লিটন দাসের ব্যাটিংয়ের স্ট্রং পয়েন্ট কি?
এক কথায় উত্তর দিলে স্মুথ টাইমিং। হিটিং দ্য বল উইথ পোলাইট টাচ ব্যাপারটায় ম্যাক্সিমাম বেনিফিট পেতে হলে যেটা সবথেকে জরুরি, তা হল ফাস্ট পিচ অথবা স্কিডি পিচ। একজন টাচ প্লেয়ার, সে যদি ওপেনার হয় তাহলে তার প্রথম চাহিদাই হবে নতুন বল যেন পিচে স্কিড করে।
হিট থ্রু দ্য লাইন খেলার প্রথম শর্তই এটা। অস্ট্রেলিয়ার পেসি পিচ, যেখানে বল পিচ হবার পর শাই করে বেরিয়ে যায়, সেখানে একজন হিট থ্রু দ্য লাইন টাইপ ব্যাটসম্যান স্বর্গীয় সুবিধা পাবার আশা করতেই পারে, বিশেষ করে ব্যাটসম্যানটি যদি পুল বা হুক ভালো খেলে!
উপরের ছোট্ট তথ্যটি অনুযায়ী, আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপে লিটনকে ওপেনার হিসেবেই দেখতে পাবার কথা। কিন্তু না! দলের বিগত কয়েক ম্যাচের এক্সপেরিমেন্ট দেখে এটা প্রায় নিশ্চিত যে, লিটনকে ওপেনার হিসেবে ভাবা হচ্ছে না। কারন হিসেবে বলা হচ্ছে, স্পিন সামলানোর কাজটা ভালো পারেন বিধায় মিডল ওভারগুলোতে লিটনের উপর ভরসা রাখছে ম্যানেজমেন্ট!
সিদ্ধান্তটা কি সঠিক?
স্ট্যাট আমার প্রিয় বস্তু কোনকালেই ছিল না। খোলা চোখের পর্যবেক্ষনকেই প্রায়োরিটি দেই বেশি। সেটার আলোকে চলুন বিষয়টি নিয়ে সামান্য আলোচনা করি।
বল যত পুরোনো হয়, পিচে সে ততটা গ্রিপ খুজে নেয়। লিটন মাসল পাওয়ার ইউজ করে শটস খেলে সফলতা পেয়েছে, এমনটা দেখা গিয়েছে খুব কম। সফট ফ্লিকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে, অথবা রোল দ্য রিস্ট ওভার দ্য বল হুকে স্কয়ার লেগ বা ফাইন লেগে, স্কয়ার কাটে ডিপ পয়েন্ট দিয়ে, ডাউন দ্য উইকেটে বোলারের মাথার উপর দিয়ে, লিটনের বাউন্ডারি শটের বেশিরভাগের ধরনই এমন।
এমনকি সাবলাইম টাচ বলে অভিহিত করা কভার ড্রাইভেও এক্সট্রা কোন ফোর্স সে জেনারেট করে না। ক্লাসিক ওয়ে টু গেট দ্য বাউন্ডারি যাকে বলে।
তো, মিডল ওভারগুলোতে যেটা হয়, ফিল্ড সেট আপ স্পিয়ার্ড হয়ে যাওয়ায় বাউন্ডারি অপশন কমে যায়, স্পিনাররা ম্যাচ আয়ত্বে নেয়ার চেস্টা করে, পিচে বল পড়ে তুলনামূলক স্লো আসে ব্যাটে। এমতাবস্থায় বাউন্ডারি পেতে হলে ব্যাটসম্যানকে তার শটসে এক্সট্রা পাওয়ার জেনারেট করতে হয়।
পাওয়ার প্লেতে একটা ফাস্ট বোলারের বিপক্ষে যে লফটেড শটটা এক বা দুই বাউন্সে চার হয়, সেই সেইম টাইমিং শটে বলটা সীমানায় কোন ফিল্ডারের তালুতে জমা পড়ে মিডল ওভারে। মিডল ওভারগুলোতে তাই নিয়মিত বাউন্ডারি পেতে হলে এমন ব্যাটসম্যান দরকার যে টাইমিংয়ের পাশাপাশি এক্সট্রা ফোর্স দিতে পারবে বলকে। মাসল বা রিস্ট পাওয়ার? হ্যাঁ, কিছুটা তেমনই।
এখন আসি লিটনের স্পিন বল খেলার কৌশলে। লিটন মিডল ওভারে স্পিন ভালো খেলে বলে দাবী করা হয়। ওয়ানডে বা টেস্ট ক্রিকেটের জন্য উত্তরটা হ্যাঁ, কিন্তু টি২০ ক্রিকেট যেখানে রানের চাকা দুরন্ত রাখার প্রথা প্রচলিত, সেখানে লিটনের স্পিন ভালো খেলার তকমাটা যায় না। মাঝব্যাটে টাইম করা বলটিও তাই বাউন্ডারি রাইডারের হাতে জমা পড়ে, অথবা আপাত সুন্দর ফ্লিকটি মাঠ পার হয় না, চেক শটের মত পাওয়ার প্লে থিংস হালে পানি পায় না মিডল ওভারে।
উদাহরন তো আজকের ম্যাচে লিটনের আউটটিই! খুজলে স্পিনের বিপক্ষে তার এমন বহু আউট পাওয়া যাবে, অথচ পাওয়ার প্লেতে এই সেইম শটটিকেই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা বলে চালিয়ে দেয়া যেত!
একজন মোলায়েম হাতের টাইমার, যে কিনা পেস বলে হিট থ্রু দ্য লাইনে স্বচ্ছন্দ, যার ভালো ইনিংসগুলোর প্রায় সবটাই ওপেনার হিসেবে, এবং যে কিনা ওপেনিং পজিশনে খেলেই দলের সবথেকে বেশি স্ট্রাইক রেটের মালিক, তাকে তথাকথিত কম্বিনেশনের নামে, ভ্রান্তিপূর্ন স্পিন পারদর্শী ব্যাটারের তকমায় নিচে নামিয়ে খেলানোর সিদ্ধান্ত অতীব ত্রুটিযুক্ত, প্রকারন্তরে ভুল!
স্পিনের বিপক্ষে ছয় বলে ছয় রান নেবার ক্ষমতাকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আহামরি ভাবার কোন কারন নেই। উদ্দেশ্য যদি এটাই হয়, তাহলে বলতেই হচ্ছে, ডিফেন্সিভ ক্রিকেট খেলার উদ্দেশ্য নিয়েই নামবে টিম টাইগার্স। ডাউন আন্ডারে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট পুরোটাই ব্যাটসম্যান গেইম। অবশ্য সাকুল্যে ১৬০ রান তোলাই যাদের লক্ষ্য, তারা চাইলে মিডল ওভারে ডিফেন্সিভ ক্রিকেট খেলার বিলাসিতা দেখাতেই পারে। চলমান প্রস্তুতি তো আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য নয়, টাইগার্সদের ভাবনায় যে পরের বিশ্বকাপ