বিশ্বকাপ বয়কটের ‘সাহস নেই’ পাকিস্তানের

ওয়ানডে বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারে পাকিস্তান। এমন সম্ভাবনা ক্রিকেট বিশ্বকে জল্পনা-কল্পনায় ফেলার জন্য যথেষ্ট। রমিজ রাজা, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান আক্ষরিক অর্থেই ভারতের বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণাই করলেন। যদিও, সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া মনে করছেন শুধু শুধুই ভয় দেখাচ্ছে পাকিস্তান। আসলে, বিশ্বকাপ না খেলার জন্য যে সাহস দরকার সেটা নাকি পিসিবির নেই।

পাকিস্তানের এই স্পিনিং গ্রেট মনে করেন, রমিজ রাজার এই বক্তব্য বরং উল্টো বিপদে খেলতে পারে পিসিবিকে। তিনি মনে করেন, পিসিবি যাই করুক সেটা সমঝোতার ভিত্তিতে করা উচিৎ। না হলে, ভারতের পথে হেঁটে বাংলাদেশ কিংবা আফগানিস্তানও ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ বয়কট করে বসতে পারে।

আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সেটিকে কেন্দ্র করেই দলগুলো ইতোমধ্যে নিজেদের প্রস্তুতি শুরু করে দিচ্ছে। তবে এর আগে এশিয়ার দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের সুযোগও আছে। কেননা বিশ্বকাপের আগেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা এশিয়া কাপও। এই এশিয়া কাপ ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য হতে পারে ভাল প্রস্তুতির মঞ্চ।

তবে এই আসরগুলো নিয়েও এবার মুখোমুখি অবস্থানে ভারত ও পাকিস্তান। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের মাটিতে বসবে এশিয়া কাপের আসর। তবে পাকিস্তানে এশিয়া কাপ খেলতে যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি আছে ভারতের। এমনকি এশিয়া কাপ বয়কট করার সিদ্ধান্তও আসতে পারে। বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সচিব জয় শাহ তো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় দল পাকিস্তানে খেলতে যাবে না। নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে তাঁরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষেও রায় দিয়েছেন।

পাল্টা জবাবে রমিজ রাজা দাবি করেন, পাকিস্তানে এশিয়া কাপ খেলতে ভারত না আসলে পাকিস্তান দল ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না। মানে স্রেফ বিশ্বকাপ বয়কটের হুমকি দিয়ে রেখেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে যদি পাকিস্তান না যায় তাহলে সেটি কে দেখবে? আমাদের অবস্থান অনড়। তারা যদি এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে আসতে রাজি হয় তবে আমরাও যাব। যদি তারা না আসে আমরাও যাব না, আমাদেরকে ছাড়াই বিশ্বকাপ হবে।’

দানিশ কানেরিয়া মনে করেন, রমিজ রাজার এই হুমকিতে পাকিস্তানের কিছু যায় আসে না। বরং, বিশ্বকাপ না খেললে সেটা পাকিস্তানের জন্যই ক্ষতিকর হবে। তিনি বলেন, ‘আইসিসি ইভেন্ট বয়কট করার মত যথেষ্ট গাটস পিসিবির নেই। আর অন্যদিকে, পাকিস্তান না খেলতে গেলে ভারতের কিছু যায় আসে না। ওদের আর্থিক লাভের জন্য বিরাট একটা বাজার আছে। বরং, ভারতে খেলতে না গেলে পাকিস্তানের ওপর বড় প্রভাব পড়তে পারে।’

কানেরিয়া মনে করেন, বয়কটের ডাকটা স্রেফ কথার কথা। পিসিবি কেবল একটু ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘শেষমেশ পাকিস্তান ঠিকই ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে। পিসিবি কর্মকর্তারা বলবেন, তাঁদের হাতে আর কোনো পথ খোলা নেই। কারণ, আইসিসি ইভেন্টে না গেলে সেটা পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য বড় ক্ষতির করণ হবে।’

জয় শাহর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এখনও কোনো বৈঠক করেনি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। তবে, কানেরিয়া মনে করেন, ভারতের পাশে থাকবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। তিনি রমিজ রাজাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘বিশ্বকাপের আগে এখনও অনেক সময় বাকি। এই সময়ে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে কেউ জানে না। এমনও হতে পারে ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান দল পাকিস্তানে গিয়ে খেলতে চাইবে না। পাকিস্তানের জনগন চায় সে দেশে এশিয়া কাপ হোক। তবে, এখানে পা মাটিতেই রাখতে হবে দেশ ও জাতির কথা ভেবে।’

যতদূর বোঝা যাচ্ছে, বিসিসিআই নিজেদের অবস্থানে অনড়ই থাকবে। কোনো ভাবেই পাকিস্তানে দল তাঁরা পাঠাবে না। আসলে এখানে বোর্ডের তেমন বলার কিছু নেই। পাকিস্তানের যাওয়া কিংবা না যাওয়ার সিদ্ধান্তটা সব সময় সরকারের উচ্চ মহলের হাতে থাকে।

বোর্ডের এক কর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে, পাকিস্তানে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। সরকার শুধুমাত্র আইসিসি ইভেন্টে পাকিস্তানে যাওয়ার অনুমতি দেবে। ফলে এশিয়া কাপে যাওয়া হচ্ছে না। আমরা আলোচনা করছি যদি এশিয়া কাপের ভেনু পরিবর্তন করা যায়। আমরা এসিসিকে অনুরোধ করব টুর্নামেন্ট পাকিস্তান থেকে সরানোর জন্য।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link