বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নে শ্রীশান্ত!

স্বীকৃত ক্রিকেটে শান্তাকুমারান শ্রীশান্ত সর্বশেষ খেলেছেন ৭ বছর আগে।

২০১৩ সালে আইপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হন তিনি। তবে আপিল করার পর নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে ৭ বছর করা হয়। সেপ্টেম্বরে শেষ হয়েছে শ্রীশান্তের নিষেধাজ্ঞা। মাঠে ফেরার জন্য গত জুন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন তিনি।

শ্রীশান্থের বয়স এখন ৩৭ বছর। এই বয়সে অনেক পেসারেরই ক্যারিয়ার থেমে যায়। তবে শ্রীশান্ত থামতে চাচ্ছেন না। তিনি নতুন করে আবার শুরু করতে চান। নিজ দেশে অনুষ্ঠিত ২০২৩ বিশ্বকাপে খেলতে চান শ্রীশান্ত। দেশের হয়ে জিততে চান শিরোপাও।

মাঠে ফেরার জন্য সুযোগ পেয়েছেন তিনি। আগামী মাসে শুরু হবে ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফি। সেই টুর্নামেন্টে খেলার জন্য কেরালার ২৬ জনের প্রাথমিক দলের হয়ে ক্যাম্প শুরু করেছেন শ্রীশান্থ। এখন লক্ষ্য কেরালার মূল দলে জায়গা করে নেওয়া।

নিজের ফেরা নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে শ্রীশান্ত বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে আমাদের প্রথম ম্যাচ হবে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, ভারতের হয়ে আমার সবশেষ ম্যাচও এই মাঠেই (২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল)। জীবনের তাই একটি চক্র পূরণ হবে। কেরালা কখনোই মুশতাক আলি ট্রফি জেতেনি। কিন্তু এবার আমাদের দল দারুণ। আমি খুবই রোমাঞ্চিত। টিনু ইয়োহানান (কোচ) ও সাঞ্জু স্যামসন (অধিনায়ক) বলেছেন, ফেরা উপলক্ষ্যে তারা আমাকে ট্রফি উপহার দিতে চান।’

এই টুর্নামেন্টই শুধু নয়, সামনে ঘরোয়া সব আসরেই খেলতে চান তিনি। শ্রীশান্ত বলেন, ‘তবে আমি শুধু এই টুর্নামেন্ট নিয়েই ভাবছি না। ইরানি ট্রফি, রঞ্জি ট্রফিও জিততে চাই। ভালো করতে থাকলে আরও সুযোগ পাব। আইপিএল দলগুলি থেকেও আমার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আমাকে স্রেফ নিশ্চিত করতে হবে যেন ফিট থাকি ও ভালো বোলিং করি।’

নিষেধাজ্ঞার সময়ে জীবিকার তাগিদে অনেক কিছুই করতে হয়েছে শ্রীশান্তকে। টিভি শো থেকে শুরু করে অভিনয় পর্যন্ত করেছেন ভারতীয় এই পেসার। নিজের সেই অভিজ্ঞতারও বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। শ্রীশান্ত বলেন, ‘যখন খেলতে পারছিলাম না, পরিবার চালাতে অনেক কিছু করতে হয়েছে আমাকে। ঝলক দিখলা যা-তে অংশ নিয়েছি ছয় সপ্তাহ ধরে, বিগ বসে রানার-আপ হয়েছি, ফিয়ার ফ্যাক্টর করেছি। বলিউডের দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছি। চরিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী শরীর বানাতে হয়েছিল। আমি সুযোগগুলো নিয়েছি, শিখেছি, আয়ও করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘খেলাধুলায় ভিন্ন ধরনের শরীর ও ট্রেনিং প্রয়োজন হয়। শীর্ষ স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ রামজি শ্রীনিবাসনের সঙ্গে কাজ করেছি আমি। বোলিং কোচ টি শেখর আমার বোলিংয়ের নতুন ভিডিও দেখে বলেছেন, তার কাছে মনে হচ্ছে ২০০৭ বিশ্বকাপের আমাকে দেখছেন।’

তবে নিষেধাজ্ঞার শেষের দিকে এসে নিজের ফিটনেস নিয়েও কাজ করতে ভোলেননি শ্রীশান্ত। এমনকি বলের গতিও কমেনি বলে দাবি করেছেন তিনি। শ্রীশান্ত বলেন, ‘খেলাধুলায় ভিন্ন ধরণের শরীর ও ট্রেনিং প্রয়োজন হয়। শীর্ষ স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ রামজি শ্রীনিবাসনের সঙ্গে কাজ করেছি আমি। বোলিং কোচ টি শেখর আমার বোলিংয়ের নতুন ভিডিও দেখে বলেছেন, তার কাছে মনে হচ্ছে ২০০৭ বিশ্বকাপের আমাকে দেখছেন। এখন ১৩৫ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার গতর মধ্যে বোলিং করছি। প্রয়োজন হলেই ১৪০ কিলোমিটার ছাড়াতে পারি। ভোর তিনটায় ঘুম থেকে উঠেও আউটসুইঙ্গার, ইনসুইঙ্গার, ইয়র্কার করতে পারি। আমার রান-আপ আগের চেয়ে ছোট হবে, তবে নিশানা আরও ভালো হবে।’

২৭ টেস্ট ও ৫৩ ওয়ানডে খেলা ৩৭ বছর বয়সী এই পেসার স্বপ্ন দেখছেন দেশের হয়ে পরের বিশ্বকাপে খেলার। ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ী এই ক্রিকেটার পরের বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে বলেন, ‘এটা সত্যি যে, এই বয়সে খেলাধুলায় কিছু অর্জনের বাকি থাকে না। কিন্তু তার পরও, লিয়েন্ডার পেজ ৪২ বছর বয়সে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন, রজার ফেদেরার দেখিয়ে চলেছেন। ক্রিকেটে মিসবাহ-উল-হক, ব্র্যাড হগ, শচিন টেন্ডুলকার, রাহুল দাবিড়রা দেখিয়েছেন, এই বয়সে ভালো করা সম্ভব। ফাস্ট বোলারের জন্য কাজটি সহজ নয়। তবে ফাস্ট বোলার হিসেবে যদি ইতিহাস গড়তে হয়, আমি তা-ই করব। আমার মূল লক্ষ্য ২০২৩ বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেওয়া ও বিশ্বকাপ জয় করা।‘

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link