শেখার শেষ নেই। শেখার বয়স নেই। আর সেই শিক্ষাটা যেহেতু শিল্পের তাহলে তো সেখানে কোনো সীমা পরিসীমা থাকার কথা নয়। শেন ওয়ার্নকেও তো নিজের বাড়িতে বসিয়ে হাতে ধরিয়ে লেগস্পিন শিল্পটা একটু শিখিয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং আব্দুল কাদির।
তেমনই একটা দৃশ্যের অবতারণা হল ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে। ম্যাচের শেষ তখন। শেষ ওভারে গেলেও ম্যাচটা বেশ ভাল ভাবেই জিতে গেল পাকিস্তান। তবে, এই হারের মধ্যেও আলো কাড়লেন লিটন কুমার দাস।
ম্যাচ শেষে তাঁর সঙ্গী হলেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। সময়ের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটার। আর নান্দনিকতায় আজকের ক্রিকেটে তো বাবরের ওপরে কোনো কথাই নেই। লিটনের ব্যাটও তো আঁকতে চায় নিজস্ব মোনালিসার ছবি। বাবরের প্রতিটা কথাই তো তাঁর জন্য আপ্ত বাক্য।
এখানে লিটন আসলে নীরব শ্রোতা। আর দু’পাশ থেকে বলে যাচ্ছেন বাবর ও রিজওয়ান। যেন কোনো কোনো শীষ্যের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন গুরু। এমনই একটা ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে পাকিস্তানের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে।
ভিডিওতে বাবর আজমকে লিটন দাশের উদ্দেশ্যে বলতে দেখা যায়, ‘নিজের ভিতরের বিশ্বাসটা সব সময় ধরে রাখার চেষ্টা করো। বাইরের মানুষ যেকোনো কিছুই বলতে পারে। কিন্তু তুমি জানো তোমার সেরাটা কি, তাই বাইরের কথায় কান না দিয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করো।
বাবর আজমের পর লিটন দাশকে মোহাম্মদ রিজওয়ানের সাথে কথা বলতে দেখা যায়। যেখানে রিজওয়ান লিটনকে বলেন, ‘ভাল সময় খারাপ সময় আসতে পারে তবে আমি সব সময়ই কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বাস করি। পরিশ্রম করবে বিপরীতে ভালো ফল অবশ্যই মিলবে। ম্যাচে ক্যাচ উঠবে আবার রানও করবে, তোমার সব সময়ই রান করার দিকে মনোযোগ ধরে রাখতে হবে।’
জীবনের উত্থান-পতন আছে। সেটা ক্রিকেট জীবনেও সত্য। রিজওয়ান তাই বলেন, ‘তোমার হয়তো এমন কিছু ইনিংস আসবে যেখানে তুমি খুবই বাজে খেলবে, আবার এমন কিছু ইনিংসে ব্যাটিং করবে যেখানে সব বল তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী খেলতে পারবে। ওই ইনিংস গুলোকে বড় করার চেষ্টা করো যথাসম্ভব।’
বাজে সময়ের মধ্যেও নিজেকে ম্যাচের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। রিজওয়ান বলেন, ‘নিজের ভেতরের রিস্টার্ট বাটন চাপো, আগের সব কিছু ভুলে যাবে। খেলায় ০ হবে, ১০ হবে, সেঞ্চুরি হবে। ড্রেসিংরুমে যদি নিজেকে ভিন্ন বানাতে পারো তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে। তখন সেখানে অনেকে এমন হবে যারা সাকিবের মত মানসিকভাবে শক্ত। ক্যারিয়ারে এমন ১০ ইনিংস যাবে যেখানে আমি সব করে ফেলতে পারব, আবার এমন ১০ ইনিংস যাবে যেখানে কিছু করতে পারব না। যে বড় প্লেয়ার হবে সে এই ২০ ইনিংসে ৪ বার ফ্লপ হবে, ১৬ বার জিতবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে লিটন এমনিতেই নিজেকে পাল্টে ফেলেছেন অনেকটাই। নিজের উইকেটের গুরুত্ব বুঝতে শিখেছেন। হয়তো এবার দুই গ্রেটের ছোয়ায় নিজেকে আরও বেশি পরিণত করে তুলতে পারবেন।