ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতর পরেই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে (পিসিবি) রমিজ রাজার সময় যে ফুরিয়ে এসেছে তা বোঝা যাচ্ছিলো। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাই পিসিবির চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন রমিজ রাজা। সংস্থাটির দায়িত্বে এখন নাজাম শেঠি। নিজের পদ হারানোর প্রক্রিয়া নিয়ে বেজার ক্ষুদ্ধ সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে নিজের পদ হারানোর প্রক্রিয়া সহ নতুন পিসিবি চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন রমিজ রাজা। রমিজের এমন ঢালাওভাবে সমালোচনা করা ভাল ভাবে নেয়নি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের নতুন কমিটি। রমিজের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবার হুমকিও দিয়েছে পিসিবি।
গত সাপ্তাহেই শাহবাজ শরীফের সরকার বরখাস্ত করে রমিজ রাজাকে। সাবেক এই ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকারকে সরিয়ে এর আগে পাঁচ বছর পিসিবির চেয়ারম্যান এবং সিইও এর দায়িত্বে থাকা নাজাম শেঠির নেতৃত্বাধীন ১৪ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়। ক্ষমতা হারানোর প্রক্রিয়া নিয়ে রীতিমতো ক্ষুদ্ধ রমিজ।
তাকে জোর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।রমিজ বলেন, ‘তারা ক্রিকেট বোর্ডে এক প্রকার আক্রমণ ই করেছে। এমনকি তারা আনার জিনিসপত্র গুলো নেবার সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি। সকাল ৯ টার দিকে ১৭ জনের একটি দল অফিসে আসে। তাদের ভাব দেখে মনে হয়েছিল, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির লোকেরা অফিস তল্লাশি করতে এসেছে।’
রমিজ আরো বলেন, ‘এমন মনে হচ্ছিলো যে আমি কোনো অপরাধ করেছি এবং আমি আমার অফিস থেকে কোনো প্রমাণাদি নিয়ে যাব। এসব কেমন তামাশা?’
তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া নাজাম শেঠিরও কঠোর সমালোচনা করেছেন রমিজ। নাজাম শেঠি আর তার ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেটের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই বলেও মনে করেন এই পাকিস্তান কিংবদন্তি। রমিজ বলেন, ‘তাদের ক্রিকেটে কোনো আগ্রহ নেই। ক্রিকেট বোর্ড তাদের ক্ষমতার জায়গায় বসায়। তারা চায়, মানুষ তাদের সামনে নত থাকবে।’
দায়িত্বে এসেই গঠনতন্ত্র পরিবর্তন ও নির্বাচক কমিটিতে পরিবর্তনের মত মহাগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন নাজাম শেঠি। এমন হঠাৎ রদবদলে বিশ্বের কাছে পাকিস্তান ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে বলেও মনে করেন রমিজ, ‘ক্রিকেট মৌসুমের মাঝখানে যখন অনেক দল পাকিস্তানে আসছে তখন আপনারা এমন কান্ড করলেন। এরপর প্রধান নির্বাচকও বদলে ফেললেন। নির্বাচক হিসেবে মোহাম্মদ ওয়াসিম ভাল না খারাপ সেটা বড় কথা নয়। একজন সাবেক টেস্ট ক্রিকেটারকে শ্রদ্ধার সাথে বিদায় দিতে হবে।’
রমিজ মনে করেন, তার অন্যায় করেছে বর্তমান সরকার, ‘আমার সাথে যা হয়েছে তা রাজনৈতিক প্রতিশোধ এবং আমি রাজনীতিরই শিকার কারণ আমি তাদের বিরোধী দল দ্বারা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছিলাম। যদিও আমার কারো সাথে কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই। তারা আমাকে ক্রিকেটীয় এবং প্রশাসনিক যোগ্যতার জন্যই নিয়োগ দিয়েছিল।’
নাজাম শেঠির বর্তমান কমিটি ভাল ভাবে নেয়নি রমিজের এমন বক্তব্য। রমিজের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড জানায়, রমিজের এমন কান্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবার অধিকার তাদের আছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, রমিজ নিজের বক্তব্যে বর্তমান সভাপতির ওপর যেসব অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তা ভিত্তিহীন।
রমিজ নিজের এবং নাজাম শেঠির পূর্ববর্তী আমলের ক্রিকেট বোর্ডের খরচের যে তুলনা টেনেছেন তা অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে পিসিবি। কারণ দুই আমলের পরিস্থিতি এক বারেই তুলনাযোগ্য নয়। পিসিবি মনে করে, শেঠির আমলে খরচ বেশি হয়েছে কারণ তখন পাকিস্তানের হোম সিরিজ সহ পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) আয়োজিত হত সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তাই ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি সহ অন্য পরিচালকদের অনেক ভ্রমণ করতে হত।
নাজাম শেঠির পূর্ববর্তী আমলের আরো অনেক প্রশাসনিক ভুল তুলে ধরা রমিজ রাজার সলোচনার খন্ডন করা হয়েছে পিসিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। রমিজ তার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওতে ২০১৩-১৮ সময়কালে শেঠির আমলের আর্থিক লেনদেনের বিরুদ্ধে আঙুল তোলেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করেছে শেঠির বোর্ড এমনটাই মনে করেন রমিজ।
পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নাজাম শেঠির নিরাপত্তা নিশ্চিতেও অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে। তাই নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও বেশি খরচ করতে হয়েছে পিসিবিকে।
তবে পিসিবি তার বিজ্ঞপ্তিতে বলে, তারা রমিজ রাজাকে কখনোই স্টেডিয়ামে ঢুকতে বাঁধা দেয়নি এবং রমিজের জিনিসপত্র তার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তারা। পিসিবি সব সময়ই রমিজকে স্টেডিয়ামে স্বাগতম জানাবে বলেও উল্লেখ করা আছে বিজ্ঞপ্তিতে।