লাতিন আমেরিকার ফুটবল ভবিষ্যৎ

নিজেদের শৈল্পিক খেলায় মুধ করে গেছেন সবাইকে। এমন উন্মাদনা ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন যার এক বিন্দু পরিমাণ ভাটা পড়েনি আধুনিকায়নের এই যুগেও। কখনোই যেন লাতিন আমেরিকা নিরাশ করেনি বিশ্বমানের খেলোয়াড় উপহার দিতে।

লাতিন আমেরিকা, ফুটবলের সাথে এই নামটা খুব নিবিড়ভাবেই যুক্ত। পৃথিবীর যত ফুটবল মহাতারকা জন্মেছেন তাঁর অধিকাংশই তো ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের। সে তালিকায়, পেলে, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসি, রোনালদিনহোদের মত তারকাদের ঠাঁই হয়। যারা কি না মহিমান্বিত করে গেছেন ফুটবলকে।

নিজেদের শৈল্পিক খেলায় মুধ করে গেছেন সবাইকে। এমন উন্মাদনা ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন যার এক বিন্দু পরিমাণ ভাটা পড়েনি আধুনিকায়নের এই যুগেও। কখনোই যেন লাতিন আমেরিকা নিরাশ করেনি বিশ্বমানের খেলোয়াড় উপহার দিতে। এমন কিছু সম্ভাবনাময় উদীয়মান লাতিন খেলোয়াড়দের নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।

  • কার্লোস আলকারেজ (আর্জেন্টিনা)

আর্জেন্টিনার ফুটবল ক্লাব রেসিংয়ের একাডেমি দূর্দান্ত ফুটবলার উৎপাদনে বেশ বড় এক ভূমিকা পালন করেছে। হালের লাউতারো মার্তিনেজ, রদ্রিগো ডি পলরাও তো উঠে এসেছেন ক্লাবটি থেকে। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তী তারকা হওয়ার দৌড়ে যুক্ত হয়ে গেছেন ১৯ বছর বয়সী কার্লোস আলকারেজ।

এই অল্প বয়সেই তিনি ক্লাবের মূল একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন নিয়ম করেই। রক্ষণ চিড়ে গোল বারের দিকে এগিয়ে যেতে বিন্দুমাত্র ভয়ডর নেই আলকারেজের। তিনি যেন প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রস্তুত করছেন বড় মঞ্চের জন্যে।

  • জুলিয়ান আলভারেজ (আর্জেন্টিনা)

জুলিয়ান আলভারেজ যে প্রতিভাবান তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁকে ইতোমধ্যেই দলে ভিড়িয়েছে ইংলিশ পরাশক্তি ম্যানচেস্টার সিটি। কোচ পেপ গার্দিওলা নিশ্চয়ই প্রতিভার ঝলক দেখতে পেয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী আলভারেজের মধ্যে।

অবশ্য তিনি ইন্টারনেটে আলোচনার বিষয় হয়েছিলে এক ম্যাচে ছয় গোল করে। তাইতো কালক্ষেপণ না করেই ১৭ মিলিয়ন ডলারে তাঁকে দলে নিয়ে এসেছে ম্যানচেস্টার সিটি। নিজেদের স্ট্রাইকার সমস্যার সমাধানে তরুণ এই খেলোয়াড়ের উপর ভরসা করছে সিটিজেনরা।

  • ফ্যাব্রিসিও ডিয়াজ (উরুগুয়ে)

নিজের শৈশবের ক্লাবের হয়ে ১০০ ম্যাচের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন মাত্র ১৯ বছর বয়সী উরুগুয়ের মিডফিল্ডার ফ্যাব্রিসিও ডিয়াজ। নিজের এনার্জির কারণে ইতোমধ্যেই বেশ প্রশংসায় ভাসছেন তরুণ এই মধ্যমাঠের খেলোয়াড়।

তাঁর কার্যক্ষমতা, আগ্রাসন আর ফুটবলীয় দক্ষতা তাঁর দিকে বিশেষ নজর রাখতে বাধ্য করছে। তিনি নিশ্চয়ই পরবর্তী সময়ে অন্যতম সেরা একজন হওয়ার দাবি রাখেন। যদিনা ইনজুরি এসে বাধাগ্রস্ত করে তাঁর সেরা হওয়ার রাস্তায়।

  • ফ্যাকুন্ডো ফ্যারিয়াস (আর্জেন্টিনা)

মাত্র ১৯ বছর বয়স। তবে এরই মাঝে ফ্যাকুন্ডো ফ্যারিয়াস খেলে ফেলেছেন ৭০ খানা পেশাদার ম্যাচ। ২০১৯ সালে তিনি যাত্রা শুরু করেন আর্জেন্টাইন ক্লাব ক্লাব অ্যাতলেটিক কোলনের সাথে। তরুণ এই উইঙ্গার ১৫ গোল ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন।

নিশ্চয়ই এই সংখ্যাটা বাড়তে চলেছে সামনের দিনে। আর্জেন্টিনার ঘরোয় লিগের দুই পরাশক্তি বোকা জুনিয়র ও রিভার প্লেট তাঁকে দলে ভেড়ানোর আগ্রহও প্রকাশ করেছে। তবে খুব সম্ভবত ফ্যারিসিয়াসের পরবর্তী  ঠিকানা হবে ইউরোপের কোন ক্লাব।

  • এনজো ফার্নান্দেজ (আর্জেন্টিনা)

নিজের সাবেক ক্লাব সতীর্থ আলভারেজের মতই এনজো ফার্নান্দেজও ছিলেন রিভার প্লেটের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এবারের মৌসুমে তিনিও দলকে দিয়েছেন নিজের সেরাটা। ২৪ ম্যাচে নয় গোল করেছেন। আরও ছয় খানা গোলে রেখেছেন অবদান।

একজন মিডফিল্ডার হিসেবে তিনি নিজের কাজটা ভালভাবেই করে গেছেন বিগত মৌসুমে। তাঁর সাথে পর্তুগীজ ক্লাব বেনফিকা ও ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানের যোগাযোগের গুঞ্জন রয়েছে। হয়ত ইউরোপের কোন ক্লাবেই তিনি নিজেকে মেলে ধরার সুযোগটা পেয়ে যাবেন আগামী মৌসুমেই।

  • ম্যাথিউস ফ্রাঙ্কা (ব্রাজিল)

ফ্লেমেঙ্গো থেকে ইউরোপের দলগুলোতে জায়গা করে নেওয়াটাই যেন খেলোয়াড়দের স্বপ্ন থাকে। তেমন এক স্বপ্ন নিয়েই খেলে যাচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান ১৮ বছর বয়সী ক্ষুদে ফুটবলার ম্যাথিউস ফ্রাঙ্কা। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে বেশ সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় তিনি।

ভিনিসিয়াস জুনিয়র কিংবা লুকাস পাকুয়েতার পদাঙ্ক অনুসরণের অপেক্ষায় যেন রয়েছেন তিনি। গুঞ্জন রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ এই ক্ষুদে তারকাকে নিজেদের একাডেমিতে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। এমনটা ঘটলে নিশ্চয়ই তাঁর প্রতিভার আরও বিকশিত হবে। তিনিও বনে যেতে পারেন আগামী দিনের মহাতারকা।

  • ম্যাতিয়াস গালারজা (প্যারাগুয়ে)

নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে ব্রাজিলিয়ান দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগের দল কোরিতিবাতে যুক্ত হয়েছেন। সে ধারা অব্যাহত রেখে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন শুরুর একাদশেও।

মাত্র ২০ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ফুটবলের একটা চাহিদায় পরিণত হয়েছেন। তাঁর প্যারাগুয়ে ও বলিভিয়া দুই দেশের জন্যেই খেলার সুযোগ রয়েছে। তরুণ এই খেলোয়াড় নিজেকে প্রতিনিয়তই যেন আরও পরিণত করছেন। হতে পারেন তিনিও আগামী দিনের একজন তারকা।

  • কাইকি (ব্রাজিল)

নেইমার জুনিয়রের শৈশবের ক্লাব সান্তোসের রক্ষণের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন কাইকি। মাত্র ১৮ বছর বয়সী এই তরুণের জন্যে ইতোমধ্যেই স্প্যানিশ পরাশক্তি বার্সেলোনা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এত অল্প বয়সেই তিনি ঘরের ক্লাবটির হয়ে প্রায় ৫০টি ম্যাচে ছিলেন রক্ষণের অন্যতম সেরা সেনানী।

এখনই তাঁর তুলনা করা হয় ব্রাজিল ও প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ডিফেন্ডার মার্কুইনহোসের সাথে। তবে আগামী দিনে তিনি কতটুকু নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়ের দিকে বাড়তি নজর রাখতেই হচ্ছে।

  • মার্কোস লিওনার্দো (ব্রাজিল)

সান্তোসের আক্রমণ ভাগের নতুন সেনসেশন মার্কোস লিওনার্দোর বয়স কেবল ১৯। তবে এখন থেকেই তিনি আক্রমণে গুরু দায়িত্ব পালনের মত কঠিন কাজটা করে যাচ্ছেন। দলের প্রয়োজনে গোল করছেন, আক্রমণ সাজাতে সহয়তা করছেন।

নেইমার কিংবা রদ্রিগোর মত করে তিনি আগামী দিনে নিশ্চয়ই খুঁজে পাবেন ইউরোপের কোন বড় ক্লাবের ঠিকানা। ততদিন অবধি অবশ্য তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে প্রস্তুত রাখতেই ব্যস্ত।

  • নিকোলাস মারিক্যাল (উরুগুয়ে)

বিধ্বংসী ডিফেন্ডারদের আতুরঘর হিসেবে উরুগুয়ের বেশ একটা খ্যাতি রয়েছে। সে খ্যাতির বাহক হতেই যেন নিজেকে প্রস্তুত করছেন নিকোলাস মারিক্যাল। দেশীয় ক্লাব ন্যাশনালের হয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন রক্ষণ সামলানোর। ২১ বছর বয়সী এই তরুণ ডিফেন্ডার নিজের দক্ষতা দিয়ে নজর কাড়ছেন। নিজেকে সময়ের সাথে প্রতিনিয়ত আরও সমৃদ্ধ করছেন।

  • মার্সিলিনো নুনেজ (চিলি)

বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই চিলির ফুটবলের অবস্থান খুব একটা স্বস্তিজনক স্থানে নেই। ভাল কোন খেলোয়াড়ও উপহার দিতে পারেনি দেশটির ক্লাবগুলো। সে ধারার পরিবর্তন করতেই যেন সামনে এসেছেন মার্সিলিনো নুনেজ।

২২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার চিলির ক্লাব ইউনিভার্সিদাদ ক্যাতোলিকার হয়ে ২০২১ মৌসুম ছয় গোল করার পাশাপাশি সাত অ্যাসিস্ট করেছেন, মাত্র ২৮ ম্যাচ খেলে। সেই সাথে অবদান রেখেছেন দলকে লিগ শিরোপা জেতাতে।

  • মোজেস রামিরেজ (ইকুয়েডর)

২১ বছর বয়সেই এক মৌসুমের জন্যে মোজেস রামিরেজ ধারে খেলেছেন স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল সোসিয়েদাদের হয়ে। সম্ভাবনাময় এই গোলকিপারের প্রতি বাড়তি নজর রাখা তাই বিশেষ প্রয়োজন।

আগামী দিনে তিনি হয়ত হতে পারেন সেরা গোলকিপারদের একজন। ক্লাবে তাঁর পারফরমেন্স ও প্রতিভার প্রতিফলন হিসেবে তিনি জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছিলেন।

  • রুবেন্স (ব্রাজিল)

বলের উপর দারুণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ২০ বছর বয়সী ফুটবলার রুবেন্সের। অ্যাটলেটিকো মিনেইরোর হয়ে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করছেন।

ইতোমধ্যে ক্লাবটির কোচ অ্যান্টোনিও মোহামেদ তাঁর উপর আস্থা রাখতে শুরু করেছেন। তাছাড়া রুবেন্স একজন ভার্সেটাইল খেলোয়াড়। মাঠের যেকোন পজিশনেই তিনি নিজেকে দারুণভাবে মানিয়ে নিতে পারেন।

  • ড্যানিয়েল রুইজ (কলম্বিয়া)

কলম্বিয়ান তারকার হামেস রদ্রিগেজ একটা সময় তরুণ প্রতিভা হিসেবে আলো কেড়েছিলেন পুরো বিশ্ব ফুটবলের। সে জায়গটায় এবার হয়ত বসতে চলেছেন ড্যানিয়েল রুইজ। ২০ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় নিজের ক্লাবের হয়ে প্লেমেকার হিসেবে খেলে থাকেন। তাছাড়া গায়ে জড়িয়েছেন ১০ নম্বর জার্সি। এটাই অন্তত প্রমাণ করে তিনি প্রতিভাবান।

  • গ্যাব্রিয়েল ভেরন (ব্রাজিল)

এই মুহূর্তে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার। তাঁর সাথেই তুলনা দেওয়া হচ্ছে ১৯ বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েল ভেরনকে। নিজের আক্রমণাত্মক দক্ষতা দিয়ে এমন এক তুলনার জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছেন গ্যাব্রিয়েল ভেরন। নিজের সামর্থ্যের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটাতে পারলে তিনিই হয়ত হতে পারবেন ব্রাজিলের আগামি দিনের মহাতারকাদের একজন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...