বহুদিন বাদে হোম অব ক্রিকেট কানায় কানায় পূর্ণ। চৈত্র্য এলো বলে। রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করে দুপুরের ম্যাচ দেখতে হাজির সবাই। এমন চিত্রের অবতারণা হল বহুদিন বাদে। একটা বিশ্বাসের সঞ্চার বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ঘটিয়েছে। সেটার সূত্রপাত অবশ্য চট্টগ্রামে। বন্দর নগরীর সমুদ্র থেকে একটা সুবাতাস ছড়িয়ে গেছে ব্যস্ত নগরী ঢাকাতে।
সেই সুবাতাসের সম্পূর্ণটাই যেন বদলে দেয় বাংলাদেশ দলকে। বদলে যাওয়া সে দলটি এবার জিতে নিয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই তো সেদিন পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা দ্বিতীয় বারের মত দখল করে ফেলে ইংল্যান্ড। সে দলটিকে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। রীতিমত অভাবনীয়।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ বেশ দূর্বল একটি দল। সেই দলটা হঠাৎ করেই বদলে গেল। কেমন করে হল, সেটা একটা বিস্ময়! সে বিস্ময়ের শুরুটা সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। বিশাল এক লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ইংল্যান্ড দূর্বার গতিতে। সেই ইংল্যান্ডকে শেষ মুহূর্তে চেপে ধরে হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদরা।
সে ম্যাচটায় ব্যাটারদের যেন ভিন্ন এক রুপের দেখা পায় সবাই। প্রতিটা ব্যাটারই নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। মোদ্দাকথা সৎসাহস দেখিয়েছে প্রতিটা ব্যাটার। সেটার ফলাফলও মিলেছে। দ্বিতীয় বার ইংলিশদের মুখোমুখি হয়েই জয় তুলে নেয় টাইগাররা। এর আগে কেবল একবারই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সে ম্যাচ জয়ই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেন ভীষণভাবে। আর বাড়তি অনুপ্রেরণা মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এই মাঠেই তো কতশত রুপকথার গল্প লেখা হয়েছিল। ঠিক আরও একটি রুপকথা যুক্ত হয়েছে হোম অব ক্রিকেটের ইতিহাসে। প্রথম বারের মত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
জিতলেই সিরিজ নিশ্চিত। বেশিকিছু চিন্তা করতেও চায়নি বাংলাদেশ। সেটা করাও হয়ত বোকামি হত। পরিকল্পনার পুরোটা জুড়েই জয় ছাড়া যেন কিছুই ছিল না। টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে শুরুতে একটা আঘাত দেওয়া গেলেও ইংল্যান্ড সে আঘাত সয়ে নেয়। নিজেদের আপন গতিতেই এগিয়ে যেতে শুরু করে ইংলিশ ব্যাটাররা।
তবে তখনও বাংলাদেশের বোলারদের খানিকটা ভেল্কি দেখানো বাকি। আর সে ভেল্কিতেই তাসের ঘর ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ আর মারকুটে ব্যাটিং লাইনআপ। বাইশ গজটা যেন এক ফালি অগ্নিকুণ্ড। পা দেওয়া মাত্রই ভস্ম হয়েছেন ইংল্যান্ডের প্রতিটা ব্যাটার। শেষ অবধি খুব বড় লক্ষ্য গড়তে পারেনি জস বাটলারের দল।
লক্ষ্য ছোট হলেও, স্নায়ুচাপ বাড়বে না এমন উদাহরণ মিরপুরে অন্তত নেই। অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা প্রতিনিয়তই স্নায়ুচাপের সাথে লড়াই করেন। প্রতিদিন খেলা না দেখার প্রতিজ্ঞা করেও আবার ঠিকই টিভি সেটের সামনে বসে পড়েন, কিংবা স্টেডিয়ামে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। তাইতো আরও একবার স্নায়ুচাপের মধ্যে দিয়ে যাওয়াতে অন্তত হৃদযন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়নি।
বেশ অল্পের উপর দিয়ে চাপটা চলে গেছে হৃদয় ছুঁয়ে। তবে হৃদয় খানিকটা স্বস্তি খুঁজে পায় জয়ের হিমেল হাওয়ায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোন ফরম্যাটে সিরিজ জয়। প্রথম যেকোন কিছুই তো একটা আলাদা উত্তেজনার জন্ম দেয়। ক্রিস জর্ডানকে এক্সট্রা কাভার অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সে উত্তেজনায় বুনো উল্লাস করেন তাসকিন।
কি একটা অদ্ভুত সময়! ধুঁকতে থাকা ফরম্যাটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানোটা নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়। টানা দুই ম্যাচ জয়ও নিশ্চয়ই কোন ফ্লুক নয়। বহুকাল মনে রাখবার মত এক স্মৃতি। পালা বদলের স্মৃতিটা নিশ্চয়ই মনে একটা দাগ কেটে যায়। বাংলাদেশের এই দলটা তেমনই কিছু করুক।