রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচদের একজন কার্লো আনচেলত্তি। তিনি ক্লাবটির হয়ে দুইবার জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা। শেষ যেবার মাদ্রিদ কোপা দেল-রে যেতে, সেবারও কার্লোর হাত ধরেই শিরোপা এসেছিল বার্নাব্যুতে। ২০১৩-১৪ মৌসুমে শেষবার ঘরোয়া এই টূর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর যে রিয়ালের সাফল্যের ধারা থমকে গিয়েছিল বিষয়টি তেমন নয়। তবে নির্দিষ্ট এই টূর্নামেন্টের শিরোপা আর জেতা হয়নি।
মাঝখানের বছরগুলোতে বদলে গেছে বহুকিছু। বেশ কিছু শিরোপা এসে ধরাও দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের অর্জনের ক্যাবিনেটে। খোদ কার্লো আনচেলত্তি ফেরার পর আরও একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে স্প্যানিশ পরাশক্তি দলটি। তবে এতসব অর্জনের পরও বেশ বিপাকে রয়েছেন দলটির ইতালিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তি। কেননা সাম্প্রতিক সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছে না লস ব্ল্যাঙ্কোসদের।
জাদুকরি কিছু না ঘটলে লিগ টাইটেল ইতোমধ্যেই হাতছাড়া হয়ে গেছে মাদ্রিদের। এখন কেবল সুযোগ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার সাথে কোপা দেল রে জয়। তবে সে পথটাও বেশ কঠিন। আর সে কঠিন পথটা বেশ বুঝে-শুনে ফেলতে হবে রিয়াল মাদ্রিদের। বিশেষ করে কোচ কার্লো আনচেলত্তির থাকতে হবে অতিরিক্ত সতর্ক। কেননা প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর চাকরিচ্যুত হওয়ার। কেননা রিয়াল মাদ্রিদের বোর্ড খুব একটা সন্তুষ্ট নন ইতালিয়ান এই মাস্টার মাইন্ডের উপর।
হবার কথাও নয়। একটা পর্যায়ে লিগে ভাল অবস্থানে থাকলেও সে পরিস্থিতি পালটে গেছে। চিরপ্রতিদ্বন্দীদের কাছে হারতে হচ্ছে লিগ শিরোপা। ব্যবধানটা বেশ বড়। বার্সেলোনা টানা ভুল বা খারাপ না খেললে এই পরিস্থিতিতে লিগ জেতা প্রায় অসম্ভব। তবে এদফা মেজর কোন শিরোপা এনে দিতে না পারলে চাকরি হারাবেন কার্লো সেটি প্রায় সুনিশ্চিত। যদিও সম্প্রতি লা-লিগার এক ম্যাচ, শুরুতে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
৩-১ গোল ব্যবধানে ম্যাচটি জিতে নেয় লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। এই যে অভাবনীয় সব কামব্যাক, এসব বিগত মৌসুমে প্রায় প্রতিটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে করে দেখিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছিলেন কার্লো আনচেলত্তি। তবে তেমনটা এবার খুব একটা দেখা যায়নি। যদিও এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাউন্ড অব-১৬ এ লিভারপুলের বিপক্ষে দারুণ একটি ম্যাচ জিতেছে আনচেলত্তির দল। কিন্তু সে সব কিছুই অমূলক হয়ে রইবে। কেননা রিয়াল মাদ্রিদ বোর্ড চায় সাফল্য, তাদের চাহিদা শিরোপা।
লিভারপুলের সাথে ঘরের মাঠে ম্যাচটা খানিকটা সহজই হবার কথা। কেননা তিন গোলের ব্যবধান নিয়ে মাঠে নামবে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। লিভারপুলের সাথে এই ম্যাচটি নিশ্চয়ই হারতে চাইবেন না কার্লো। অন্যদিকে কোপা দেল-রে এর ম্যাচটি বার্সেলোনার সাথে। ঠিক এখানেই যেন সকল বিপত্তি। শেষ চারটি এল ক্ল্যাসিকো হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত বার্সেলোনা দল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ইউরোপা লিগ থেকেও বাদ পড়েছে কাতালান ক্লাবটি।
কোপা দেল-রে এর সেমিফাইনালে ইতোমধ্যে ১-০ গোল ব্যবধানে প্রথম লেগ হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সেটাও আবার ঘরের মাঠে। ক্যাম্প ন্যু-তে নির্দ্বিধায় ম্যাচের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসাটা ভীষণ কঠিন হবে কোচ কার্লো আনচেলত্তি ও রিয়াল মাদ্রিদের জন্যে। যদি এই দুইটি বড় ম্যাচের ফলাফল মাদ্রিদের বিপক্ষে যায়, তবে কপাল পুড়তে পারে কার্লো আনচেলত্তির। আগামী গ্রীষ্মকালীন দলবদলে তাকে দল ছাড়তে বাধ্য করতে পারে ক্লাবটি।
তাছাড়া আনচেলত্তির সাথে সম্পর্কের অবনতিও হয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষের। বর্তমান দলটিতে বেশকিছু অপ্রতুলতা রয়েছে। সেগুলো পূরণ করতে খেলোয়াড় কেনার প্রয়োজন ছিল। যদিও ক্লাব সেটিতে সুদৃষ্টি দেয়নি। মৌসুম শেষে এসব বিষয়ে বনিবনা না হলে কার্লো নিজেই হয়ত ক্লাব ছেড়ে দিতে পারেন। সুতরাং সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে মৌসুম শেষে কার্লো আনচেলত্তির রিয়াল মাদ্রিদ ত্যাগ করতে পারেন।