হাইলাইটেড তাইজুল ইসলাম

পরপর দুই উইকেট হারিয়ে তখন ব্যাকফুটে ভারত। স্পিনার তাইজুল ইসলাম ভয়ংকর কিছুর আভাষ দিচ্ছেন। সেই সময় বিরাট কোহলি ব্যাট হাতে নামলেন। ভারতের সবচেয়ে বড় ভরসাও তখন তিনিই। কোহলি অবশ্য এসব কিছুরই ধাঁর ধারছেন না। তাঁর শরীরি ভাষা, আগ্রাসন সবই ফুটে উঠতে চাইছে একটু আলাদা করে।

ইনফর্ম কোহলি কী আরেকবার ভোগাবেন বাংলাদেশকে?  শেষ ওয়ানডে ম্যাচটাতেও সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। আজও নিজের দ্বিতীয় বলেই দারুণ একটা ড্রাইভও করলেন। বাংলাদেশ শিবিরেও একটা ভয় চেপে বসতে চাইছে যেন। তবে সেই ভয়টা মুহূর্তের মধ্যে স্রেফ উড়িয়ে দিলেন তাইজুল। কোহলিকে আউট করে তাইতো পুরো বাংলাদেশের এমন বুনো উল্লাস।

কোহলির উইকেটটা পেয়েই আকাশে লাফ দিলেন তাইজুল। পুরো বাংলাদেশ দল যেন তাঁকে ছুঁতে চাইছে। তবে এই তাইজুলকে ছোঁয়া কঠিন। লাল বলে প্রতিটা দিন যেন আরও বেশি তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠেন তিনি। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সকল মুশকিলের একটাই আসান, তাইজুল ইসলাম।

বিরাট কোহলির উইকেট পাওয়া যেকোন বোলারের জন্যই আনন্দের, গর্বের। তবে তাইজুল বোধহয় এমনটা ভাবেননা। তাঁর কাছে এটি শুধুই আরেকটি উইকেট, আরেকবার উল্লাস, আরেকবার দলকে এগিয়ে দেয়া।

কোহলির উইকেট পাওয়া তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম হাইলাইট কিনা এমন প্রশ্নও এসেছিল সংবাদ সম্মেলনে। তাইজুল সেসব মানতে রাজি নন। অনেকটা সহজ গলায়ই বললেন, ‘আমি কোহলির উইকেট এর আগেও পেয়েছি, তাই না? এটাই আমার ক্যারিয়ারের হাইলাইট হতে হবে, এমন তো কিছু নয়।’

তাইজুল অবশ্য কোহলির উইকেট আগেও পেয়েছেন। ২০১৭ সালে হায়দ্রাবাদ টেস্টে তাইজুলের বলেই আউট হয়েছিলেন কোহলি। আজ চট্টগ্রামেও একই পরিণতি। সেকথাই সবাইকে আরেক দফা মনে করিয়ে দিলেন তাইজুল।

তবে কোহলির এই উইকেট তাঁর ক্যারিয়ারের হাইলাইট নাহলেও আজকের দিনের হাইলাইট নিশ্চয়ই। আসলে তাইজুলের পারফরম্যান্সটাই আজকের সবচেয়ে বড় হাইলাইট। আরো স্পষ্ট করে বললে টেস্ট ক্রিকেটে তাইজুল ইসলামই বাংলাদেশের অন্যতম হাইলাইট।

এই ফরম্যাটে দিনের পর দিন পারফর্ম করে যাচ্ছেন। নিজের বোলিং নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন। আজও বাংলাদেশের বড় নায়ক তিনি। কোহলি বাদেও ফিরিয়েছেন ৯০ রান করা চেতেশ্বর পূজারাকে। সকালে নিয়েছিলেন শুভনম গিলের উইকেটও। সবমিলিয়ে আজ ৮৪ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট।

তাইজুলের বোলিং ভুগিয়েছে ভারতকে, ভুগিয়েছে দিনের সেরা ব্যাটার চেতেশ্বর পূজারাকেও। সংবাদ সম্মেলনে এসেও সেকথাই বলেছেন পূজারা, ‘সে খুবই ভালো বোলিং করেছে। সে লাইন-লেংথের ক্ষেত্রে খুবই ধারাবাহিক ছিল। আজ তাঁকে খেলাই সবচেয়ে কঠিন মনে হয়েছে।’

ওদিকে নিজের ও দলের পারফরম্যান্স নিয়ে বেশ খুশি তাইজুল। দিনশেষে ভারতের ৬ উইকেট তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। আগামীকাল দ্রুতই ভারতকে আঁটকে দিতে চান তাইজুলরা। তবে আনন্দের সাথে আক্ষেপও আছে তাইজুলদের মনে।

বাংলাদেশ আজও আলোচনায় ক্যাচ ফেলে। উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান ফেলেছেন সহজ ক্যাচ। একই কাজ করেছেন এবাদত হোসেনও। ফলে দিনশেষে সেই আক্ষেপটাও সঙ্গী বাংলাদেশের। নাহলে হয়তো আজই গুটিয়ে দেয়া যেত ভারতের ইনিংস। ক্যাচ মিসটাকে পার্ট অব গেম বললেও আক্ষেপটাকে অস্বীকার করেননি তাইজুল।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link