সব শীতের শেষে বসন্ত আসে না

এমন পরিসমাপ্তি কি আদৌ কেউ চেয়েছিল? নিশ্চয়ই চায়নি। খোদ বেলজিয়ামের খেলোয়াড়রাও নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করেনি। তাদের ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটা সময় পার করেছে তাঁরা। দলের প্রায় প্রতিটা পজিশনেই তারকায় ঠাসা- পরীক্ষিতদের আনাগোনা। তবুও দিনশেষে, শূন্যহাতে বাড়ি ফেরা।

কি একটা দারুণ ঝঞ্ঝাটে ভরা সপ্তাহ পার করে এবার তাদের ধরতে হচ্ছে বাড়ি ফেরার পথ। দলের মধ্যে থাকা কোন্দল বাইরে এসেছে। ড্রেসিংরুমের পরিবেশকে করেছে নষ্ট। দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় কেভিন ডি ব্রুইনা পুরো পৃথিবীর সামনে বলে বেড়াচ্ছেন, তাঁরা নাকি বেশ বুড়ো। তাদের দ্বারা ভাল কিছু করা সম্ভব নয়।

এই নিয়ে দলের ভেতর যে গ্রুপিং হয়ে গেছে সেটা বেশ স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিলো বিগত কয়েকদিন ধরেই। আর শেষমেশ সেটার ফলাফলটা হাতেনাতেই পেয়ে গেল বেলজিয়াম। ক্রোয়েশিয়ার সাথে 0-0 গোলের ড্র। ব্যাস! ষোলকলা পূর্ণ করে বিদায় ডি ব্রুইনাদের। ২০১৮ সালেও তো ঠিক এই দলটাই খেলেছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। বয়স বেড়েছে, চার বছরে। সে কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার উপায় কই? তবুও একটা দলের স্বর্ণালী যুগের খেলোয়াড়রা প্রথম পর্ব পেরুতে পারবে না?

পারাটা বরং উচিৎ ছিল। কানাডা দ্বিতীয় বারের মত এবারের বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে। মরক্কোর তো রাউন্ড অব সিক্সটিনে খেলার অভিজ্ঞতা এবার নিয়ে দ্বিতীয় বার হবে। গ্রুপে থাকা কঠিন প্রতিপক্ষ বলতে কেবল ক্রোয়েশিয়া। সেই দলটাও তো বুড়িয়ে গেছে। এমন একটা গ্রুপ থেকে নিদেনপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে তো উঠবারই কথা বেলজিয়ামের। সেটা আর হল না। না, রোমেলু লুকাকুরা পারলেন না।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা জিততেই হত। এমন কঠিন সমীকরণের অবশ্য অবকাশই হতো না। দলটা মরক্কোর সাথে হেরে বসেছিল ২-০ ব্যবধানে। ৩৬ বছর পর একটা দল দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ পেয়েছে। পায়নি ঠিক, আদায় করে নিয়েছে। তবুও এমন দলের বিপক্ষে হারটা মেনে নেওয়ার নয়। তাইতো থিবো কোর্তোয়া সজোরে ঘুষি মেরে বসেন ডাগআউটের গ্লাসে।

একই কাজ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেও ম্যাচ শেষে করেন রোমেলু লুকাকু। তাঁর রাগ করাটা সাজে? হ্যা, নিজের উপর তিনি রাগ করতেই পারেন। চারখানা সহজ সুযোগ তিনি মিস করেছেন। এর মধ্যে দু’খানা তো আবার একেবারেই ফাঁকা পোস্ট। এমন একটা বাজে দিনের রাগ তো তিনি ঝাড়তেই পারেন গ্লাস ভেঙে। কিন্তু লুকাকু তো বিশ্বমানের স্ট্রাইকার। অন্তত তিনি তো সেটাই বিশ্বাস করেন। তবুও কেন এমন বাজে প্রদর্শন?

এই প্রশ্নের উত্তর হতে পারে, তিনি একটা লম্বা সময় ধরে ছিলেন ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে। ম্যাচ ফিট ছিলেন না, সেটা ত আন্দাজ করে নিতে খুব বেশি অসুবিধে হবার কথা নয়। বুড়িয়ে যাওয়ার একটা বিষয়ে বেশ সরগরম বেলজিয়ামের ফুটবল। তবুও সেই বুড়িয়ে যাওয়া রক্ষণ এবারে বেলজিয়ামের সামগ্রিক পারফরমেন্স বিচারে সেরা। পেছন থেকে গোল বার অক্ষত রাখার আপ্রণ চেষ্টাটাই করে গেছেন থিবো কোর্তোয়া।

তবুও রক্ষণের ফাক গলে বল ঢুকেছে। আঁটসাঁট রক্ষণ যে নেই বেলজিয়ামের। কোর্তোয়া তবুও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেও তিনখানা দুর্দান্ত সেভ করেছেন। নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে গেছেন তিনি। ঠিক কেভিন ডি ব্রুইনাও ছিলেন না নিজের স্বরুপে। সতীর্থদের সাথে দ্বন্দে নিশ্চয়ই তিনি পূর্ণ মনোযোগটা দিতে পারেননি মাঠের ফুটবলে। তাছাড়া মধ্যমাঠে খুব যে সাহায্য পেয়েছেন ব্রুইনা তেমনটাও বলার সুযোগ নেই। সবাই যে গড়ের নিচে। তবে বেলজিয়ামের এই অকাল প্রস্থান একজন অবশ্য নিশ্চয়ই খুশি।

ম্যানচেস্টার সিটি বস পেপ গার্দিওলা। তিনি তাঁর তুরুপের তাসকে পূর্ণ ফিট অবস্থায় পাবেন বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে। বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন ব্রুইনা। তবুও দিনশেষে মেনে নিতে বরং কষ্টই হয়। বেলজিয়ামের স্বর্ণালী যুগটা রয়ে গেল ট্রফিহীন। বেলজিয়াম একটা দল হিসেবেই খেলতে এসেছিল এবারের বিশ্বকাপ। কিন্তু খেলা হল না ‘একটা দল’ হয়ে। ভবিষ্যতের জন্যে রেখে যাওয়া হল না কোন রোমাঞ্চকর রসদ। তবে একটা বার্তা দেওয়া হল। স্পষ্ট বার্তা।

এই স্বর্ণালী যুগের মালা জপা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে এবং সেটা খুব দ্রুতই। এই বিষয়টা খানিকটা কলুষিত হয়ে গেছে। পেছনে ফেলে সামনে এগোতে হবে। একটা ফ্রেশ শুরু করতে হবে। একঝাঁক তরুণদেরকে নিয়ে একেবারে শুরু থেকে শুরু করতে হবে। ব্র্যান্ড নিউ বেলজিয়াম। সর্বপরী স্বপ্ন দেখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link