ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে বুড়ো হাড়ের ভেলকিতে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেয়েছিলেন ভারতের দুই বর্ষীয়ান তারকা দীনেশ কার্তিক এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বিশ্বকাপে মাঠে নামার সুযোগ পেলেও এর মাঝেই ক্যারিয়ারের শেষের বাঁশি বেজে উঠেছে। ২০২৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য টি -টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করে তারুণ্যনির্ভর দল গঠন করতেই বেশি আগ্রহী চেতন শর্মা নেতৃতাধীন ভারতীয় নির্বাচক কমিটি।
এবারের বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগেই নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য হার্দিক পান্ডিয়াকে অধিনায়ক তারুণ্যনির্ভর দল ঘোষণা করেছে ভারত। বিশ্বকাপ ফাইনালের মাত্র চারদিন পরই তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি -টোয়েন্টিতে কিউইদের মুখোমুখি হবে ভারত। সেই সফর দিয়েই যেন ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণে নতুন যুগের সূচনা করতে চায় তাঁরা।
ইতোমধ্যেই বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মাকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে, লোকেশ রাহুলও থাকছেন না পারিবারিক কারণে। তাঁরা ভাল খেললেও নতুনদের বাজিয়ে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না নির্বাচকরা। সেই খড়গেই কাটা পড়েছেন ২০২০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ২৭ টি টি-টোয়েন্টি খেলা কার্তিক। অন্যদিকে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে চার বছর বাদে রোহিত শর্মা টি -টোয়েন্টি দলে ফেরালেও তাঁর মধুচন্দ্রিমা শেষ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বকাপের মধ্যে দিয়েই।
নির্বাচক কমিটির প্রধান চেতন শর্মা বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিনের মাঝেই বিশ্বকাপ শেষ হতে যাচ্ছে। আমাদেরকে এখনই ঠিক করতে হবে কারা বিশ্রামে থাকবে আর কারা খেলবে। কার্তিক গত কয়েক মাস ধরেই ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছে। তবে এবার সময় এসেছে নতুনদের বাজিয়ে দেখার।’
হালকা ইনজুরির পাশাপাশি বিশ্রামের অজুহাত দিলেও গত চার মাসে কার্তিক খেলেছেন মোটে ২৭ টি টি- টোয়েন্টি ম্যাচ। সেই প্রশ্নের জবাবে শর্মা বলেন, ‘মেডিকেল টিম তাঁর দেখভাল করছে। দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে এভাবে খোলাখুলি কথা বলা সম্ভব নয়। তবে বিশ্বকাপ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ সে এবং তাঁর ভূমিকায় সে ভাল খেলছে।’
তবে এটা ধরেই নেয়া যায় ২০১৯ বিশ্বকাপ শেষে ওডিয়াই দল থেকে বাদ পরার পর এবারের বিশ্বকাপ শেষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারকেও একপ্রকার বিদায় জানাতে হচ্ছে কার্তিককে। দলে বিশেষজ্ঞ কিপার হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন ঋষাভ পান্ত, ঈশান কিষাণ এবং সাঞ্জু স্যামসন। এই তিনজনকে ধীরে ধীরে ফিনিশার হিসেবে গড়ে তোলাই ভারতের পরবর্তী লক্ষ্য।
শুভমান গিলের আবির্ভাবে হয়তো রাহুলের ওপেনিং পজিশন হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। তবে তাতেও তাঁর বাদ পড়বার সম্ভাবনা কম, সেক্ষেত্রে হয়তো মিডল অর্ডারে নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে। নতুন দল গড়ার উপলক্ষ্যে ফিরে আসে পুরনো এক প্রশ্ন। রোহিত-কোহলির কি হবে?
সময়ের সাথে সাথে তো বুড়িয়ে যাচ্ছেন তারাও। ওডিয়াই বিশ্বকাপের এক বছরেরও কম সময় বাকি থাকায় তাঁদের দুজনের মূল লক্ষ্যই এখন বিশ্বকাপ এবং টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ। তবে তাই বলে এখনই টি-টোয়েন্টি ছাড়ছেন না এ দুজন, এরকমটাই জানা আছে সংবাদমাধ্যমের বরাতে।
বিসিসিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০২৩ সালে দলের মূল লক্ষ্য টি-টোয়েন্টি নয়, সেই ব্যাপারটা মাথায় রেখেই দল পুর্নগঠনে মনোযোগ নির্বাচকদের। ওডিয়াই এবং টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাঁকে ফাঁকে নতুন খেলোয়াড়দের টি-টোয়েন্টিতে বাজিয়ে দেখা হবে। কারণ ২০২৪ সালেই আবার টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ রয়েছে।’
তবে দারুণ ফর্মে থাকলেও আরও একবার উপেক্ষার শিকার হয়েছেন তরুণ ওপেনার পৃথ্বীশ। চলমান মুশতাক আলী ট্রফিতে সাত ১৯১ স্ট্রাইকরেটে ২৮৫ রান করলেও দলে সুযোগ মেলেনি তাঁর। তিনি ছাড়াও রবি বিষ্ণোইও নিজেকে অভাগা ভাবতে পারেন। কুলদীপ যাদবের পুর্নজাগরণে তিনি ছিটকে গিয়েছেন দল থেকে। একই দিনে নির্বাচকরা প্রায় চারটি দল দিয়েছেন আসন্ন নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশ সফরের জন্য। এরকমটা ভারতীয় ক্রিকেটে আগে কখনও দেখা যায়নি। তবে কি নির্বাচক কমিটির মেয়াদ ফুরিয়ে যাবার কারণেই দল ঘোষণার জন্য এত তাড়াহুড়ো?
চেতন শর্মার নেতৃতাধীন নির্বাচক কমিটিতে তিনি ছাড়াও রয়েছেন দেবাশীষ মোহান্তি, হরবিন্দর সিং এবং সুনীল যোশি। গুঞ্জন রয়েছে নতুন কমিটি দায়িত্ব নেবার পরেই নির্বাচক কমিটিতে পরিবর্তন আনা হবে।