জন্ম যদি তব বঙ্গে…

‘চশমা-আঁটা ব্যাটসম্যানে কয় লম্বা ইনিংস দেখে-
বলের পরে ব্যাট ঘুরিয়ে, ইনিংস দেব গড়ে’

সুকুমার রায় গোপাল কৃষ্ণ বসুকে দেখেননি মনে হয়, দেখলে হয়তো নিজের লেখা ‘শিশুর দেহ’ কবিতাটা এভাবে পাল্টে দিলেও দিতে পারতেন। তবে সুকুমার রায়ের না করা কাজটা আমি যে করে ফেলেছি, তা তো আপনার প্রথম দুই চরণেই দেখতে পাচ্ছেন!

গোপাল কৃষ্ণ বসু ছিলেন ১৯৭০ এর দিকে সুনীল গাভাস্কারের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে অগ্রদূত। পূর্ণ মনোযোগ, নিষ্ঠার সাথে করা অধ্যবসায় আর লম্বা ইনিংস খেলার সামর্থ্য, একজন ওপেনারের মাঝে দলের অধিনায়ক যে যে গুণাবলী খুঁজতে পারেন তার সব কয়টিই ছিল গোপাল বসুর মধ্যে!

ব্যাটিং ছেড়ে বোলিং নিয়ে কথা বললে গোপাল বসু এখানেও ছিলেন বেশ কার্যকর। জমে যাওয়া পার্টনারশিপ ভাঙতে গোপালের অফ ব্রেকের জুড়ি মেলা ছিল ভার, অন্তত পার্ট টাইমারদের মধ্যে তো অবশ্যই! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মূলত ওপেনার হিসেবে খেললেও ঘরোয়াতে তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার।

ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেছেন মোট ৭৮ টি, বেশিরভাগই বাংলার হয়ে। তাতেই ব্যাট হাতে করেছেন ৩০.৭৯ গড়ে ৩,৭৫৭ রান, আটটা সেঞ্চুরির কথা না বললে কিন্তু চলবে না! আর বল হাতেও ঝুলিতে পুরেছেন ৭২ টি উইকেট!

গোপাল বসু ছিলেন মনেপ্রাণে বাঙালি, বেড়ে ওঠাও তাই কলকাতায়, পড়াশোনাও করেছেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই। সেখান থেকেই ক্রিকেটের প্রতি প্রেম, অনুশীলন, আর যা যা থাকে আরকি নিয়তির খেলাতে। সেই খেলায় খেলায় আশার বাতিঘর জ্বলতে জ্বলতে সলতেতে অভিষেকও হয়ে গেল ক্রিকেটার হিসেবে, ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে বিহারের বিপক্ষে।

বয়স তখন মাত্র ২১। ঐটুকু বয়সে ব্যাট হাতে ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণটায় খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচে নিজের প্রেমের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি গোপাল বসু, ৪ বলে ২ রান করেই যে ফিরে গেছেন প্যাভিলিয়নে। পরের ম্যাচটা ছিল আসামের বিপক্ষে। তা সে ম্যাচেও আশায় গুঁড়েবালি, দুই ইনিংসে আমাদের বোসবাবুর রান ৭ বলে ২ আর ৮ বলে ২! তবে ‘এত প্রেম কাছে এসে এলো না’ বলতে বলতে বোলিংটা সেই সিজনে হয়েছিল বেশ চলনসই, ১১.৫ ওভার বল ঘুরিয়ে প্রথম তিন ইনিংসে বাগিয়েছিলেন গুণে গুণে ছয়খানা উইকেট, পুরো সিজনে সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ১৪ তে! অভিষিক্ত পার্টটাইমার হিসেবে নেহায়েৎ মন্দ নয়!

বাংলা, বিহার, উড়িষ্যায় পতন ঘটেছিল সিরাজের, গোপাল বসুও বাংলায় খেলে বিহার আর আসামের সাথে ভাল করতে পারলেন না। তবে বসুর গল্পটা এত দ্রুত শশী দেখেনি। মাঝখানের গল্পটা মূলতবি থাক, সোজা চলে যাব দুলীপ ট্রফিতে। ভারতীয় ঘরোয়া সার্কিটের খুব দামী এই ট্রফিটার দল ঘোষণার সময় দেখা গেল, ইস্ট জোনের হয়ে ডাক পেয়েছেন গোপাল কৃষ্ণ বসু!

সেই টুর্নামেন্টেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন গোপাল বসু, তাও কিনা আবার উত্তপ্ত কড়াইয়ের ফাইনালেই! গোপাল বসুর ইস্ট জোনের ফাইনাল ম্যাচটা ছিল সাউথ জোনের বিপক্ষে। সেই ফাইনালেই ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখাটা পেয়ে যান গোপাল বসু। তা এটুকু বলেই কিন্তু সেই সেঞ্চুরিতে বোসবাবুর খেলাটাকে বলা গেল না। জানতে চান? তাহলে শুনুন সাউথ জোনের বোলিং লাইনআপে কারা ছিলেন – এরাপল্লি প্রসন্ন,ভগৎ চন্দ্রশেখর, শ্রীনিবাস ভেংকটরাঘবন, আবিদ আলী!

এমনিতে বসু পদবীটার আলাদা একটা গাম্ভীর্য আছে। সেই গাম্ভীর্যের কয়েক ছটাক ছিল গোপাল বসুর ব্যাটিংয়েও। দুলীপ ট্রফির পর বাংলার এই চশমা আঁটা ছোটখাটো গড়নের ছেলেটা যে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ইরানী ট্রফিতে বোম্বের বোলিং অ্যাটাকও! আব্দুল ইসমাইল, পদ্মকার শিভকর কে নিয়ে গড়া বোম্বের বোলিং লাইনআপ সামলে সে ম্যাচে গোপাল বসু ছুঁয়ে ফেলেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ল্যান্ডমার্ক- ১৭০!

আর এই ম্যাচটাই গোপাল বসুকে নিয়ে এসেছিল খবরের কাগজের পাতায়। ভারতীয় টেস্ট দলেত ওপেনিং জায়গাটা গোপাল বসুকে দেওয়া যায় কিনা হচ্ছিল সে আলোচনাও। সেই আলোচনার মাঝেই আরো বারুদ ছেটালেন তিনি নিজেই, উড়িষ্যার বিপক্ষে ৯৪ আর বিহারের বিপক্ষে অপরাজিত ১৬৯ রানের ধ্রুপদী ইনিংস খেলে! এরপর যা হয়, শ্রীলঙ্কা সফরে কি আর গোপাল বসুকে না নিয়ে সাগর পাড়ি দেওয়া যায়?

কলম্বোতে ডিম্বাকার মাঠে গোপাল বসু যখন সুনীল গাভাস্কারকে সাথে নিয়ে ব্যাট করতে নামছেন, আন-অফিশিয়াল টেস্টটাতে ভারত তখন ১৪১ রানে পিছিয়ে! একপাশে গোপাল বসু, আরেক পাশে সুনীল গাভাস্কার, ধ্রুপদী দুই তাঁরা প্রান্ত আগলে রাখলে দিনশেষে সূর্য ডুবলে দেখা গেল স্কোরকার্ডে ভারতের কোন উইকেটই পড়েনি, উলটো জমে গেছে ১১০ রান!

১৯৪ রানে যখন ওপেনিং পার্টনারশিপ ভেঙ্গে গেল, প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছেন সুনীল গাভাস্কার। আর গাভাস্কার ফিরে গেলেও চশমাটা ঠিকঠাক সামলেই বল সামলাচ্ছিলেন গোপাল বসু , এক সময় সেঞ্চুরিও পেয়ে যান। অজিত দি সিলভার বলে ক্রিজ ছাড়ার আগে গোপাল বসুর নামের পাশে তখন ১০৪ রান। প্রথম টেস্টের পর দ্বিতীয় টেস্টেও দলে ছিলেন গোপাল, দুই ইনিংসে করেছিলেন ৫৪ আর ৫ – সে টেস্ট ভারত জিতেছিল!

শ্রীলঙ্কা সফরের পর সময় ঘনিয়ে আসল ইংল্যান্ড সফরের। সেই সফরের দল ঘোষণা করতে এক অভিনব পন্থা বেছে নিল নির্বাচকেরা, আয়োজন করা হল এক ট্রায়াল ম্যাচের। ভারত একাদশ খেলবে ‘রেস্ট অফ ইন্ডিয়া’ একাদশের বিপক্ষে। সে ম্যাচেও গাভাস্কারের সাথে ওপেনিংয়ে নেমে করেছিলেন ৭৭ রান। ঐ বছরটায় গোপাল বসু এতটাই তাঁরার মত জ্বলজ্বলে ছিলেন যে বছর শেষে হাতে উঠেছিল ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’-এর পুরস্কারটা!

ইংল্যান্ড সফরের কথা বলছিলাম। ট্রায়াল ম্যাচের আলোয় ঠিকই সুযোগ পেয়ে গেলেন ইংল্যান্ডগামী দলে। তা সেই সুযোগটার সদ্ব্যবহার আর করতে পারলেন না বসু। তবে প্রথম কয়েকটা ম্যাচে বেশ ভালই খেলছিলেন তিনি। ডিএইচ রবিনের বিপক্ষে যেমন ম্যাচ বাঁচানো ৫৯ রান করলেন, অক্সফোর্ড আর কেমব্রিজের বিপক্ষে করলেন যথাক্রমে ৬৬ আর ৪০। বল হাতেও কেমব্রিজের ম্যাচে নিলেন ২৩ রানে ৪ উইকেট!

তবে ঐ পর্যন্তই। পুরো সফর শেষে দেখা গেল গোপাল বসুর রান ৩২৮, গড় মাত্র ১৮.২২! আর উইকেট সংখ্যাও পুরো সফরেও ঐ চারটিই! আন-অফিশিয়াল ম্যাচগুলোর পর টেস্ট ম্যাচে আর নামা হল না গোপাল বসুর। ভারত গাভাস্কারের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিল নানা সময়ে একনাথ সোলকার, ফারুক ইঞ্জিনিয়ার, সুধীর নায়েকের একেকজনকে!

তবে ওয়ানডেতে বসুর সুযোগ আবার চোখ মেলেছিল। হেডিলিংলিতে প্রথম ওয়ানডেতে হারার পর ওভালের শেষ ওয়ানডেতে দলে সুযোগ পান গোপাল বসু। তবে তিন নম্বরে নেমে সে ম্যাচেও সুবিধা করতে পারেননি বসু। মাত্র ১৩ রানের মাথায় রবিন জ্যাকম্যানের হাতে ধরাশায়ী হন তিনি, ভারতও অলআউট হয়ে যায় ১৭১ রানে। তবে সে ম্যাচে বসুকে নেওয়ার আরেকটা কারণও ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে। তিন পেস বোলারের পাশাপাশি তিনি খেলেছিলেন একমাত্র স্পিনার হিসেবে। নিজের কোটার ১১ ওভারের পুরোটা করে ৩৯ রানের খরচায় তিনি নিয়েছিলেন ডেভিড লয়েডের উইকেট!

ব্যাস, এটুকুই! এরপর আর কোনদিন কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হল না বসুর। প্রুডেন্সিয়াল ট্রফির ঐ ম্যাচটাই হয়ে রইল গোপাল কৃষ্ণ বসুর একমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচ!

তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যার্থ হয়ে ভারতে ফিরে ঘরোয়াতে আবার ছড়ি ঘোরানো শুরু করেন বসু। ইরানি ট্রফিতেই কর্ণাটকের বিপক্ষে করেন ৬২ আর ১০০। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভারত সফরের প্রস্তুতি ম্যাচেই ‘ভারত বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশ’ এর হয়ে এন্ডি রবার্টস, কেইথ বয়েসের দলের বিপক্ষে করেন ৪৪! ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঐ দলটার বিপক্ষে মোটামুটি ভাল বলা যায় এই রানটাকে।

আগেই বলেছি, ওভালের ম্যাচটা ছিল বসুর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ । তবে বসুর সুযোগ এসেছিল আরো একটা, যখন সুনীল গাভাস্কার ইনজুরিতে পড়লেন। গাভাস্কারের ইনজুরির পর মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছিল সবাই, বসুর এবার মাদ্রাজে টেস্ট অভিষেকটা ঘটবে, ছিলেন ১৪ সদস্যের দলেও। তবে জগতের সবকিছুতেই যে অনিশ্চয়তার দোলাচল থাকে, বসু তা বুঝলেন ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণ আগে। সবাই যখন নিশ্চিত, ভারতের টেস্ট ক্যাপ পরতে যাচ্ছেন বসু, ঠিক তখনই নির্বাচকেরা তিন স্পিনার আর তিন অলরাউন্ডার নিয়ে একাদশ সাজানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। ওপেনিংয়ে পাঠানো হল সোলকার আর ফারুক ইঞ্জিনিয়ারকে। গোপাল বসুর আর আন্তর্জাতিক ওপেনিংয়ের লক্ষী দেখা হল না!

কিন্তু এরপর কি হল? বসুকে আর আলোয় দেখা গেল না কেন? কিংবা এত এত প্রতিভা নিয়ে গড়ে তোলা ক্রিকেট প্রেম আর কেন কাছে এল না? গোপাল বসু তা বলেছেন অনেক অনেক বছর পর। ভারতীয় মিডিয়া এবিপির সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্যকে তিনি বলেছেন, তিনি আরেকটা সুযোগ পেয়েছিলেন, আরো ভাল কিছু হতে পারত তাতে। কিন্তু তিনি ততদিনে কার্ড খেলা আর অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে গেছেন, অ্যাজমাটাও বেড়ে গেছে অনেক অনেক বেশি।

এখানে একটা ঘটনা মনে হয় না বললে বোসবাবুর গল্পটা ঠিকঠাক বলা হবেনা। ইরানি ট্রফির ম্যাচের পর, সেই মাদ্রাজ টেস্টটার আগে, সব খেলোয়াড়েরা ট্রেনে করে আহমেদাবাদ থেকে বোম্বেতে ফিরছিলেন। ট্রেনের বগিতে ভারতীয় অধিনায়ক টাইগার পতৌদি গোপাল বসুকে আঙুলের ইশারায় ডাকেন, ‘হেই ইউ’ বলে। ডেকে সিগারেট ধরাবার একটা লাইটার দিতে বলেন বসুকে।

গোপাল বসু এতে নিজের মেজাজ হারিয়ে বসেন। সোজা গিয়ে পতৌদির সিগারেটটা নিয়ে পায়ে মাড়িয়ে দেন, নিজের পকেট থেকে একটা সিগারেট ধরান আর সেটা পতৌদির দিকে বাড়িয়ে দেন। এবিপির ভট্টাচার্যকে গোপাল পরে বলেছেন, ‘উনি ওভাবে ডাকবেন কেন? আমরা তো ওয়েটারদেরও ওভাবে ডাকিনা।’

নিজের ঐ কাজের জন্যে অবশ্য গোপাল বসু পরে এটাও বলেছেন, একটু বেশিই করে ফেলেছিলেন তিনি। তবে এ ঘটনার জন্যে তিনি মাদ্রাজ টেস্টে সুযোগ পাননি এটা মানতেও নারাজ তিনি। গোপাল বসুর মুখেই শোনা যাক, ‘কি করতাম আমি? সর্বোচ্চ একটা ফিফটি। কিন্তু সোলকার ব্যাটের সাথে বলেও সমান অবদান রাখতে পারত। তাছাড়া শর্ট লেগে সে ছিল গোটা ভারতেরই সেরা ফিল্ডার।’

ভাগ্যের পরিহাস কিনা জানিনা, সোলকার সে ম্যাচে দুই ইনিংসে করেন ৪ আর ১৫, বল তো হাতেই নেননি। কিন্তু হ্যা, শর্ট লেগে ৪ টে ক্যাচ তিনি ধরেছিলেন!

গোপাল বসু ১৯৭৭-১৯৭৮ পর্যন্ত রঞ্জি ট্রফিটা খেলেছেন নিয়মিতই। হরিয়ানার বিপক্ষে ৬৭ রানে ৫ উইকেটও নিয়েছেন, যেটা কিনা তাঁর একমাত্র পাঁচ উইকেটের মাইলফলক। হায়দ্রাবাদের সাথে শেষ ম্যাচটাতে তিনি করেন দুই ইনিংসে ৪০ আর ৪৯। এরপরের মৌসুমে দুলীপ ট্রফিতে মাত্র একটা ম্যাচে সুযোগ পান গোপাল বসু। নর্থ জোনের বিপক্ষে সে ম্যাচে করেন ০ আর ৪৫!

জীবননানন্দ বলেছিলেন, প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়। বাঙালিয়ানার ক্রিকেট কিংবা ক্রিকেটের বাঙালি রূপকথা যাই বলুন, মহানির্বাণ লাভ করা তার সারা হয়ে গেল! গোপাল বসু একদিন অবসর নিয়ে নিলেন!

অবসরের পর গোপাল বসু পেশা হিসেবে বেছে নিলেন সাংবাদিকতাকে, কোলকাতার দৈনিক ‘আজকাল’ এ নিয়মিতই লেখালেখি করতেন তিনি। তবে ক্রিকেট ছেড়ে দিলেও, ক্রিকেট কখনও গোপাল বসুকে ছেড়ে যায়নি। ২০০৭-২০০৮ এ যে বছরটায় বিরাট কোহলি আর তাঁর দল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল, সে দলটার ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেই গোপাল কৃষ্ণ বসুকেই।

এছাড়াও বেঙ্গলের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন ২০০৯-২০১০ অবধি। তবে এরপর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় তিনি সেই দায়িত্বটা ছেড়ে দেন।

তবে গোপাল বসু ততদিনে কোলকাতার নামী কোচদের মধ্যে একজন। এখন তিনি ধাকুরিয়া ক্রিকেট ক্লাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গোপাল বসু তাঁর ছেলে অরিজিৎকেও ক্রিকেটার বানিয়েছেন। অরিজিৎ আবার ফার্স্ট ক্লাস অভিষেকেই ত্রিপুরার সাথে সেঞ্চুরি (১০১) হাঁকিয়েছেন।

২০১৬ সালে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল গোপাল বসুকে আজীবন সম্মাননা পদক দেয়। সেই পদক হাতে লালিমার মঞ্চে দাঁড়িয়ে কি গোপাল বসু কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাদ্রাজ টেস্ট দেখতে পাচ্ছিলেন? সেই দেখতে পাওয়াতে কি আক্ষেপ ছিল? থাকলে সেটা কিসের প্রতি? ক্রিকেটের? ঈশ্বরের? নাকি নিজের প্রতি?

তা আমরা জানিনা। তবে যা হতে পারতেন তা যে হননি, তা কিন্তু জানে গোটা ক্রিকেটটাই!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link