয় ক্রিকেটও সাঞ্জুময় হতে সময় লাগবে না। যেমনটি করে ৩২ বছর বয়সে এসেও ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন সূর্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন সুরিয়াকুমার যাদব।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link