ভাস-মুনাবীরা ও বিপিএল হাস্যরস

শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি যে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পর বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা ফ্যাঞ্চাইজি লিগ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। কিন্তু এক যুগের ব্যবধানে বিপিএল পরিণত হয়েছে হাস্যরসাত্নক নিম্নমানের এক টুর্নামেন্টে। মানহীন ক্রিকেটারদের মিলনমেলা হিসেবে পরিণত হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটের এই আসর।

বিপিএলের সুবাদেই কিনা মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে সতীর্থ পরিণত হয়েছেন গুরু-শিষ্যে। 

২০১২ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে যাত্রা শুরু বিপিএলের। প্রথম দুই আসরেই মাত করেছিল টুর্নামেন্টটি। বিশ্বসেরা সব তারকারা মাঠ মাতিয়েছেন, তরুণ ক্রিকেটাররা ভবিষ্যতের রসদ সংগ্রহ করেছেন বিপিএল থেকেই।

সময় গড়ানোর সাথে সাথে বিপিএলের জৌলুস কমেছে, ক্রমশই নিচের দিকে নেমেছে টুর্নামেন্টের মান। আন্তর্জাতিক তারকা তো দূরে থাক, মানসম্মত বিদেশি তারকাকে পাওয়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে দুষ্কর। বিপিএলের পরে শুরু হওয়া পিএসএল, সিপিএল, বিবিএল বিপিএলকে ছাড়িয়ে গেছে বিস্তর ব্যবধানে। 

বিপিএলের বিগত দুই আসরে দলগুলো ছিল বিসিবির অধীনে। এবারের আসরের আগে নতুন করে ফ্যাঞ্চাইজির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে দলগুলোর ভার। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা বরাবরই শিরোপা জেতার জন্যই মাঠে নামে। রাজধানীর দলটিতে তারকা ক্রিকেটারের কমতি ছিল না কখনোই। অথচ এবারের আসরের ঢাকার মালিকানা নিয়ে হয়েছে একদফা নাটক।

শুরুতে প্রগতি গ্রুপ তিন বছরের জন্য ঢাকার মালিকানা পেলেও আর্থিক সক্ষমতার নিশ্চয়তা দিতে না পারায় মালিকানা হারায় তাঁরা। পরবর্তীতে নিলামের আগ মূহুর্তে দলটির মালিকানা পায় রুপা গ্রুপ, দলের নাম হয় ঢাকা ডোমিনেটর্স। কিন্তু ঢাকার দল গঠনে যেন উদাসীনতার ছাপ স্পষ্ট।

খেলোয়াড়ি জীবনে আহামরি তারকা ছিলেন না লংকান দিলশান মুনাবীরা। জাতীয় দলের হয়ে মোটে দুই ওয়ানডে এবং পাঁচ ওয়ানডেতে মাঠে নেমেছেন। সুবিধা করতে পারবেন না জেনে আগেই অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন জাতীয় দল থেকে।

মাস তিনেক অবসরে যাওয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত রোড সেফটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন চামিন্দা ভাস, কুমার সাঙ্গাকারাদের সাথে। টুর্নামেন্টটি প্রতিযোগিতামূলক কোনো আসর ছিল না, বরং পিকনিক ক্রিকেট বলা চলে। নিজের দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও জায়গা মেলে না দিলশান মুনাবীরার।

অথচ বাংলাদেশের সেরা টুর্নামেন্ট বিপিএলে ঠিকই দল পেয়েছে মুনাবীরা। ঢাকা ডমিনেটর্স দলে ভিড়িয়েছে তাঁকে। রোড সেফটি টুর্নামেন্টে তাঁর সতীর্থ চামিন্দা ভাস ঢাকাতে তাঁর কোচ। কয়েক মাসের ব্যবধানে সতীর্থ থেকে দুজনে বনে গেছেন গুরু-শিষ্য। বিপিএলের খেলোয়াড় তালিকার দৈন্যদশা বুঝাতে কেবল এই তথ্যটাই যথেষ্ট।

কেবল ক্রিকেটার সংগ্রহ নয়, বিপিএলে হতাশার জায়গা রয়েছে বিস্তর। ম্যাচের উইকেট, সম্প্রচার, নিম্নমানের আম্পায়ারিং – সব মিলিয়ে বিপিএল দেশের বাইরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্রমেই ক্ষুণ্ন করছে। ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ ডিআরএসও নাকি থাকছে না এবারের বিপিএলে!

অথচ বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন ম্যাচের মধ্যে বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে দর্শকদের জন্য। সাউন্ড সিস্টেমে উন্নতি আনা হয়েছে, বিনোদন জগতের তারকারা নাকি উপস্থিত থাকবেন দর্শকদের আনন্দ দিতে। সত্যিই বিপিএলে এখন সবই পাওয়া যায়, কেবল ক্রিকেটটাই দেখা যায় না। মানহীন টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত এক রূপ বিপিএল।

তবে মাঠের বাইরের এসব বিতর্ক ছাপিয়ে যাবে যদি মাঠে নিজেদের সেরা ঢেলে দেন ক্রিকেটাররা। এখন দেখার বিষয় এতসব প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে বাইশ গজে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিতে পারেন কিনা ক্রিকেটাররা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link