১১ বছরের পথচলার পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এখন অনেকটাই ‘বাংলাদেশ প্রবলেম লিগে’ পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর বিপিএল এলেই চরম অব্যবস্থাপনা আর একের পর এক অসঙ্গতি দেখতে দেখতে এখন অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন দর্শকরা।
কিন্তু বিপিএলের প্রতিদ্বন্দ্বীতা নিয়ে দর্শক আগ্রহে ভাটা পড়লেও প্রতিবছরই বিপিএলে দেখা যায় মোটামুটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক দর্শক। সাকিব,তামিম,মাশরাফিদের খেলা দেখতে এখনো উন্মুখ দর্শকরাই যেন কিছুটা প্রাণ নিয়ে আসেন বিপিএলে।
২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত ৯ টি আসর মাঠে গড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে জৌলুশপূর্ণ আসর বিপিএলের। কিন্তু ১১ বছর পার করলেও এখনো হোম এন্ড এওয়ে ভিত্ততে বিপিএলের ম্যাচ আয়োজন করতে পারেনি বিপিএল গভার্নিং কাউন্সিল। যার ফলে আইপিএল বা অন্যান্য বিদেশি ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট গুলোর মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁঝ পাওয়া যায় না বিপিএলে। তাই দর্শকদেরও খুব বেশি সম্পৃক্ত করতে পারে না দলগুলো।
অন্যদিকে, বিপিএলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চরম অব্যবস্থাপনা আর আক্ষেপের গল্পে মোড়ানো থাকে। আর বিপিএলের বেশিরভাগ ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয় মিরপুরের স্লো-লো উইকেটে। লো স্কোরিং ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আমেজ তৈরিতে বরাবরই ব্যর্থ বিপিএল।
দর্শকরা বিপিএল নিয়ে তাই খুব বেশি আগ্রহী হবে না এটাই স্বাভাবিক। বিপিএল নিয়ে দর্শকদের যা আগ্রহ তা সবই বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটারদের ঘিরে।
ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় থাকলেও বাংলাদেশে এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে মাশরাফি,সাকিব, তামিমরা। মাশরাফি তো জাতীয় দলের বাইরে দুই বছর ধরে। কিন্তু এখনো দেশের সফলতম অধিনায়কের জনপ্রিয়তা কমেনি একটুও। মাশরাফির খেলা দেখতে এখনো মাঠে ছুটে আসেন তার ভক্তরা।
বয়সটা ৩৫ এর কোটা পেড়িয়েছে পঞ্চপান্ডবের বাকি চারজনেরও। কিন্তু এখনো ব্যাটে বলে দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসানরা। গতকালই সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ব্যাট হাতে বিধ্বংসী রূপে হাজির হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ২০৯ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে মাঠে থাকা দর্শকদের ‘পয়সা উসুল’ করেছেন সাকিব।
তামিম,মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকরা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন অনেকটাই অতীত। কিন্তু দর্শকরা এখনো মুখিয়ে থাকেন তাদের খেলা দেখতে। বিপিএলে তাই দর্শক সমর্থন পুরোটাই নির্দিষ্ট খেলোয়াড় কেন্দ্রিক।
প্রায় প্রতিবছরই বদলাচ্ছে দল গুলোর মালিকানা। শুধু তাই নয়, একের পর এক বদলেছে বিপিএলের ফরমেট। যার ফলে কোনো ফ্রাঞ্চাইজিই তাদের ফ্যানবেজ সেভাবে তৈরি করতে পারেনি এখনো। প্রথম দুই-একটি মৌসুমের পর বিপিএলে দেখা যায় না খুব বেশি মানসম্মত বিদেশি ক্রিকেটারও। সাকিব,মাশরাফি,মুশফিকদের জনপ্রিয়তার ফলেই এখনো মিরপুরের গ্যালারিতে উৎসবের আমেজ।
যদিও ঢাকার বাইরে বরাবরই চিত্রটা ভিন্ন।বিপিএলের সিলেট আর চট্টগ্রাম পর্বে কানায় কানায় ভর্তি থাকে গ্যালারি। কিন্তু ঢাকা পর্বে গ্যালারিতে যতটা দর্শকই দেখা যায় তার বেশির ভাগই তারকাদের খেলা দেখতেই মাঠে আসেন।