বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির সেরা ৫

বর্তমান ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিচারে অন্যতম সেরা সিরিজ আবারো শুরু হতে চলেছে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ, যার পোশাকি নাম এখন বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ মানেই জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা, কঠিন স্লেজিং লড়াই এবং ব্যাটে বলের অসামান্য যুদ্ধ। আজ দেখে নেয়া যাক বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের স্মরণীয় পাঁচ টেস্ট।

এর আগে একটা কথা বলে নেয়া দরকার। আমার ক্রিকেট দেখা শুরু ২০০২ থেকে। তার আগের বোর্ডার গাভাস্কার টেস্টকে তাই ধরছি না। শুধু মাত্র আমার দেখা সেরা পাঁচ টেস্ট এর কথাই বলবো।

  • অ্যাডিলেড, ২০১৪

কোহলির প্রথম টেস্ট, অধিনায়ক হিসেবে। টেস্টের প্রথম চারদিন মোটামুটি চলতি চিত্রনাট্য মেনেই এগিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ব্যাট করে ভারতের জন্যে এভারেস্ট সমান না হলেও মোটামুটি কিলিমাঞ্জারো সমান রান তো করেইছিলো। জবাবে ভারত বেশ ভালোই খেলেছিল। ইংল্যান্ড সিরিজে হতশ্রী অফ-ফর্মের বোঁটকা গন্ধ থেকে কোহলির আবার বড় রানের পারফিউমের ঘ্রাণ সমর্থকদের মনে আশার সঞ্চার করে।

কিন্তু, তাও অস্ট্রেলিয়া বেশ কিছু রানে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ার্নারের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে একদিনে ৩৬০ এর আশেপাশের লক্ষ্যমাত্রা খাড়া করে দান ছাড়ে অজিরা। এরপর দুটি ফলাফল সম্ভব ছিল অন্তত সাধারণ বুদ্ধিতে। হয় ভারতের হার অথবা ড্র। কিন্তু জিনিয়াসরা বোধহয় সাধারণ বুদ্ধির ধার ধরেন না। কোহলি দ্বিতীয় ইনিংসে যে ইনিংসটি খেলেন, টেস্ট ক্রিকেট দেখিয়েদের সারাজীবন তা ভোলার কথা না। একসময় তো মনে হচ্ছিলো, ভারত ম্যাচ জিতে যাবে। লিওনের ওই স্পেল আর আজিঙ্কা রাহানের দুর্ভাগ্যজনক ভুল সিদ্ধান্ত না থাকলে এই টেস্ট হয়তো এই তালিকায় এতো নিচে থাকতো না।

  • অ্যাডিলেড, ২০১৮

অ্যাডিলেডে সাম্প্রতিক কালে ভারতের খেলা মানেই কোনো এক ভারতীয় ব্যাটসম্যানের ভুবন ভোলানো ব্যাটিং। গতবার কোহলি ছিলেন, এই বার পূজারা। শুরুর দিকের ধস সামলে পূজারা ওই ইনিংস না খেললে, ভারত ম্যাচ এবং সম্ভবত সিরিজ থেকেই ছিটকে যেত ওয়ার্নার-স্মিথ বিহীন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। শেষ উইকেটে হ্যাজেলউড এবং লিঁও’র বড় জুটি যদিও রবি শাস্ত্রীর শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলো, কিন্তু ভারতের জয় প্রায় সময়ের অপেক্ষা হয়েই দাঁড়ায়। সেই ম্যাচ ভারত হারলেই বরং অঘটন ঘটতো।

  • ব্যাঙ্গালুরু, ২০১৭

প্রথম টেস্টের পরাজয়, কোহলির অফ-ফর্ম এবং স্মিথের ধুন্ধুমার এই টেস্টে ভারতের কাছে প্রেসার-কুকার সম পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। লিঁও আট উইকেট এবং প্রথম ইনিংসে ভারতের অসহায় আত্মসমর্পণ পরিস্থিতি আরো ঘোরালো বানিয়ে দেয়। কিন্তু খেলা ঘুড়িয়ে দেন ভারতীয় বোলাররা। আর দ্বিতীয় ইনিংসে পূজারা-রাহানে জুটি। অস্ট্রেলিয়াকে জিততে হলে সামান্য কিছু রান করতে হতো। অশ্বিনের ছয় উইকেটে গুঁড়িয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। এই ম্যাচ যদিও আরো বড় শিরোনাম তৈরি করে স্মিথের ড্রেসিং রুমের দিকে তাকিয়ে ডিআরএস সংক্রান্ত ইশারা।

  • মোহালি, ২০১০

অস্ট্রেলিয়া, লক্ষণ এবং মহাকাব্যিক ইনিংস-এই ত্রিকোণ প্রেম বোধহয় কোনোদিন পুরোনো হবার না। অস্ট্রেলিয়ার ৪২৮ এর জবাবে শচীনের ৯৮ এবং সুরেশ রায়নার ৮৬ রানে ভর করে ভারত তোলে ৪০৫। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত অপেক্ষাকৃত কম রানে অস্ট্রেলিয়াকে বেঁধে রাখে।

২১৬ তাড়া করতে নেমে অবশ্য ভারত ১২৪ রানে ৮ উইকেট হয়ে গিয়ে ধুঁকছিল। পিঠের ব্যাথায় কাতর লক্ষণ দুই টেল এন্ডার প্রজ্ঞান ওঝা এবং ইশান্ত শর্মাকে নিয়ে শেষ দু উইকেটে ৯২ রান করে অনবদ্য জয় প্রদান করেন ভারতকে। লক্ষণের ওই ৭৩ এর মূল্য বোধহয় অনেক সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরির চেয়ে বেশি।

  • অ্যাডিলেড, ২০০৩

আবার অ্যাডিলেড, আবার ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মহাকাব্য। দ্রাবিড়-লক্ষণের ৩০৩ এর জুটিতে ভর করে প্রায় ডুবে যাওয়া অবস্থা থেকে ভারতকে ভাঁসিয়ে তোলে। এরপরেও অবশ্য অজিত আগারকারের ছয় উইকেট না থাকলে, জাহাজ তীরে এসে ঠেকতো না। সাথে শচীনের অনবদ্য স্পিনে তিন উইকেটও ভোলার নয়। বেহালার বঙ্গসন্তানের আগ্রাসী সৌরভে সেই প্রথম আমাদের প্রজন্ম জানলো, অস্ট্রেলিয়াও নিজের দেশে হারতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link