কাকে ধমক দিলেন লিও মেসি?

আর্জেন্টিনার হয়ে লিওনেল মেসি পার করছেন স্বপ্নীল সময়; আকাশি-সাদা জার্সিতে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহুর্তগুলো ধরা দিচ্ছে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে। গত বছরই প্রথমবারের মত দেশের হয়ে কোন শিরোপা জিতেছিলেন লিওনেল মেসি। আর চলতি বছরে আরাধ্য বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে ভালোভাবেই ছুটছেন লিওনেল মেসি, কাতারে একে একে সব বাধা অতিক্রম করছে শিরোপার নেশায় উন্মত্ত আলবিসেলেস্তারা।

সর্বশেষ নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছে লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা। রোমাঞ্চ ছড়ানো ১২০ মিনিটের ম্যাচ শেষপর্যন্ত গড়িয়েছে টাইব্রেকারে; গোলরক্ষক ইমি মার্টিনেজের দৃঢ়তায় ডাচ দুর্গের পতন ঘটাতে ভুল হয়নি লাতিন আমেরিকার দেশটি। তবে এতটুকুতেই উত্তেজনা থেমে থাকেনি বরং ম্যাচ শেষেও দুই দলের ডাগ আউটে দেখা গিয়েছে উত্তাপ। শান্তশিষ্ট লিওনেল মেসিও হয়ে উঠেছিলেন উত্তেজিত, জড়িয়েছিলেন বাকবিতন্ডায়।

শুরুটা হয়েছিল পেনাল্টি শুটআউটের পরেই, ডাচ বেঞ্চের সাথে তর্কে জড়াতে দেখা যায় পিএসজি ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসিকে। নেদারল্যান্ডসের কোচ লুইস ভন গাল এবং সহকারী কোচ এডগার ডেভিডসের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করতে দেখা যায় তাঁকে। বিশেষ করে এডগার ডেভিডসকে হাত দিয়ে ইশারা করেন এই সুপারস্টার, যার ভাবার্থ অনেকটা এমন যে, ম্যাচের আগে তো অনেক কথা বলেছো, এখন এত চুপচাপ কেন?

এখানেই অবশ্য থামেননি লিওনেল মেসি; ম্যাচ-পরবর্তী সাক্ষাৎকারে আবারো দেখা মিলেছে তাঁর রাগান্বিত রূপ। ক্যামেরার আড়ালে থাকা কারো দিকে তাকিয়ে ধমক দিতে দেখা যায় মেসিকে; এর আগে কয়েক সেকেন্ড সেই ব্যক্তির দিকে বিতৃষ্ণা নিয়ে তাকিয়েও ছিলেন তিনি। ক্যামেরার আড়ালে থাকা সেই ব্যক্তি মূলত নেদারল্যান্ডসের হয়ে সেদিন জোড়া গোল করা ওয়াউট উইগোর্স্ট।

ডাচ স্ট্রাইকারের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার পরেই মেসি বলে উঠেন, ‘এদিকে কোথায় তাকিয়ে আছো, গাধা? যাও নিজের পথে, দূরে যাও।’ মেসির সামনে থাকা সাংবাদিক তাঁকে শান্ত করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। আর্জেন্টাইন অধিনায়ককের এমন প্রতিক্রিয়া সচারাচর দেখা যায় না বলেই এমন ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে ফুটবল বিশ্ব।

অবশ্য ওয়াউট উইগোর্স্ট জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা ডাচদের ম্যাচে ফেরানো এই ফুটবলার জানান তাঁর করমর্দনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে মেসি, এবং সেই সাথে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। তবে স্প্যানিশ ভাষা পুরোপুরি না জানায় ভালভাবে বুঝতে পারেননি তিনি।

সবসময়ের মত এবারও লিওনেল মেসি পাশে পেয়েছেন নিজের সতীর্থদের। আর্জেন্টিনার অন্য সব ফুটবলারই দাবি করেছেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার পুরোপুরি ডাচদের। সাবেক ম্যানসিটি তারকা সার্জিও আগুয়েরো জানান, আর্জেন্টিনা দল তখন ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটছিল, তখনই উইগোর্স্ট এসে মেসিকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে।

পাল্টাপাল্টি এমন অভিযোগের পর ফিফাও বসে নেই। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ নিয়ে তদন্তে নেমেছে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে আর্জেন্টিনার সেদিকে তাকানোর সময় কই, ছোট এক বিরতির পরেই তো ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হতে হবে তাদের। মনোযোগটাও তাই সেদিকে থাকা উচিত।

আগামী বিশ্বকাপে মেসির বয়স হবে চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। অনুমিত ভাবেই তখন বিশ্বকাপে দেখা যাবে না এই ফুটবল জাদুকরকে। তাই তো মেসির জন্য বিশ্বকাপ জেতার এটাই সম্ভাব্য শেষ সুযোগ। মেসি নিজেও সেটা জানেন, তাই সেরা পারফরম্যান্সই করছেন তিনি। এখন পর্যন্ত চার গোল আর দুই অ্যাসিস্ট করেছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার।

আপাতত দেখার বিষয়, শেষপর্যন্ত মেসির ভাগ্যে কী রয়েছে। ক্যারিয়ারের গোধূলি বেলায় এসে সোনালী ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারবেন তিনি নাকি ২০১৪ আরো একবার নামবে কাতারে? বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব নিয়ে অবসরে যাবেন লিওনেল মেসি নাকি একটা বিশ্বকাপের আক্ষেপ নিয়েই বুট জোড়া তুলে রাখবেন তিনি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link