প্রতিভা বনাম পরিশ্রম

ছোট্ট একটা ভিডিও, এরই মধ্যে দেখা হয়েছে চল্লিশ লাখের বেশি বার। কেন? কারণ হার্শা ভোগলে অসাধারণ কিছু কথা বলেছেন, যেটা আমাদের প্রত্যেকেরই জানা জরুরি।

আমরা যারা মাঝারি মানের মানুষ, প্রতিভা কি সামর্থ্যে; ছোট থেকেই আশপাশের মানুষের বকুনি খেয়ে বড় হয়েছি। অমুকের ছেলে কী ট্যালেন্ট, অমুকের মেয়ে কত কিছু জানে, আর তুই!

হার্শা বলছেন, জীবনের একটা পর্যায়ে ট্যালেন্ট আর অ্যাবিলিটি সবচেয়ে অর্থহীন দুটো গুণ হয়ে যায়। ট্যালেন্টটাই আসল কথা না। আপনি কী করতে পারেন তাতে কিছুই যায় আসে না। প্রশ্নটা হল, আপনি কী করছেন।

জীবনের উঠতি বয়সে ব্যর্থ হওয়াও খুব জরুরি। ব্যর্থ না হলে আপনি শিখবেন না কীভাবে সফল হতে হয়। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কাছের দুই বন্ধু এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। শচীন টেন্ডুলকার ও বিনোদ কাম্বলি।

মাত্র ২২ বছর বয়সে কাম্বলির টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল, কোর্টনি ওয়ালশের বাউন্সার একদমই খেলতে পারছিলেন না জন্য। আর জীবনের প্রথম টেস্ট ইনিংসে ওয়াকার ইউনিসের বাউন্সারে ভূপাতিত টেন্ডুলকার এরপর ব্যাটিং রেকর্ডের এভারেস্ট জয় করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৪ হাজারেরও বেশি রান করেছেন টেন্ডুলকার, কাম্বলি সাড়ে তিন হাজার।

কেন টেন্ডুলকারের চেয়ে বড় প্রতিভা হয়েও কাম্বলি পারেননি? কারণ ট্যালেন্ট–অ্যাবিলিটি শেষ কথা নয়, শেষ কথা হচ্ছে পরিশ্রম। টেন্ডুলকারের আত্মজীবনী পড়লেও জানতে পারবেন, মাত্র ১৪ বছর বয়সে কী ভীষণ পরিশ্রমের মধ্যে ছিলেন। সকালে ম্যাচ খেলেছেন। দুপুরে খাওয়ার টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। স্যার আচরেকার বিকালে ডেকে তুলে ভেসপার পেছনে বসিয়ে নিয়ে গেছেন আরেকটা ম্যাচ খেলাতে। রাতে বাসায় ফিরে মোজার ভেতরে বল ঢুকিয়ে আরও আরও প্র্যাকটিস।

শৈশবের কোচ রমাকান্ত আচরেকারের সাথে শচীন ও কাম্বলি

তাঁর প্রতিভা তাঁকে ১০০ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি এনে দেয়নি, দিয়েছে তাঁর পরিশ্রম।

হার্শা আরেকটা দারুণ কথা বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ান আর্মি তাদের এলিট ফোর্স তৈরি করা সময় সবার ট্র্যাক রেকর্ড দেখে। সেখানে যারা জীবনে কোনো কিছুতেই ব্যর্থ হয়নি, তাদের প্রথম দফাতেই বাদ দেয়। বরং তাদেরই নেয়, যারা ব্যর্থ হয়ে সেই ব্যর্থতাটাকে জয় করতে পেরেছে। মনে রাখবেন, ব্যর্থ হওয়াটাও শেষ কথা কিন্তু নয়, ব্যর্থতাটাকে জয়ও করতে হবে।

ক্রিকেটে এমন অনেক কোচের উদাহরণ আছে, যারা ক্রিকেটার হিসেবে অসাধারণ ছিলেন, কিন্তু কোচ হিসেবে ব্যর্থ। যেমন গ্রেগ চ্যাপেল। আবার ক্রিকেটার হিসেবে একদমই ব্যর্থ ছিলেন, কোচ হিসেবে অবিশ্বাস্য সফল। যেমন জন বুকানন কিংবা ডেভ হোয়াটমোর। ফুটবলেও আছে। যেমন ব্যর্থ কোচ ডিয়েগো ম্যারাডোনা আর সফল কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন কিংবা হোসে মরিনহো।

আপনি মহা ট্যালেন্টেড বলে সবকিছুই ফর গ্র্যান্টেড ধরে নেবেন না। বা আপনার প্রতিভা নেই বলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

জীবনের দাঁড়িপাল্লায় সফলতা মাপার একটাই মাপকাঠি, একটাই একক -পরিশ্রম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link