‘সিকান্দার’ নামটির বাংলা অর্থ কি জানেন তো? নামটির বাংলা অর্থ করলে দাড়ায় ‘দ্রুতগামী’। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আজ ৪৮ বলে ৮২ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেললেন এই ব্যাটার। স্ট্রাইক রেট ১৭০.৮৩। অল্প বল খেলে দ্রুত রানের খাতা এগিয়ে নিয়ে সিকান্দার রাজা তাঁর নামের সুবিচার করলেন বলাই যায়।
বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার রাউন্ডের খেলায় আজ কেবল সিকান্দার রাজার রাজত্ব দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। পাঁচটি ছয় এবং পাঁচটি চারে তিনি এই দুর্দান্ত ইনিংসটি সাজিয়েছেন। এই ক্রিকেটারের দারুণ ইনিংসটিতে ভর করেই জিম্বাবুয়ে কুড়ি ওভার শেষে ১৭৪ রান করতে সক্ষম হয়। যা এবারের বিশ্বকাপের আসরে এখন পর্যন্ত দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর। তাছাড়া ব্যক্তিগত রানের দিক বিবেচনায় সিকান্দারের রানটাও এখন অবধি সর্বোচ্চ।
১৭৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস থামে বিশ ওভারে ১৪৩ রানে। জিম্বাবুয়ে ৩১ রানের জয় পায়। দলকে জেতানোর পাশাপাশি আজকের ইনিংস দিয়ে রাজা তাঁর ব্যক্তিগত রেকর্ডকেও সমৃদ্ধ করেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনো জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এখন রাজার দখলে। ২০০৭ সাল থেকে এই রেকর্ডটি ছিল ব্রেন্ডন টেলরের দখলে। যিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০ রান করেছিলেন।
অথচ শুরুটা একদমই ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। শুরুতেই রেগিস চাকাভা ডাক মেরে সাঁজঘরে ফেরেন। আরেক ওপেনার ক্রেইগ আরভিনও মাত্র নয় রান করে আউট হন। সিকান্দার রাজা ছাড়া দলের আর কেউই বিশের ঘর পেরোতে পারেনি। দলের সংকটের সময়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট হাতে নেমে দলের হাল ধরেন এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার। আয়ারল্যান্ডের বোলারদের একাহাতে তুলোধুনো করেছেন সিকান্দার রাজা। পাশাপাশি বল হাতে মাত্র তিন ওভার বল করে একটি উইকেটও শিকার করেন এই জিম্বাবুইয়ান। আজকের দিনটিকে একেবারে নিজের করে নিয়েছেন তিনি।
অবশ্য ৪৮ বলে ৮২ রানের ইনিংসটি সিকান্দার রাজার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর ক্যারিয়ার সেরা স্কোরটি ৮৭ রানের। পাকিস্তানে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার এখন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের বড় সম্পদ। জিম্বাবুয়ের জার্সিতে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১৭ টেস্ট, ১২৩ টি ওয়ানডে এবং ৫৮ টি টি-টোয়েন্টি।
অথচ এই রাজাই এগারো বছর বয়স থেকে মনেপ্রাণে যুদ্ধ বিমানের পাইলট হতে চাইতেন। মেধাতালিকায় টিকে বিমান বাহিনীর কলেজে ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন চোখের পরীক্ষায় অনুপযুক্ত হওয়ায় তাঁর পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যায়। তারপর পরিবারের সাথে জিম্বাবুয়েতে অভিবাসিত হন তিনি। সেখানেই তিনি ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা খুঁজে পান।
সিকান্দার রাজার জন্য এক স্বপ্ন ছেড়ে অন্য একটি স্বপ্নকে লালন করার পথটি সহজ ছিলোনা নিঃসন্দেহে। কিন্তু দিনশেষে ঠিকি তিনি জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের রাজা বনে গিয়েছেন। একদিন তিনি ক্রিকেটার হয়ে মাঠ মাতাবেন, দেখবে পুরো দুনিয়া। তাঁর ভাগ্যে হয়ত এমনটাই লেখা ছিল। তাইতো পাইলট হবার স্বপ্নটা অপূর্ণ থেকে যায় তাঁর। তবে বিমানের পাইলট হতে না পারলেও, ব্যাট হাতে দলের পাইলটের ভূমিকায় বসে দলকে জয়ের দিকে টেনে নেয়ার ক্রিকেটীয় পাইলট তিনি ঠিকই বনে গেছেন।