মাদ্রিদের ভবিষ্যতে চেলসির হানা!

ওসাসুনার বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার মিনিট দুয়েক আগে মাঠে নেমেছিলেন আলভারো রদ্রিগেজ। ১৮ বছর বয়সী এ উরুগুইয়ানের তাতেই হয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লা লিগায় অভিষেক। করিম বেনজেমার জায়গায় এসে অভিষেকটা খারাপ করেননি তিনি। ২-০ গোলে জেতা ম্যাচে শেষ গোলটা এসেছিল তাঁর করা এসিস্ট থেকে।

আলভারো রদ্রিগেজ মূলত রিয়াল মাদ্রিদ একাডেমির ফসল। রিয়াল মাদ্রিদ কাস্তিয়ার হয়ে খেলেছেন। আর শুরুটা একাডেমি, লা ফেব্রিকা থেকে। সদ্য শেষ হওয়া অনূর্ধ্ব-২০ সাউথ আমরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে দিয়ে নজরে আসেন তিনি। ব্রাজিলের কাছে হেরে সে টুর্নামেন্টে তাঁর দল রানার্সআপ হলেও আলভারো রদ্রিগেজ পুরো টুর্নামেন্টে ছিলেন দুর্দান্ত। ৫ গোল করে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।

আর এরপরেই রিয়াল মাদ্রিদ মূল দলে সুযোগ পান তিনি। যদিও তিনি এখনও রিয়াল মাদ্রিদ মূল দলের নিবন্ধিত সদস্য নন। তবে মাস খানেকের ব্যবধানে জীবনটাই পাল্টে গিয়েছে আলভারো রদ্রিগেজের। বেনজেমার ভবিষ্যৎ রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে তাঁকে।

মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে বরাবরই একাডেমির খেলোয়াড় নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলেন। কিন্তু তাঁর কথার সাথে কাজের প্রতিফলন মেলে কমই। এই মুহূর্তে ইউরোপের দল গুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড় তৈরি করছে, রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমি- লা ফেব্রিকা। কিন্তু কখনোই তেমন একাডেমির খেলোয়াড়কে সুযোগ দিতে দেখা যায়নি তাঁর সময়কালে।  কালেভদ্রেই একাডেমির খেলোয়াড়দের মূল একাদশে ঠাই মেলে।

আর এ কারণেই রিয়াল মাদ্রিদের কাছ থেকে হাতছাড়া হতে বেশ কিছু তরুণ ফুটবলার। এই তালিকায় আছে রাফায়েল মারিন আর সার্জিও আরিবাসের নাম। মাদ্রিদের একাডেমি লা ফেব্রিকা থেকেই বড় হয়েছে এ দুই ফুটবলার। কিন্তু মারিনের বয়স ২০ পেরিয়ে গেলেও এখনও রিয়াল মাদ্রিদ কাস্তিয়ার হয়েই খেলছেন তিনি। যে বয়সে অন্যান্য খেলোয়াড়দের ইউরোপের দলগুলোর মধ্যে কাড়াকাড়ি হয় সেখানে মারিন মাদ্রিদেও সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার মাদ্রিদের বাইরেও যেতে পারছেন না।

তবে এবার মাদ্রিদ ছাড়তে পারেন এই ডিফেন্ডার। গুঞ্জন আছে, তাঁকে দলে ভেড়াতে পারে ইংলিশ ক্লাব চেলসি। লম্বা, একই সাথে দেহের শক্ত গড়ন, দারুণ ফুটবল প্রতিভার কারণে চেলসির রাডারে চলে এসেছেন এ সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। এখন দেখার পালা, মাদ্রিদ তাঁকে দলবদলের জন্য মুক্ত করে দেয় কিনা।

কিছুটা অবাক করা ব্যাপার হলেও, এই মুহূর্তে রিয়াল মাদ্রিদের ফুলব্যাকে বিকল্প প্রয়োজন। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত মারিনকে দলে ভেড়ায়নি, যা হতে পারতো আনচেলত্তির দলে সেরা রিপ্লেসমেন্ট। কিন্তু মারিনকে নিয়ে দলে নেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সামান্য কানাঘুঁষাও শোনা যায়নি।

মাদ্রিদ একাডেমি থেকে উঠে আসা আরেক প্রতিভার নাম সার্জিও আরিবাস। আলভারো রদ্রিগেজের মতো তিনিও রিয়াল মাদ্রিদের মূল দলের বিবেচনায় আছেন। এমনকি দিন দুয়েক বাদে লিভারপুলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচের জন্যও স্কোয়াডে আছেন। তবে ম্যাচে সুযোগ পাবেন কিনা, সেটা অনিশ্চিত।

কিন্তু স্প্যানিশ এ মিডফিল্ডারের বয়স ২০ পেরিয়ে ২১ এ পড়েছে। তারপরও আনচেলত্তির সুনজরে আসতে তাঁর দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। যদিও সুনজরে আসলেও মূল দলের নিয়মিত মুখ হওয়াটা এখন পর্যন্ত স্বপ্নের মধ্যেই আছে।

মাদ্রিদের একাডেমির খেলোয়াড়দের সীমাবদ্ধতা কিংবা প্রতিবন্ধকতা মূলত এখানেই। দারুণ প্রতিভা থাকা স্বত্ত্বেও রিয়াল তাদেরকে মূল দলে তাদের সুযোগ নেই বললেই চলে। যার কারণে, ফুটবলারদেরও ভিন্ন পথ খুঁজতে বাধ্য হতে হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, রিয়াল মাদ্রিদ বরাবরই বিশ্বের সেরা পারফর্মারদের উপরে চোখ রাখে। আর এ কারণে তাদের একাডেমি থেকে উঠে আসা ফুটবলারদের ব্রাত্য হয়েই থাকতে হয়।

তাই দিনশেষে, লা ফেব্রিকা থেকে যে পরিমাণ উঠতি ফুটবলার তৈরি হয় তা লস ব্ল্যাঙ্কোসদের বিশেষ তেমন কাজে আসে না। একই সাথে এ সব ফুটবলারদের ক্যারিয়ারেরও বেশ কয়েকটা বছর নষ্ট হয়। কারণ মাদ্রিদ একাডেমিতে বড় হওয়া ফুটবলারদের তো মাদ্রিদ জার্সি গায়ে চাপানোর দিকেই লক্ষ্য থাকবে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link