লিটন দাস ৪২ বলে ৭০ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন। এ আর এমন কী!
তিনি যে মানের ব্যাটসম্যান এবং এখন তার যে অভিজ্ঞতা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এমন ইনিংস তার নিয়মিত খেলা উচিত। আর এরকম বিপিএল-টিপিএলে তো এসব ইনিংস ভুড়ি ভুড়ি খেলা উচিত এবং আসরে ৪৫০-৫০০ রান করে ফেলা উচিত চোখ বন্ধ করে। না পারা মানে নিজের প্রতিভা আর সামর্থ্যের প্রতি সুবিচার করতে না পারা।
তো, এরকম একটা ইনিংস নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। তার পরও উচ্ছ্বাস জাগছে। দারুণ উষ্ণতায় মনটা ভরে গেছে।
যারা স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান, নান্দনিক ব্যাটসম্যান, তাদের ব্যাপারটিই এমন। আপনি নিখাদ ক্রিকেটপ্রেমী হলে, তাদের একটি-দুটি শট মুহূর্তেই আপনার মন ভাল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। লিটন সেরকম শট কয়েকটি খেলেছেন।
মাশরাফি বিন মুর্তজা ক্রিকেট খেলছেন প্রায় ২২ বছর ধরে। আজকে আপনি খেলা দেখে থাকলে, মাশরাফির চোখ-মুখের বিস্ময়টুকুও হয়তো খেয়াল করেছেন। কুমিল্লার রান তাড়ায় চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলের ঘটনা সেটি। মাশরাফি বল করেছিলেন হাফ ভলি থেকে আরেকটু টেনে। লিটন মৃদু পায়ে একটু এগিয়ে ব্যাট বাড়িয়ে দিলেন। স্রেফ আলতো ছোঁয়া লাগল যেন ব্যাটে। কিন্তু বল ছুটল গুলির বেগে। এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার।
মাশরাফির চাহনিটা তখনই দেখা গেল টিভি পর্দায়। রিয়েল টাইমের পর রিপ্লেতে আবার দেখলাম। ২২ বছর ধরে ক্রিকেট খেলা বোলারের চাহনি বলছিল, ‘এটা কী খেললি রে ভাই, এই শট কীভাবে সম্ভব!’
ওই শটের রেশ কাটার আগেই আরেকটি ঘোর লাগানো শট। পরের বলেই। ডেলিভারি আগের চেয়েও ভাল। শটও আগের চেয়ে নিখুঁত। আরও মোহনীয়।
মাশরাফি এবার ডেলিভারিটি করেছিলেন আরও একটি টেনে। এগিয়ে এসে হাফ ভলি করে নেওয়ার চান্স নেই। লিটন সেই চেষ্টাও করলেন না। ‘অন দা আপ’-ই খেললেন। আবারও ব্যাট বাড়িয়ে দিলেন। আগের চেয়েও আলতো করে, বাতাসও হয়তো বুঝতে পারল না। পুরোপুরি ড্রাইভও করলেন না, থাকল না তেমন কোনো ফলো থ্রু। বলে রেশমি পেলব বুলিয়ে দিলেন। এমনভাবে, বল যেন আবার ব্যথা না পায়!
কিন্তু টাইমিং এবার আরও দারুণ। প্লেসমেন্ট আরও দুর্দান্ত। সুইপার ফিল্ডারের কোনো সুযোগই থাকল না ফেরানোর।
এবার মাশরাফি কোনো চাহনি দেননি। তিনি তো জানেন, লিটন পারেন। দুটি শটের কথাই বললাম। সব শটের কথা বলতে গেলে মহাকাব্য লিখতে হবে।
চোখে মায়াঞ্জন বুলিয়ে দেওয়া শট তিনি আরও খেলেছেন। নিত্যই খেলেন। কিন্তু আজকের মত ইনিংস তার আরও অনেক খেলা উচিত। ঘন ঘন। বেশি বেশি। ক্যারিয়ারের যে পর্যায়ে আছেন, তার এখন বিশ্বসেরাদের দিকে নজর দেওয়া উচিত।
শটের কথা বলছিলাম। আগের দিন ২২ বলে ৪০ রানের ইনিংসের পথেও চোখ জুড়ানো সব শট খেলেছেন। কালকের আর আজকের ইনিংস দুটির একটা ব্যাপার হল, চট্টগ্রামের উইকেট এবার ঠিক বরাবরের মত ব্যাটিং সহায়ক নয় এখনও পর্যন্ত। এই দুই ম্যাচেই উইকেট ছিল একটু স্টিকি, খানিকটা মন্থর, বল পিচ করে হালকা থমকে এসেছে ব্যাটে। শট খেলা খুব সহজ নয়। লিটনের মত ‘টাচ’ ব্যাটসম্যানদের জন্য নান্দনিক শট খেলা আরও কঠিন। কিন্তু লিটনের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে তা?
এই দুই ম্যাচে রিজওয়ানের মাপের একজন ব্যাটসম্যানও খুব একটা সাবলীল হতে পারেননি। তার ভূমিকা যদিও ছিল ইনিংস টেনে নেওয়া, তার পরও, এই ধরনের উইকেটে স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি তাকে। অবশ্য শুধু তাকে নয়, স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি অন্য সবাইকেই। বিশেষ করে, ইনিংসের শুরুতে এই দুই ম্যাচে টাইমিং পেতে ভুগেছেন অন্য সব ব্যাটসম্যান। ব্যতিক্রম কেবল লিটন।
কারণ, তিনি ব্যতিক্রমই। আলাদা। জাতটাই ভিন্ন। উচ্চতাটাই অন্য।
– ফেসবুক থেকে