পাকিস্তানের সোনার ডিম পাড়া হাঁস

পাকিস্তান ক্রিকেটে দু’টো জিনিসের অভাব বোধহয় কখনোই হয় নি। এক গতিসম্পন্ন ফাস্ট বোলার এবং দুই হার্ড হিটার ব্যাটার। পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসের কিংবদন্তিতুল্য সব ফাস্ট বোলারের জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে, এমন সব পাওয়ার হিটার দেখেছে পাকিস্তান ক্রিকেট যারা কিনা চাইলেই ক্রিজে দাঁড়িয়ে থেকেই বলকে সীমানা ছাড়া করতে পারেন ইচ্ছা মত। শহীদ আফ্রিদি, সাঈদ আনোয়ার, ইমরান নাজির, শোয়েব মালিক কিংবা আব্দুর রাজ্জাক থেকে শুরু করে হালের ইফতিখার, খুশদিল কিংবা আসিফ আলী। এরকম ব্যাটসম্যানের কখনোই অভাব বোধ করেনি পাকিস্তান ক্রিকেট।

কিন্তু, অভাব যেটার বোধ করেছে তাঁদের থেকে সেটা হল ধারাবাহিকতা। পাকিস্তানের এসব হার্ড হিটার ব্যাটারদের একমাত্র সমস্যা হল ধারাবাহিকতা। সেই শহীদ আফ্রিদি কিংবা ইমরান নাজির কিংবা বর্তমানের আসিফ আলীরা- এদের সবার সমস্যাই এক জায়গায় – তাঁদের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।

কিন্তু, পাকিস্তান বর্তমান দলের অধিনায়ক, বাবর আজম এটা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। বরং তিনি আসিফ আলী, ইফতেখার আহমেদ এবং খুশদিল শাহ – এই তিনজনকে যথেষ্ট সময় দিতে চান, যথেষ্ট ম্যাচ দিতে চান। যাতে তাঁরা নিজেদের জায়গা দলে পোক্ত করতে পারে, ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে।

কেননা বাবর জানেন, বর্তমান সময়ে টি-টোয়েন্টির এই যুগে মিডল অর্ডারে ঐ তিনজনের মত ব্যাটার ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের দিনে তাদের যেকোন একজনই পাকিস্তান কে ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে।উদাহরণস্বরূপ পাকিস্তানের  দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের ম্যাচের কথা উল্লেখ করেন বাবর আজম। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাঁদেরকে মিডল অর্ডার এ সেট হওয়ার জন্য আরও ম্যাচ দিতে চাই, যাতে করে তাঁরা সেট হয়ে নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারে এবং পাকিস্তানকে জেতাতে পারে!’

আসিফ আলী এই বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচে সুযোগ পেলেও মাত্র ২ রানের বেশি করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর যোগ্যতা নিয়ে যে কোন সন্দেহ নেই, সে প্রসঙ্গে বাবর বলেন, ‘আসিফ কি করতে পারে,তা আমরা আগেও দেখেছি বিভিন্ন টুর্নামেন্টে, তাছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে ওর মত সিক্স হিটার খুব কমই আছে!’

ইফতেখার আহমেদ এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যানই বলা চলে এই বিশ্বকাপে। প্রথম চার ম্যাচে ১১৩ রান, ১৩৭-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে।তার চেয়ে বড় হল, তার রান গুলো চাপের মুখে পরে করা। যেটা বাবর আজমকে বেশি সন্তুষ্ট করেছে। যদিও, বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন।

খুশদিল যদিও এখনো সুযোগ পান নি এই টুর্নামেন্টে, তবে বাবর মনে করেন,সুযোগ পেলে খুশদিলও তাঁর সক্ষমতার প্রমাণ দেবেন।

পাকিস্তান সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডিএল মেথড পদ্ধতিতে ৩৩ রানে জিতে এখন পর্যন্ত সেমির দৌড়ে টিকে ছিল। পরে অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতে নিশ্চিত করেছে সেমিফাইনাল। আগের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার হারে তাঁদের সেমিফাইনালে ওঠা সহজ হয়েছে।

বুধবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনালে তাঁদের প্রতিপক্ষ এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল নিউজিল্যন্ড। বাবর হয়ত চাইবেন, এই ম্যাচে তাঁর এই ব্যাটসম্যানরা অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেবেন। তাহলেই ২০১৭ সালের পর আবারও কোনো আইসিসি ইভেন্টের ফাইনাল খেলতে পারবে পাকিস্তান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link