দূরপাল্লার ‘নক্ষত্র’
শুভমান গিলের স্কিল কোথায়? এটা অবশ্য সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ওয়াসিম জাফর খুঁজে বের করেছেন। ‘সোজা ব্যাট চালাতে পারেন’ বা ‘মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন’ কি ‘বাউন্স খেলাতে দক্ষ’ - বিশেষজ্ঞ মত অনুযায়ী এসবই শুভমন গিলের দক্ষতা। অবশ্য শুভমান গিলের ক্লাসিক স্কিল আর সহজাত স্ট্রোক খেলার দক্ষতাও সুনীল গাভাস্কার, রাহুল দ্রাবিড় আর শচীন টেন্ডুলকারকে আকৃষ্ট করেছিল।
ভারতের টেস্ট ক্যাপ নম্বর ২৯৭। এই অস্ট্রেলিয়া ট্যুরেই যেটা পরিয়ে দেওয়া হল শুভমান গিলের মাথায়। এই কয়েকদিন আগেই জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘দ্য ক্রিকেট মান্থলি’ই শুভমান গিলকে আখ্যায়িত করেছিল সবচাইতে প্রতিভাবান তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে যারা কিনা এই দশকে ক্রিকেটে ছড়ি ঘোরাতে পারেন। সেই শুভমান গিলের টেস্ট অভিষেকটা হয়ে গেল মেলবোর্নে।
শুভমান গিল নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। অবশ্য আগমনী বার্তার চাইতে প্রথমবারের মত হেডলাইনে এসেছিলেন বলাও একেবারে ঠিক শব্দচয়ন হবে। সে যাক, ২০১৮ তে পাঞ্জাবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এক ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে তিনি ভারতের জয়ে রেখেছিলেন দারুণ অবদান। বলতে গেলে একা হাতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
শুভমান গিলের স্কিল কোথায়? এটা অবশ্য সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ওয়াসিম জাফর খুঁজে বের করেছেন। ‘সোজা ব্যাট চালাতে পারেন’ বা ‘মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন’ কি ‘বাউন্স খেলাতে দক্ষ’ – বিশেষজ্ঞ মত অনুযায়ী এসবই শুভমন গিলের দক্ষতা। অবশ্য শুভমান গিলের ক্লাসিক স্কিল আর সহজাত স্ট্রোক খেলার দক্ষতাও সুনীল গাভাস্কার, রাহুল দ্রাবিড় আর শচীন টেন্ডুলকারকে আকৃষ্ট করেছিল।
যেসব কোচেরাই গিলের সাথে কাজ করেছেন, সবাই বলেছেন গিলের মধ্যে সেরা ব্যাটসম্যান হবার সব গুণই আছে। শুভমান গিলের ফ্রন্ট ফুট আর ব্যাকফুটে ডিফেন্স করতে পারার সক্ষমতাই প্রমাণ করে ক্রিকেটের বেসিক ঠিক কতটা শক্ত তার। শুভমান গিল শট খেলতে পারেন মাঠের চারপাশে- এটা অবশ্য রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে দীর্ঘদিন অনূর্ধ্ব-১৯ আর ভারত ‘এ’ দলে থাকার ফল।
শুভমান গিলের উত্থান কিন্তু বেশ দ্রুতই বলা চলে। রঞ্জি ট্রফির ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে ১০৪ গড়ে শুভমন করেছিলেন ৭২৮ রান। এরপর দ্রাবিড়ের ভারত-এ দলেও সুযোগ মেলে শুভমনের। তখনই যুবরাজ সিং বলেছিলেন, ”শুভমান বিশেষ প্রতিভাবান। অনেক বছর পর আমি এমন কোন তরুণকে খুঁজে পেলাম যার ব্যাটিং দেখতে আমি পছন্দ করি।’ যুবরাজ তো শুভমনকে ২০১৯ এর পরই ভারতীয় দলে দেখতে চেয়েছিলেন।
যুবরাজ সিং যতটা পরে দেখতে চেয়েছিলেন, শুভমন গিলকে অতটা অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০১৯ এর জানুয়ারীতেই, অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপের কয়েক মাস পরই শুভমন গিল ভারতীয় দলে ডাক পান। নিউজিল্যান্ড সফরে দুটো ম্যাচ খেলেন তিনি, তবে কোনটাতেই এক অঙ্ক পার করতে পারেননি।
তবে ‘এ’ দলে ফিরে আবার ছড়ি ঘোরাতে থাকেন গিল। ঐ বছরেই শেষদিকে ‘এ’ দলের হয়ে ক্যারিবিয়ান সফরে গিয়ে সিরিজসেরার পুরষ্কার জেতেন তিনি। তবে এতেও নির্বাচকেরা ভারত দলের উইন্ডিজ সফরে তাকে দলে রাখেনি। তা এতে যদি তিনি হতাশ হন, সেই হতাশাও দূর হয় ভারত ‘এ’ দলের হয়ে যখন তিনি ২৪৮ বলে ২০৪ রানের ইনিংস খেলেন, বিশেষ করে ১৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপদে ছিল। সেই সফর শেষে দেশে ফিরে তিনি তো ভারতীয় ‘এ’ দলের অধিনায়কত্বই পেয়ে যন সাউথ আফ্রিকা সিরিজে। আর এরপর টেস্ট দলে ডাকও পান, যদিও অভিষেকটা হয়নি।
শুভমন গিলের আরেকটা শক্ত জায়গা আপনাদের বলা হয়নি- গেম সেন্স! তিনি ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝতে পারেন খুব দ্রুত। কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ থাকাকালীন ব্রেন্ডন ম্যাকক্যালামের সাথে কাজ করেছিলেন শুভমন, এই উপলব্ধি ম্যাককালামেরই।
গিলকে নিয়ে এ লেখা শেষ করব অ্যালান বোর্ডারের কথা দিয়েই। অ্যালান বোর্ডার গিলকে নিয়ে বলেছেন, ‘আমি অভিভূত। ওর টেকনিকে বিশেষ কিছু আছে এটা সত্যিই বলতে হবে।’
এবার গিলের এসব প্রমাণ করার পালা!