ইউরোপের ফুটবলে দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখিয়েছেন বছরের পর বছর। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ কিংবা গোলবার সামলানো অতন্দ্র প্রহরী- সব খানেই ত্রাস ছড়িয়েছেন নিজের আগ্রাসনে, আধিপত্যে।
তবে শেষ দিকে এসে সময়টা যে আর তাঁর হয়ে কথা বলছিল না। নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের উত্তরণ ঘটিয়েছিলেন যে ক্লাব দিয়ে, সে ক্লাবের সাথেও শেষটা হল বৈরিতা দিয়ে। হয়তো ইউরোপের ফুটবল যাত্রায় সেই বৈরিতাতেই শেষ বলতে চেয়েছিলেন।
নিজের দাপুটে স্বভাবটা টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অচেনা সব জায়গায়। এ জন্য ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, বার্নাব্যু, তুরিনের ডেরা হয়ে নিজেকে নিয়ে গেলেন এশিয়ার প্রান্তে। তর্ক-যোগ্য সাপেক্ষে সর্বকালের সেরা নাম্বার সেভেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পাড়ি জমালেন সৌদি আরবে।
সৌদি ক্লাব আল নাসেরও বেশ ঘটা করেই জীবন্ত এ কিংবদন্তিকে বরণ করে নিল। অবশ্য তার জন্য তাঁদের খরচ করতে হল ২০০ মিলিয়ন ইউরো। টাকার হিসেবে অঙ্কটা অনেক বড়। তবে বড় অঙ্কে খেলোয়াড় ভেড়ানো মানেই সেই খেলোয়াড়ের প্রায় অসম এক চাপ। অনুমিতভাবেই রোনালদোও সেই চাপটা বুঝতে পারলেন।
তবে চাপ জয় করা যে রোনালদোর বহুদিনের অভ্যাস। ইউরোপ জয় করেছেন যিনি, তাঁর কাছে এ আর এমন কী! আল নাসেরের হয়ে ঠিক মাঠ মাতালেন সিআরসেভেন। এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলেছেন, গোলও পেয়েছেন ৮ টি। এর মধ্যে আবার রয়েছে টানা দুটি হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত রোনালদো। তবে দল কি ঠিক দুর্দান্ত অবস্থায় রয়েছে?
এখানেই আপাতত কিছুটা পিছিয়ে আল নাসের। শেষ ম্যাচে আল ইতিহাদের কাছে হেরে সৌদি আরব প্রো লিগের শীর্ষস্থান হারিয়েছে রোনালদোর দল। তবে শীর্ষে ফেরার পথটা তো এখনই বন্ধ হচ্ছে না। তাই আপাতত খুব বেশি চিন্তায় ডুবে থাকার কারণ নেই। রোনালদো ছন্দে রয়েছেন, সেই ছন্দটা বাকিটা পথে অব্যাহত থাকলেই হচ্ছে।
তবে আল নাসের রোনালদোকে দলে ভিড়িয়েছিল, এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার উদ্দেশ্যে। কারণ এখনও এই শিরোপা অধরা সৌদির এ ক্লাবের কাছে। রোনালদোর হাত ধরেই কি আল নাসেরের সেই না পাওয়া আক্ষেপ মিটবে? সেটার জন্য আপাতত অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু সময়।
রোনালদোর সৌদি যাত্রা কতটা সাফল্যমন্ডিত হবে, তা সময়ই বলে দিবে। তবে রোনালদোর সৌদিমুখী হওয়াতে সৌদি আরব যে বিশ্ব ফুটবলে একটা আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি, তা বলাই বাহুল্য।
এমন কি রোনালদোর পথ ধরে এখন এক সময়কার ইউরোপের অনেক তারকা ফুটবলারই সৌদি আরবের ফুটবলে পা রাখার চেষ্টা আছেন। এক রোনালদো নামক জাদুতেই যেন পাল্টে গিয়েছে সৌদি আরব ফুটবলের হালচাল। রোনালদোর প্রভাবটা যেন ফুটে ওঠে সেখানেই।