অ্যাডিলেড ওভালে স্পিন ধরে বেশি। অস্ট্রেলিয়ার এই মাঠে অফস্পিনার, লেগস্পিনার- দুই ধরনের স্পিন বোলারই একটু বাড়তি সুবিধা পায়। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল অর্থাৎ ইংল্যান্ড-ভারত মধ্যকার ম্যাচটিও হবে এই মাঠে। আর এখানেই কিছুটা চিন্তার উদ্রেক হয়েছে ভারতের স্পিন বোলিং ইউনিটে।
সুপার-১২ থেকে সর্বোচ্চ ৪ টি ম্যাচ জিতেই সেমিতে এসেছে ভারত। ৪ সেমিফাইনালিস্টদের মধ্যে তাদের জয় সংখ্যায় বেশি। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই সেমিফাইনালেও অন্যতম ফেভারিট ভারত। তবে বিশ্বকাপ প্রায় অন্তিম পর্যায়ে। এখানে ফেভারিট তকমা খুব একটা কাজে আসবে না। নক আউট পর্বের খেলা। জিতলে ফাইনাল, হারলে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ- এমন সমীকরণেই এই চার দলকে খেলতে হবে। প্রত্যেক দলই স্বতঃস্ফূর্তভাবে চাইবে নিজেদের দিনে প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দিতে। তাই এখনই সময় কন্ডিশন বিবেচনায় নিজেদের একাদশ আগে ঠিকঠাক করা।
ভারতের জন্য অ্যাডিলেড ভিন্ন কন্ডিশন নয়। বাংলাদেশের বিপক্ষেই এই মাঠে খেলেছিল। কিন্তু বাকি মাঠগুলোর চেয়ে অ্যাডিলেড ওভালের কিছুটা ভিন্নতা আছে। ব্যাটারদের জন্য সুবিধা আছে। কিন্তু একই সাথে এ মাঠে স্লোয়ার বলের কার্যকারিতা তুলনামূলক বেশি। তাই টিম ইন্ডিয়াকে তাদের স্পিন শক্তি নিয়ে একটু আলাদা করে ভাবতেই হচ্ছে।
স্পিন বোলিং নিয়ে ভারতের প্রধান চিন্তার কারণ হল- তাদের স্পিনাররা কেউই তেমন পারফর্ম করতে পারেনি এ টুর্নামেন্টে। রবীন্দ্র জাদেজার ইনজুরির কারণে তাঁর বদলে দলে আসা অক্ষর প্যাটেল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ছিলেন বেশ খরুচে। ৩.২ ওভারে হজম করেছিলেন ৪০ রান। এ ছাড়া, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১ ওভারেই দিয়েছিলেন ২১ রান। টুর্নামেন্টে একমাত্র নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ভাল বোলিং করলেও এখন পর্যন্ত নিজের বোলিং কোটা কোনো ম্যাচেই পূরণ করতে পারেননি।
দলের আরেক স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর অতীত ফর্ম দেখে তাঁকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত খুব একটা ভাল বোলিং করতে পারেননি তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু বড় দলগুলোর ব্যাটারদের বিপক্ষে ঠিকঠাক ভাবে জ্বলে উঠতে পারছেন না তিনি।
অক্ষর প্যাটেল আর অশ্বিন- এখন পর্যন্ত ঘুরে ফিরে ভারত একাদশে এ দুজনকেই দেখা যাচ্ছে। একাদশের বাইরে স্পিনার বলতে আছেন শুধু যুজবেন্দ্র চাহাল। ভূবনেশ্বর কুমারের পরে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট তাঁর। কিন্তু কখনোই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলা হয়নি চাহালের। গতবার তো বিশ্বকাপ দলেই ছিলেন না। অস্ট্রেলিয়ার মাটি পেসারদের জন্য যেমন স্বর্গরাজ্য, ঠিক তেমনি লেগ স্পিনারদের জন্য উর্বর ভূমি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচেই দেখা যায়নি এই লেগিকে। তবে কি সেমির ম্যাচেই চাহালকে একাদশে দেখা যাবে?
এমন প্রশ্নে ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড় সরাসরি কিছু বলেননি। তবে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, স্কোয়াডে থাকা ১৫ জনের জন্যই একাদশে ঢোকার পথ খোলা আছে। তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাডিলেডে স্পিন ধরে, এটা আমাদের মাথায় আছে। তবে আমরা এই মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে যে ম্যাচটি খেলেছিলাম, সেই উইকেটটি ততটাও স্পিন সহায়ক ছিল না। কিন্তু যতদূর জানি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের ভিন্ন উইকেটে খেলতে হতে পারে।’
এ ছাড়া অক্ষর প্যাটেল, অশ্বিনকে নিয়েও অতটা চিন্তিত নন বলে জানিয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়। তিনি বলেন, ‘আগের ম্যাচেই অশ্বিন দারুণ বল করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি ওভারে অক্ষর প্যাটেলও ভাল বল করেছে। যেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই ওদের নিয়ে আমি অতটা চিন্তার কিছু দেখি না। আমরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেরা একাদশটাই নামাব।’
মূলত ভারত একাদশের বোলিং লাইন আপে প্রতি ম্যাচেই দারুণ বল করছে পেসাররা। বিশেষত, আর্শদ্বীপ ধারাবাহিকভাবে ভাল করছেন। আর তাঁর সাথে ভূবির সুইং, শামির পেসের সংমিশ্রণ ভারতের ম্যাচ জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখছে। তাই আলাদা করে স্পিনারদের উপর খুব একটা দায় আসছেও না। সামগ্রিক ফলের কারণে স্পিনারদের ব্যর্থতা তাই আড়ালেই থাকছে। যদিও নির্দিষ্ট দিনে পেসাররা খারাপ করলে দায়িত্বটা নিতে হবে স্পিনারদেরই। এখন অশ্বিন, অক্ষর প্যাটেলদের দিয়ে সে রকম পরিস্থিতিতে ভারত কতটা উপকৃত হবে, সেটিও প্রশ্নের বিষয়। কারণ এখন পর্যন্ত, ভারতের এ দুই স্পিনার একই সাথে জ্বলে উঠতে পারেনি।
আগামী ১০ নভেম্বর অ্যাডিলেড ওভালে বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায় মুখোমুখি হবে রোহিত আর বাটলারের দল। দুই দলের সামনেই ফাইনালে ওঠার সুযোগ। ২০১৪ সালে শেষবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল ভারত, আর ভারতের মাটিতে হওয়া ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলেছিল ইংল্যান্ড। যদিও, দুই দলই তাদের শেষ ফাইনালটি হেরেছিল। এখন দেখার পালা, কোন দল শেষ ফাইনালিস্ট হয়ে মেলবোর্নের অন্তিম মহারণে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।