তাঁকে ডাকা হত ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। স্টাইলিশ ব্যাটিংয়ের দ্যুতিতে আলো ছড়িয়েছে বারবার, প্রতিটি রান যেন শিল্পীর তুলির আঁচড়। কিন্তু মুগ্ধতা জাগানিয়া ব্যাটিংয়ের ছিটেফোঁটা টেনে আনতে পারেননি জাতীয় দলের জার্সিতে। ফলে অল্পতেই থেমে গেছে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। তিনি অশোক মালহোত্রা, ভারতীয় ক্রিকেটের আফসোস।
ভারত জাতীয় দলের জন্য পাঞ্জাব বরারবই এক উর্বরভূমি। মহিন্দর অমরনাথ, নভ্যোজিৎ সিং সিধু, লালা অমরনাথরা পাঞ্জাব থেকে উঠে এসেই আলো ছড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। পরবর্তীতে হাল ধরেছেন যুবরাজ সিং, হরভজন সিংরা; বর্তমানে ভারত জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ আরেক পাঞ্জাবি আর্শদ্বীপ সিং। সেই পাঞ্জাবের অমৃতসরেই জন্ম অশোক মালহোত্রার, ছোটবেলা থেকেই মজেছেন ক্রিকেটের প্রেমে।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ভারতের ব্যাটিং আইকন গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের উত্তরসূরি ভাবা হতো তাঁকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে রীতিমত রান বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। তবে কেবল রান করা নয়, তাঁর সুখ্যাতির মূলে স্টাইলিশ ব্যাটিং। বাইশ গজে যেন শিল্পীর তুলির আঁচড় দিয়ে মোহনীয় সব চিত্র আঁকতেন। দর্শকরা মোহাবিষ্ট হয়ে থাকত তাঁর ব্যাটিংয়ে।
১৯৮২ সালে চেন্নাইতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভালই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু ৩১ রানের থাকাকালীন সময়ে ঘটে যায় অঘটন, সতীর্থের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে শিকার হন রান আউটের। অপমৃত্যু ঘটে দারুণ গতিতে এগোতে থাকা এক ইনিংসের।
কিন্তু ঘরোয়ার পারফরম্যান্স তিনি কখনোই জাতীয় দলে টেনে নিতে পারেননি। পরের টেস্টেই ফেরেন রানের খাতা খোলার আগে। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ এই তিন বছরে মোটে সাতটি টেস্টে সুযোগ পান। ক্যারিয়ারে সবেধন নীলমণি বলতে এক ওয়াংখেড়েতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ফিফটি। সেদিনই ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৭২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে সাত টেস্টে ২২৬ রান করেন তিনি। তবে জাতীয় দলের হয়ে ১৯৮৫ সালে বিশ্ব ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জেতেন তিনি।
সাদা বলের ক্রিকেটেও ক্যারিয়ারটা এগোয়নি, থমকে গেছে মাত্র ২০ টেস্ট খেলেই। মাত্র এক ফিফটিতে ৩০.৪৬ গড়ে ওয়ানডেতে তাঁর সংগ্রহ ৪৫৮ রান। জাতীয় দলে রান না পেলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা জুড়ে হায়দ্রাবাদের ব্যাটিংকে টেনেছেন একা হাতে।
বেশ বড় একটা সময়জুড়ে ছিলেন রঞ্জি ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ঘরোয়াতে ১৮ সেঞ্চুরিতে ৫২.৪৯ গড়ে ৭২৭৪ রান করেন তিনি। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত বোধহয় ১৯৮৯ সালে বাংলার বিপক্ষে অপরাজিত ২৫৮ রানের ইনিংস। সেদিন রীতিমত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে তিনি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
খেলা ছাড়লেও ক্রিকেটের প্রতি যেন মোহ কমেনি অশোকের। জড়িয়ে পড়েন ক্রিকেট কোচিংয়ের সাথে, নিজের নামে খোলেন ক্রিকেট একাডেমি। লেগে পড়েন ভারতের ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে। ভারতের যে কজন গুটিকয়েক লেভেল থ্রি কোর্স করা কোচ আছেন, অশোক মালহোত্রা তাঁদের মধ্যে একজন।
একবার তো ভারত জাতীয় দলের কোচ জন রাইট নিজের দেশে ফিরলে অন্তবর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় দলের কোচ হিসেবে। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বিসিসিআই ঘোষিত পরামর্শক কমিটিতে যতিন প্রানজাবে এবং সুলক্ষণা নায়েকের সাথে আছেন তিনিও। এই তিনজনই বেছে নেবেন জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ নির্বাচক হবেন কারা।