সুরিয়াকুমার যাদব, দ্য রেকর্ড ব্রেকার

সান লাভার্স নামে একটি ব্যান্ড দল আছে। তাঁদের বিখ্যাত একটি গানের নাম, স্কাই হ্যাজ নো লিমিট। বাইশ গজের ক্রিকেটে সেই গানের সাথে সাদৃশ্যতা কিংবা প্রেক্ষাপট খুঁজতে গেলে একজন ক্রিকেটারের নামই আসে। তিনি সুরিয়াকুমার যাদব, সংক্ষেপে এসকেওয়াই।

সান লাভার্স নামে একটি ব্যান্ড দল আছে। তাদের বিখ্যাত একটি গানের নাম, স্কাই হ্যাজ নো লিমিট। বাইশ গজের ক্রিকেটে সেই গানের সাথে সাদৃশ্যতা কিংবা প্রেক্ষাপট খুঁজতে গেলে একজন ক্রিকেটারের নামই আসে। তিনি সুরিয়াকুমার যাদব, সংক্ষেপে এসকেওয়াই।

আরো ক্ষুদ্রীকরণ করলে, স্কাই। সেই গানের লিরিক্সের মতোই ক্রিকেটের সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যাটে রানের ফোয়ারার যেন কোনো সীমানা নেই। ব্যাট হাতে উইকেটে যখনই আসেন নিজেকে আগের দিনের চেয়ে আরো শাণিত করে আসেন। যেন নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দারুণ এক যুদ্ধে মেতেছেন। 

বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই দারুণ ছন্দে ছিলেন সুরিয়া কুমার যাদব। বিশ্বকাপেও ভাল করবেন বলেই সবার প্রত্যাশা ছিল। গৌতম গম্ভীর তো বলেই দিয়েছিলেন, এবারের বিশ্বকাপের এক্স ফ্যাক্টর হবেন সুরিয়া। প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন, তাও আবার অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিকূল কন্ডিশনে। কিন্তু সেসব পরিস্থিতি, কন্ডিশনকে যেন হাতের তুড়ি মেরে নিজের জানান দিলেন। সবার ভাবনার ঊর্ধ্বে গিয়ে খেললেন অতি মানবীয় সব ইনিংস। 

সুরিয়াকুমার যাদব এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছেন ৫ টি। আর সেই ৫ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই তিনি ফিফটি পেয়েছেন। এর সর্বশেষটি আসলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। খেললেন ৬ চার আর ৪ ছক্কায় ২৫ বলে ৬১ রানের দুর্ধর্ষ এক ইনিংস। এমন ইনিংসের পর ম্যাচসেরা পুরস্কারও গিয়েছে তাঁর হাতে। একই সাথে ৬১ রানের এ ইনিংস খেলার দিনে সুরিয়া কুমার যাদব কিছু কীর্তিও গড়লেন। 

প্রথমত, সুরিয়া এই ইনিংসের মধ্য দিয়েই এক পঞ্জিকাবর্ষে প্রথম ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১০০০ রান পূরণ করলেন। ২০২২ সালে তিনি এখন পর্যন্ত ২৮ ইনিংসে ৪৪.৬০ গড়ে রান করেছেন ১০২৬। এর আগে ভারতীয়দের মধ্যে এক বছরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল বিরাট কোহলির। ২০১৬ সালে তিনি ৬৪১ রান করেছিলেন। 

ভারতের হয়ে স্ট্রাইকরেট বিবেচনায় আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন সুরিয়াকুমার যাদব।  ২০০+ স্ট্রাইকরেট রেখে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফিফটির রেকর্ডটা এখন সুরিয়ার। এখন পর্যন্ত তিনি ৬ বার ফিফটি হাঁকিয়েছেন যেখানে তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ছিল ২০০+। এর আগে এ রেকর্ডটি ছিল যুবরাজ সিংয়ের। দুই শতাধিক স্ট্রাইকরেটে যুবরাজ ফিফটি হাঁকিয়েছেন ৫ টি। 

এবারের বিশ্বকাপে করা তিন ফিফটির তিনটিই সুরিয়াকুমার যাদব চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে করেছেন। আর এখানেও হয়েছে একটি কীর্তি। চার কিংবা তার নিচে ব্যাটিং করার দিক দিয়ে এক সিরিজ/টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ফিফটির রেকর্ড এখন সুরিয়ার একার।

অবশ্য এ রেকর্ডটি আগে সুরিয়ারই ছিল। তবে তার সাথে যুগ্মভাবে ছিলেন যুবরাজ সিং। ২০০৭ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে চারের নিচে নেম দুটি ফিফটি করেছিলেন তিনি। আর সুরিয়া কুমার যাদব এই বিশ্বকাপ শুরুর আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে দুটি ফিফটি করেছিলেন। 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচের আগেই ভারতের সেমি ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। গ্রুপ বি চ্যাম্পিয়ন হয়ে আগামী ১০ নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মাঠে নামবে ভারত। সেই ২০০৭ এর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আর কখনোই শিরোপা ছুয়ে দেখা হয়নি ভারতের। এবার কি তবে সেই খরা কাটবে?

তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে গড়া এ দলটা নিয়ে সেই স্বপ্ন দেখতেই পারে টিম ইন্ডিয়া। কারণ তাদের দলে রয়েছে বিরাট, সুরিয়াদের মতো ব্যাটার। যারা নিজেদের দিনে একাই প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। বিশেষত, সুরিয়া বর্তমানে যেমন ফর্মে রয়েছেন তাতে এক নিমিষেই পানসে একটা ম্যাচকে প্রাণ দিতে পারেন। আর সাথে ভূবি, আর্শদ্বীপের সুইং, শামির পেস তো আছেই। ভারতের সমর্থকরা তাই বিশ্বজয় স্বপ্নে বিভোর হতেই পারে। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...