১৬ এপ্রিল, ১৯৮৪ সাল।
সামরিক শাসনে অতীষ্ঠ ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে তখন উত্তাল। দাবী একটাই- অবাধ, সুষ্টু ও নিরেপক্ষ নির্বাচন। বিখ্যাত ‘ডাইরেটাস জা’ মুভমেন্টে ব্রাজিলের ক্যাথিড্রাল স্কয়ারে প্রায় পনের লক্ষ মানুষের এক বিশাল সমাবেশ।
বক্তৃতা দিতে আসবেন, আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্র ও ব্রাজিল ফুটবল দলে ৮২’ বিশ্বকাপের অধিনায়ক। প্রায় পঞ্চাশের বেশি টিভি- চ্যানেল, রেডিওর সাংবাদিকগণ উপস্থিত ক্যাথিড্রাল স্কয়ারে; ব্রাজিলের কয়েক মিলিয়ন মানুষও টিভির পর্দায় বসে আছে নেতার দিকনির্দেশনা অপেক্ষায়। মানুষটি ময়দানে এসেই নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দিয়ে সামরিক জান্তা সরকারকে তুলোধুনো করে বলে গেলেন, ‘যদি দেশ থেকে সামরিক শাসন উচ্ছেদ করা না হয়, তবে আমার মত আপনেরা যারা প্রতিবাদমুখর হয়েছেন সবাইকে দেশ ছেড়ে ইউরোপে চলে যেতে হবে।’
প্রতিবাদের আগুনে ঘিঁ ঢালার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেদিন প্রিয় মাতৃভূমির বাঁচানোর জন্য সঙ্গ সঙ্গে শপথ নিয়েছিলেন প্রিয় তারকাকে দেশ থেকে চলে যেতে না দেয়ার। কিন্তু,সামরিক সরকার তার কথা একটু সায়ও দেননি । অভিমানে চলে গেলেন ইতালিতে, ফিওরেন্টিনার জার্সিটা গায়ে জড়ালেন! লা ভিওলাদের জার্সিতে তেমন সফল হতে না পারলেও, নিজের একক জনপ্রিয়তায় ঠিকই পাল্টে দেন ক্লাবের লিগ্যাসি। বলছি সক্রেটিসের কথা। না সেই গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস না। আশির দশকে ব্রাজিলে মন মাতানো ফুটবল খেলে সেই দেশের সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার লড়াই করে ন্যাশনালি হিরো বনে যাওয়া ফুটবল ইতিহাসেরর সর্বকালেরই অন্যতম সেরা অ্যাট্যাকিং মিডফিল্ডার ডা. সক্রেটিসের কথা বলছি !
ফুটবল ক্যারিয়ারে অর্জনের কথা বললে তাঁর ঝুলিটা একেবারে শূন্য ! বড় কোন ব্যক্তিগক নেই, দলগত শিরোপার কথা বললে বিশ্বকাপ বা কোপা আমেরিকা তো অনেক দূর নেই কোন লিগ শিরোপাও।
তারপরও তিনি সেরা! সাম্বা দেশে মানুষের হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা। ভবঘুরে ন্যায় অথচ মায়াবী প্রায় একরাশ দাড়িভর্তি মুখ, আইকনিক হেয়ারব্যান্ড, চোখের মধ্যেও এক অদ্ভুত শীতলতা এই সক্রেটিস ছিলেন বরাবর অন্য রকম। মাঠের খেলায়ও কম ছিলেন না। অসাধারণ সব পাস, পার্ফেক্ট ডিসিশন মেকিং, ভিশন,বল পজিশন এবং স্ট্রেংথ সবমিলে ছিলেন কমপ্লিট মিডফিল্ডার। অনেকে বলে থাকে, লিজেন্ড জিকো কিংবা ফ্যালকাও নয় ৮২’ বিশ্বকাপে ব্রাজিলে দলের প্রধান নিউক্লিয়াসও ছিলেন সক্রেটিস।
তাইতো ব্রাজিলিয়ান ফুটবল মিউজিয়াম হল অব ফেমে তাঁর নামটা আছে অনেক উপরেই। ফিফার সেরা একশো ফুটবলারে তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায় তার নাম। ফুটবল ওয়ার্ল্ড সকার- গেল শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের তালিকায় তার অবস্থান একষট্টি। ২০০৪ সালে দ্য ব্ল্যাক ডায়মন্ড ফুটবল সম্রাট পেলের করা ‘দ্য হ্যান্ডেড লিভিং লিজেন্ড’ ফুটবলারের তালিকায়ও নাম আছে তাঁর।
কিন্তু চাইলে সক্রেটিস হতেও পারতেন পুরোদস্তুর এক ডাক্তার, যদিও হয়ে গেলেন ইতিহাসের অন্যতম সেরার ফুটবলার। অবশ্য একেবারে ডাক্তারি ছেড়ে নন ; ক্লাবে বোটাফোগোতে যখন খেলতেন তার পাশেই সমানতলে ডাক্তারি পড়াও চালিয়ে গেছেন! ১৯৫৪ সালে সক্রেটিস জন্মের দশ বছর পর সোকলড গনতান্ত্রিক মার্কিনীদের মদদে ব্রাজিলের বাম ঘেষা প্রেসিডেন্ট জুয়াও গুলারের সরকারকে উৎখাত করেই প্রতিষ্ঠিত হয় একুশ বছরের সামরিক জান্তা সরকার। তখনও সক্রেটিস ক্রফোরের ‘ফারেনহাইট ৪৫১’ দেখেননি; কিন্তু প্রত্যক্ষই দেখেছেন বাবা রুইমুন্ডোর কান্না! হ্যা, কিশোর বয়সেই তার মনে ছাপ রেখে গিয়েছিল, বাবার সামরিক সরকারের ভয়ে বহু যত্নের তৈরী করা লাইব্রেরী হতে একের পর এক বই জ্বলন্ত চুল্লিতে ফেলে দেওয়া! কথাটা নিজেই বলেছেন।
মৃত্যুর মাসখানেক আগেই ব্রাজিলিয়ান টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সক্রেটিস বলেন, ‘১৯৬৪ সালের এক সামরিক ক্ষত আমাকে অনেক পোড়ায়। যখন দশ বছর বয়স আমার, বাবাকে দেখেছি প্রিয় বলশেভিক বইগুলো পুড়িয়ে ফেলতে! সেই থেকে রাজনীতি নিয়ে আমার আগ্রহ। আসলে ফুটবলে আসা আমার জন্য দুর্ঘটনায় বলা যায়। আমারর চোখগুলো সবসময় খোলা থাকে দেশের অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে।’
সক্রেটিসের জন্ম ব্রাজিলের অন্য মহাতারকাদের ন্যায় দারিদ্র পরিবারে হয়নি;বরং স্বশিক্ষিত বুদ্ধিজীবী বাবার পরিবারে আলোকিত করেই প্রথম সন্তান হয়ে জন্ম নেন তিনি। ১৯৫৪ সালের ১৯ই ফেব্রুয়ারি নর্থ ব্রাজিলের পার রাজধানীর বেলেম শহরে জন্ম হয় সক্রেটিসের। বেলেম জায়গাটি ব্রাজিলের সাও পাওলো থেকে প্রায় ২৯০ কি. মি. উত্তর- পশ্চিমে অবস্থিত। সাধারণত ব্রাজিলের বেশি ভাগ মধ্যবিত্ত মানুষদের বসবাস এই অঞ্চলে। ব্রাজিলের অন্যসব অঞ্চলের তুলনা এখানকার মানুষদের শিক্ষার হারও বেশি।
ছেলেবেলায় পাড়ার বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলে নামডাক পেলেও; সক্রেটিস পড়াশোনায়ও ছিল বেশ পটু। যদিও ফুটবলটাই ছিল তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ! বিশ বছর বয়সে নাম লেখালেন স্থানীয় ক্লাব বোটাফোগাতে। তবে,পেশাদার ক্লাবের ফুটবল খেলাও দমাইতে পারেনি তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন। ফুটবলের পাশাপাশি চালিয়ে যান পড়াশোনা; স্কুল- কলেজের গন্ডিটুকু পেরিয়ে পাড়ি জমান মেডিকেলেও।
ক্লাব ফুটবলে ক্যারিয়ার, সামরিক জান্তাবিরোধী আন্দোলন এবং জাতীয় দলে অভিষেক। এর ফাঁকেই সবার অজান্তে সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিবেরাও প্রিতো মেডিকেল অনুষদে নিয়মিত অধ্যয়নও করেন। সেখানেই সবার অগোচরে একজন প্রফেশনাল ফুটবলার একাধারে মেডিসিন ও সাইকিয়াট্রিক ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। ভাবুন তো, ঠিক কতটা প্রতিভারই অধিকারী ছিলেন সক্রেটিস!
বোটাফোগাতেই পাঁচ বছর খেলে পাড়ি দেন ব্রাজিলের বিখ্যাত করিন্থিয়াস ক্লাবে। মূলত ক্যারিন্থিয়াসের হয়েই সক্রেটিস ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কাটান।এখানে এসেই বিশ্বব্যাপী তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মিডফিল্ডার হয়েও ৬ বছরে করিন্থিয়াস ক্লাবে ২৯২ ম্যাচে গোল করে ১৭২টি ! কিন্তু, করিন্তিয়াসে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন অন্য একটি কারণে। এই ক্লাবের হয়েই সক্রেটিস লড়াই করেছিলেন সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে। ব্রাজিলিয়ান গনতন্ত্রকামী জনতাদের নিয়ে করিন্থিয়াসেই গড়ে তুলেন ‘করিন্থিয়াস ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট’।
ক্লাবের হয়ে যতটাই দাপট দেখিয়েছিলেন; ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধেও বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিলেন সামনের কাতারে।১৯৮২ সালে ব্রাজিলিয়ান লিগ কাপের ফাইনালে সক্রেটিসের নেতৃত্বেই করিন্থিয়াসস তাদের জার্সি তে ‘Democracia’ শব্দটি লিখে খেলতে নামে। যা জান্তা সরকারের ভিতও নাড়িয়ে দেয়! একটি ফুটবল ক্লাবের জান্তাবিরোধী এই লড়াই সেদিন আলোড়ন তুলে বিশ্বব্যাপীও।
১৯৭৯ সালে ব্রাজিল জাতীয় দলে সক্রেটিসর অভিষেক হয়। অসাধারণ নেতৃত্বগুণের কারণে তার মাত্র দেড় বছর পর দলের ক্যাপ্টেন বনে যান। ৮২’ বিশ্বকাপ খেলতে আসেন ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর দলটাকে নিয়ে। তেলে সানতনা ম্যানেজার; মাঝমাঠে এডের, ফ্যালকাও এবং সক্রেটিস; সেন্টার ফরোয়ার্ড সের্জিইনহো আর জিকো ; ডিফেন্সে লুইজিনহো, অস্কার, সেরেজো ; গোলকিপার ভালদির পেরেজ- পুরো দলটাই যেন একটি নক্ষত্রপুঞ্জ। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ স্কোয়াড দেখে ফ্ল্যামেঙ্গো ক্লাবের এক লয়্যাল ফ্যান যিনি ৮২’ বিশ্বকাপের খেলাও মাঠে গিয়ে দেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘নেইমার অসাধারণ এক ফুটবলার। ব্রাজিলের সেরা ফুটবলার। তবে তাঁর ১৯৮২ বিশ্বকাপের প্রথম একাদশে নিশ্চিত জায়গা হত না।’
জুকা কেফর ব্রাজিলের বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার। লাতিন আমেরিকায় তার মত ফুটবলকে এত সুন্দরভাবে বর্ণনা করতে পারত খুব মানুষ। কথিত আছে যে, শুধু জুকার কেফৌর কথা শোনার জন্য একসময় ব্রাজিলের অনেক তরুণ মাঠে গিয়েও খেলা দেখত। সেই জুকা বলেন, ‘ফুটবলকে যদি গানের রক ব্যন্ডের সাথে তুলনা করা হয় তব এই দলটা হবে বিয়েটলস।’
ব্রাজিলের সেই দলটার মূলমন্ত্র ছিল যেন সুন্দর ফুটবল খেলা। ফুটবল তাদের প্রত্যেকের কাছে শুধু খেলা নয় ; ছিল সাধনা। দলে এত তারকার মাঝে ফুটবল ফ্যানদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্ধুতে ছিলেন সেই সক্রেটিসই। প্রায় ছয় ফুট সাড়ে তিন ইঞ্চি উচ্চতা, মুখভর্তি দাড়ি, মাথায় রিবন,কাধ পর্যন্ত কোকড়ানো ঝাকড়া চুল। সবমিলিয়ে সবার চোখের মধ্যমণি সক্রেটিস। গ্রুপ লীগের ৩ ম্যাচে স্কটল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং প্রশান্ত মহাসাগরে ওশেনিয়া অঞ্চলের নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে সহজ জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে সেলেসাওরা।
দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম ম্যাচে সুপার ক্লাসিকোতে রাইভাল আর্জেন্টিনাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে, দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রাজিল মুখোমুখি হয় ইতালির। খেলা শুরুর মাত্র পাঁচ মিনিটে পাওলো রসির গোলে ইতালির লীড, বারো মিনিটের মাথায় শোধ করে সক্রেটিস। পঁচিশ মিনিটে পাওলো রসির গোলে ইতালি আবারো লীড নেয়; আটষট্টি মিনিটে গোল করে এবার সমতায় আনে ফ্যালকাও। তার মাত্র ছয় মিনিট পরেই পাওলো রসি হ্যাট্রিক করে ব্রাজিলের স্বপ্ন চুরমার করে দেয়। ব্রাজিলীয় সৌন্দর্য থেমে যায়, এক পাওলো রসির অংক কষা ফুটবলের কাছে। পুসকাস এবং ইয়োইহান ক্রুইফের মত কান্নায় মাঠ ছাড়ে সক্রেটিস। ব্রাজিলের এই হার মেনে নিতে পারেনি ফুটবল ভক্তরা। তাই হয়তো ৫ জুলাই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্দিয়ান শিরোনাম করে, ‘সুন্দর ফুটবলের করুণ মৃত্যুর দিন।’
৮৬’র বিশ্বকাপেও খেলেন; তবে এবার অধিনায়ক নয়। এই বিশ্বকাপে সক্রেটিস অনেক ক্লান্ত বলা যায়! আগের বিশ্বকাপের সব সেরা খেলোয়াড়রা ও বয়সের ভারে যেন নুইয়ে পড়ে।তবে গ্রুপপর্বে ব্রাজিল খেলে চ্যাম্পিয়ন দলের মতই।যদিও ব্রাজিল বেশি দূরও যেতে পারেনি। ফ্রান্সের সাথে নাটকীয়ভাবে কোয়ার্টার ফাইনালে ট্রাইবেকে হেরে গিয়ে বিদায় নেয়। পরাজিত হয়েই প্রস্থান ঘটে ফুটবলের অন্যতম ট্রাজিক নায়কের। বড় কোন শিরোপা ছাড়া ব্রাজিল দল থেকে বিদায় নেন সক্রেটিস। সেলেসাও জার্সি গায়ে সাত বছরে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে ৬০ ম্যাচে গোল করেন ২২টি। হলুদ জার্সি রিবন পড়ে যেদিন শেষবার খেলতে নামেন তারে নামের পাশে অসাধারণ এক পরিসংখ্যান – তাঁর নেতৃত্বে ৩৫ ম্যাচে ৩২ ম্যাচই ব্রাজিল অপরাজিত। হার মাত্র ২টি!
সক্রেটিস ছিলেন এক রহস্যময় চরিত্র। কখনও ফুটবল মাতিয়েছেন, আবার কখনও গনতন্ত্রকামী মানুষ সঙ্গে নিয়ে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করে সংগ্রাম করেছেন ; আবার ফিদেল কাস্ত্রো,চে গুয়েভারা- কে আদর্শ মেনেও ধীরে ধীরে নেশায় নেশায় মত্ত থেকে নিজেকেও শেষ করে দিয়েছেন। ফুটবল নিয়ে মধ্যমাঠ যেমন চষে বেড়িয়েছেন, বক্তৃতার ময়দানেও ছোট ছোট কথার মালা গেথে কিভাবে তা দিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকাশ করতে হয় তাতেও এক্সপার্ট ও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ইতালিতে একবার এক সাংবাদিক তখনকার ইতালির সেরা প্লেয়ার মাজ্জেলা আর রিভোইরার মধ্যে কে সেরা তাকে জিজ্ঞেস করে। সক্রেটিসের জবাব, ‘দুঃখিত। দুজনের খেলা দেখার সময়ও হয়নি আমার। নিজের খেলা ছাড়া আমি ইতালির শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে পড়াশোনা করি।’
হ্যাঁ, সক্রেটিস এমনই ছিলেন। যিনি আজন্ম লড়ে গেছেন শোষিত শ্রেণীর মানুষদের হয়ে। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পড়ার আগ পর্যন্ত অবহেলিত-নিপীড়িত মানুষদের হয়ে কথা বলেছেন।নিজের অবসরের পর পুরোদমে একজন ডাক্তার ও ফুটবলবোদ্ধা হিসেবে মিডিয়ায় কাজ করেন। ফুটবলের পাশাপাশি সমাজের অন্যায় অবিচার নিয়েই নিয়মিত লিখতেন তার কলামে।২০১১ সালে শেষ দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হোন। পরের মাসেই যকৃত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে কাটান আরও ১৭ দিন।
পহেলা ডিসেম্বর সাও পাওলোর এক হোটেলে পরিবারে সবাই মিলে ফুড পজিনিংয়ের শিকার হয়ে যান- যা পরে সেপটি সক তৈরী করে। পরিবারের বাকী অন্য সদস্যরা বেঁচে গেলেও মাত্র ৫৭ বছর বয়সেই সবাইকে কাঁদিয়েই পৃথিবী মায়া ত্যাগ করে চলে যায় দুনিয়ার গনতন্ত্রকামী মানুষের এক আইকন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। তার মৃত্যুতে ব্রাজিলে সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ বলেন, ‘ব্রাজিল তার সবচেয়ে পছন্দের ছেলেগুলোর মধ্যে একজনকে হারিয়েছে। মাঠে তার প্রতিভা ও অসাধারণ পাসের মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন ফুটবল জিনিয়াস। মাঠের বাহিরেও তিনি ছিলেন এক সক্রিয় নেতা। ব্রাজিল এবং তার জনগণের সাথে তার সম্পর্ক ছিল অন্যরকম।’
দ্য গ্রেট রোনালদো লিমা টুইট করেন, ‘দুঃখ দিয়ে শুরু হল দিন। ভালো থাকুন, ডা. সক্রেটিস।’